ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৭ জুলাই ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

রমজান মাসের প্রথমার্ধ শেষ হওয়া মানেই রাজধানীতে ঈদ উদযাপনের জন্য আগাম আয়োজনের নানা তোড়জোড় শুরু হয়ে যাওয়া। আয়োজন কি আর একটা? পয়লা নম্বরেই আছে নতুন জামাকাপড় আর জুতো কেনা। শুধু জামা-জুতোই কি? গহনা-অলংকারও এর ভেতর পড়ে। অনেকে বলতে পারেন প্রথম রোজা থেকেই ঢাকায় বসে যায় ঈদের বাজার। নামী-দামী শপিং মলগুলো আরও ঝলমলে হয়ে ওঠে। সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এক মার্কেটের সঙ্গে অন্য মার্কেটের একটা অলিখিত প্রতিযোগিতাও চলে। কোন মার্কেট কত বেশি পরিমাণে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা। ব্যবসায়ীরা ভালো করেই বেচাবিক্রির হিসাব জানেন বছরের এগারো মাস এক দিকে আর এই একটি মাস আরেক দিকে। রমজান তাদের জন্য বাড়তি রহমতের মাস। তাই এ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা আর উত্তেজনা থাকে অনেক। তবে এটাও সত্যি যে এখন এক এলাকার মানুষ আরেক এলাকার মার্কেটে গিয়ে সাধারণত ঈদের শপিং করেন না। নিজেদের এলাকার মধ্যেই কেনাকাটার কাজটা সারেন। রমজানে ঢাকার যানজট পরিস্থিতি সহনশীলতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যায় বলেই বাধ্য হয়ে নিজের এলাকা কিংবা নিকট দূরত্বের ঈদ মার্কেটের বিষয়টি তারা বিবেচনায় রাখেন। এটা অবশ্য সাধারণ হিসাব। ব্যতিক্রম তো আছেই। ধরা যাক উত্তরায় একাধিক বিশাল শপিং কমপ্লেক্স থাকতেও যারা যাতায়াতের হিসাবে দু-তিন ঘণ্টা দূরত্বের নিউমার্কেট কিংবা পান্থপথের সুবিখ্যাত বিপণি কেন্দ্র বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে আসেন, তাদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। মাসব্যাপী বইমেলায় যেমন প্রথম দিনই সব নতুন বই চলে আসে না, ক্রেতারাও বই কেনার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন না- অনেকটা সেরকমই বলা যায় ঈদ মার্কেটের বিষয়টা। আস্তে আস্তে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক মার্কেটে আসতে শুরু করে। ক্রেতারাও দেখে শুনে কিনতে শুরু করতে রমজানের প্রথম কি দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যায়। সে বিবেচনায় এখন রাজধানীর ঈদের বাজারের চূড়ান্ত মোক্ষম সময় যাচ্ছে। বড় বড় প্রতিটি মার্কেটেই ভিড় হচ্ছে প্রতিদিনই। বিশেষ করে ইফতারির পর মধ্যরাত পর্যন্ত এসব মার্কেটে ভিড় যেন উপচে পড়ে। বসুন্ধরা সিটির ভেতরে উপরের তলাগুলোয় ওঠার জন্য যন্ত্রচালিত সিঁড়ির সামনে উপচে পড়া ভিড়ের একটি ছবি দেখলাম। এ তো এলাহি কা-! এত মানুষ! এই ভিড়ের ভেতর দেখে শুনে পছন্দের জিনিসটি কিভাবে কেনা সম্ভব? দরদামের কথা বাদই দিলাম। কারণ বর্তমানে বহু জায়গাতেই সে সুযোগ নেই। সব ফিক্সড প্রাইস মানে এক দর। দেখুন, দ্রুত পছন্দ করুন, তারপর দাম মিটিয়ে ঘরে নিয়ে আসুন। এই হচ্ছে অবস্থা। রমজানে সোনার হরিণ রমজান মাসের মাঝামাঝি ভিড় কি কেবল শপিং মল আর মার্কেটেই থাকে? আরেকটা জায়গায় থাকে বিরাট ভিড়। ভুক্তভোগী পাঠক এরই মধ্যে সঠিকভাবে বিষয়টা অনুমান করতে পেরেছেন। জ্বি, সেটা হলো ঈদে ঘরে ফেরার জন্য বাস ও লঞ্চের কাউন্টারের সামনে ভিড়। বিশেষ করে বাসের টিকেটের জন্য বিক্রির প্রথম দিন লোকে সেহরি খেয়েই চলে যান বিভিন্ন বাস সার্ভিসের কাউন্টারে। লম্বা লাইন দিতে হয়। এবার গাবতলী-কল্যাণপুরে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার খোলার আগেই ভোর রাতে লাইনে দাঁড়িয়ে যান টিকেটপ্রার্থীরা। সবার ভাগ্যে তারপরও শিকে ছেড়ে না। বিফল হয়ে টিকেট ছাড়াই বাসায় ফিরতে হয়। আর যারা টিকেট কিনতে সমর্থ হন, তাদের ঈদ শুরু হয়ে যায় হাতে টিকেট পাওয়ার পরপরই। গাবতলী-কল্যাণপুরে বাস কাউন্টারের সামনে বিকেল পর্যন্ত ছিল দীর্ঘ লাইন। ঈদের আগে এই অগ্রিম টিকেট বিক্রির বেলায় এবারও চলেছে অনিয়ম। ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা আদায় করা হয়েছে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে চাইলে বাস কর্তৃপক্ষ রীতিমতো অস্বীকার করছে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের। রবিবার জনকণ্ঠের শেষ পাতায় চার কলামে এ সংক্রান্ত একটি আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে। গাবতলীর এক বাস কাউন্টারে অল্পবয়সী এক তরুণের দিকে আঙুল উঁচিয়ে আছেন দু’জন, আরেকজন তরুণটির পাশে দাঁড়িয়ে রাগতস্বরে কিছু বলছেন বলে মনে হয়। ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছেÑ গাবতলী বাস কাউন্টারে অগ্রিম টিকেটের অতিরিক্ত দামের প্রতিবাদ করায় পরিবহন শ্রমিক পরিচয়দানকারী একদল লোকের (গোলচিহ্নিত) তোপের মুখে কলেজছাত্র। মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে দেশের বাড়ি যেতে চাইবেন ঈদের আগেই, পরে নয়। সেজন্য ছুটির দিনগুলোও থাকে নির্ধারিত। তাই ঈদের দু-তিন দিন আগে থেকে চানরাত পর্যন্ত টিকেট পেতে চান সবাই। চাঁদ দেখা যাওয়ার আগে সুনির্দিষ্টভাবে ঈদ কবে হবে সেটা বলা যায় না। তবে মানুষ সাধারণত ২৯ রোজার পরদিনই ঈদ হওয়ার সম্ভাবনার কথাটি মাথায় রেখে সে হিসেবেই টিকেট কিনতে চান। বাস্তবতা হলো বহু মানুষ তার চাওয়া মতো টিকেট পান না। ফলে অনেকেরই ঈদে ঘরে ফেরা হয় না। অনেকে আবার ঈদের পরদিন রওয়ানা দেন। অবশ্য এখন রাজধানীবাসী তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আগেভাগেই একটা পরিকল্পনার ছক আঁকেন। অনেকে ঈদের আগে বা পরে কিংবা বছরের অন্য কোন সুবিধাজনক সময়ে দেশের বাড়ি যান। যদিও সাধারণ বিচারে রোজার ঈদেই ঢাকার মানুষ বেশি যেতে চান দেশে। দেশের বাড়িতে অবস্থানরত বাবা-মায়ের কাছে তাদের একাধিক সন্তানদের সবার একটি ইচ্ছা থাকে এই ঈদেই সবাই মিলিত হওয়ার। ঢাকায় এখন এমন বহু পরিবার আছেন যারা বাবা-মাকেই ঢাকায় নিয়ে আসেন ঈদের সময়। ফলে ঢাকায় অবস্থানকারী সন্তান-সন্ততিরা তাদের সঙ্গে ঈদ করতে পারেন। আবার ঈদের ভিড়ের ভেতর ঢাকা ছাড়ার বাড়তি বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয় না। আসা যাক লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি প্রসঙ্গে। লঞ্চের কেবিনেরই কেবল অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়। শনিবারের আগেই সব কটি লঞ্চের প্রতিটি কেবিনের টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চের মৃত্যুঝুঁকিময় যাত্রা সব সময়েই স্বজনদের উদ্বিগ্ন করে রাখে। কখনও কখনও লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে ঈদের আনন্দকে আগাগোড়া বিষণœ করে দেয়ার মতো পরিবেশও সৃষ্টি হয়ে থাকে। এবার কর্তৃপক্ষ সত্যি সত্যি সতর্ক বলেই মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী বহন কড়াকড়িভাবে প্রতিহত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া তো কিছু করার নেই। তারপরও কথা থাকে। সরকারের কিছু কর্তব্য তো থাকেই, তবে শুধু সরকারের ওপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়াও সমীচীন নয়। সামাজিক শক্তি কোথায়? বলছিলাম বাড়ি ফেরার একখানি টিকেট সংগ্রহে বিড়ম্বনার কথা। আবার ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার বিষয়টিও রয়েছে। বুদ্ধিমানরা তাই আগে ভাগেই আত্মীয়দের মাধ্যমে ফেরার টিকেট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নেন। কিন্তু আমার ভাবনা তাদের নিয়ে যারা টিকেট না পেয়ে ভেঙে ভেঙে লোকাল বাসে চেপে, হেঁটে রিকশায় ভ্যানে করে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছান ঈদের আগে-আগে। আবার অনেকের বাড়ি যাওয়ার সাধ পূর্ণ হয় না। কাগজে এমন ছবিও ছাপা হয়েছে গবাদিপশু বহনকারী ট্রাকে চেপে মানুষ ঈদে বাড়ি যাচ্ছে। কী দুর্ভাগ্য! শুধু যানবাহনের অভাবে আজকের এই যুগে মানুষ তিন শ’ চারশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবেন না! এজন্যে কী বিকল্প ব্যবস্থা গৃহীত হতে পারে? সরকারকেই এর সুরাহা করতে হবেÑ এমন কথা খুব সহজেই বলে ফেলা সম্ভব। ঈদ উপলক্ষেও কি সব দায় সরকারের ওপরে চাপিয়ে দেব? আমরাও কিছু করতে পারি মানবতার স্বার্থে। আমাদের বিত্তবানদের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই? বিল গেটস, ডেভিড রকফেলারদের মতো বিশ্বের ৬ সেরা ধনীর অর্ধেক বিত্তই এখন দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। দানশীলতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা সামাজিক সংগঠনগুলো কেন এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবে না? এমন তো হতে পারে মহানগর আওয়ামী লীগ বা যুবদল ঘোষণা দিল রাজধানীর এক হাজার মানুষের বাড়ি ফেরার জন্য যানবাহনের দায়িত্ব তারা নেবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বা এ ধরনের কোন জোট বা সাংস্কৃতিক সংগঠন ঘোষণা দিল দু’পাঁচ শ’ করে লোকের ঈদযাত্রার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা তারা করবে। ভাবতেই পারি, এক শ’ গাড়ির মালিক মাত্র দু’দিনের জন্য একখানা গাড়ি ড্রাইভারসহ দিয়ে দিল কোন ওয়ার্ড কমিশনারকে। তিনি তার এলাকার টিকেটবঞ্চিত ঘরমুখো মানুষের একটা তালিকা করলেন। বিনে পয়সায় নয়, তারা ন্যায্য ভাড়াই নিক, ক্ষতি কী। তবু ঈদে দেশের বাড়িতে যাওয়া নিশ্চিত হোক। ইফতার পার্টির পক্ষে বিপক্ষে রমজান মাসে ইফতার পার্টি দেয়ার সংস্কৃতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একদল আছেন এটা অপছন্দ করেন। তারা নিজ গৃহকোণে ইফতারি খেতে পছন্দ করেন। রমজানে রোজাদার শুধু নয়, যারা রোজা রাখেন না বা রাখতে পারেন না তারাও ইফতারির টেবিলে যোগ দেন। ইফতার পার্টির বিশেষ ইতিবাচক দিক অস্বীকার করা যাবে না। সামাজিক অনুষ্ঠান অর্থাৎ মানুষে মানুষে দেখাসাক্ষাত মত আদান-প্রদানের কেন্দ্র হয়ে ওঠে ইফতার পার্টি। অনেক ইফতার পার্টি শেষ হয় নৈশভোজের মাধ্যমে। ইফতার পার্টিতে ইফতারি প্রধান উপলক্ষ হলেও তাতে অন্যান্য বিষয়আশয়ও গুরুত্ব পায়। রমজান মাসে সভা-সেমিনার বা কোন সামাজিক, সাহিত্য-সংস্কৃতি বা পারিবারিক আয়োজন করতে গেলে ইফতারির প্রসঙ্গ সঙ্গত কারণেই সামনে চলে আসে। সাধারণত অফিস আওয়ারের শেষেই এসব সভা বা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ইফতারিপর্বকে কোনক্রমেই বাদ দেয়া চলে না। যেমন কবি আবুল হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি হলো বাংলা একাডেমিতে। অনুষ্ঠানটি শুরু করার কথা ছিল বিকেল চারটায়। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার, শেষ কর্মদিবস। দুপুরের পর বৃহস্পতিবারের ঢাকা অস্থির ও চঞ্চল হয়ে ওঠে। সবার ভেতর রুদ্ধশ্বাসে ছোটার তাড়া লক্ষ্য করা যায়। তার ওপর গত বৃহস্পতিবার ছিল প্রচ- রোদ। এমন কড়া রোদে চারটায় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়া কঠিন। যা হোক, অনুষ্ঠান শুরু হতে বেশ বিলম্ব। তারপরও সবাই মিলে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানেন এমনভাবে যাতে ইফতারির আগে খানিকটা সময় পাওয়া যায়। আয়োজকরা ইফতারের আয়োজন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু কোথায় বসে মানুষ ইফতারি করবেন? মিলনায়তনে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি ছিল যাতে কেউ সেখানে ইফতারির প্যাকেট খুলতে না পারেন। শেষ পর্যন্ত সামনের খোলা প্রাঙ্গণে চলে যান রোজাদাররা। যা হোক, যেটা বলার চেষ্টা করছি তা হলো ইফতারির সময়ে ইফতারি করতে হবে। তাই বলে অনুষ্ঠানের আয়োজন এক মাস স্থগিত রাখা যায় না। তাছাড়া ইফতারি উপলক্ষে সমমনা বা বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষ যদি মিলিত হন তাহলে মন্দ কি! আমরা যতই সমালোচনা করি না কেন রমজানে ইফতার পার্টির সংস্কৃতি বেশ চালু হয়ে গেছে। খাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি ও প্রদর্শনপ্রবণতা এড়ানো গেলে এর ভেতর ইতিবাচক দিক মিলবে বেশ কিছু। তবে ইফতারিতে রাজনৈতিক/ ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি অরুচিকর- কোনো সন্দেহ নেই। ঈদের আরেক আনন্দ বিচিত্র ঈদ সংখ্যা রমজানের মাঝামাঝি একে একে বেরুতে থাকে ঈদসংখ্যা, সর্ববৃহৎ বার্ষিক সাহিত্য সাময়িকী। অবশ্য ঈদসংখ্যায় এখন সাহিত্য ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ও থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। তবু ঈদসংখ্যায় সাহিত্যই প্রধান, আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় পাঠকের কাছে ঈদসংখ্যার প্রধান আকর্ষণ উপন্যাস। দেড় শ’ থেকে দু শ’ টাকা দাম থাকে একেকটি ঈদসংখ্যার। এই টাকায় পাঁচ থেকে দশটি উপন্যাস পাওয়া যায়। এটাই নগদ লাভ পাঠকের। তবে একথার পাশাপাশি আরেকটা সত্যও উচ্চারণ করতে হবে। সেটি হলো ‘একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস’ টাইটেলে লেখা থাকলেও আসলে এসব উপন্যাস সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। সেটা সম্ভবও নয়। বইয়ের হিসাবে তিন শ’ পাতার একটি উপন্যাস ছাপাতে ম্যাগাজিনের প্রয়োজন হবে এক শ’ থেকে সোয়া শ’ পৃষ্ঠা। কিংবা ছোট উপন্যাস হলে তার অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। পাতা গুণে দেখলে দেখা যাবে ঈদসংখ্যায় সাধারণত একেকটি উপন্যাস হয় গড়ে কুড়ি পাতার মধ্যে। আসলে এটি উপন্যাসের শর্ট ভার্সন বলা যায়। পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসটি বর্ধিত কলেবরে বেরোয় পরের বছর ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। যা হোক, পাঠক টি২০ ম্যাচের মতো শর্টটাইম আনন্দ পান, উত্তেজনায় থাকেন ঈদসংখ্যার এসব উপন্যাস নিয়ে। এই চল এখন প্রতিষ্ঠিতই হয়ে গেছে। যা হোক, এবছরও ঢাকার বাজারে প্রথম যে ঈদসংখ্যাটি প্রকাশিত হয় সেটি জনকণ্ঠের ঈদসংখ্যা। আমাদের দেশে প্রথম দিকে সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোই ঈদসংখ্যা প্রকাশ শুরু করে। পরে এতে যুক্ত হয় দৈনিক সংবাদপত্র। বর্তমানে সংবাদপত্রের ঈদসংখ্যাই প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। এখনও মধ্যবিত্ত পড়ুয়া শ্রেণীর ভেতর ঈদসংখ্যা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আছে। ঈদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ঈদসংখ্যা। ঈদের নতুন পোশাাকের পাশাপািশ বহুজন অন্তত একখানা ঈদসংখ্যা কিনে থাকেন। সে বিচারে ফেব্রুয়ারির বইমেলার পর বাঙালী পাঠক সমাজে রমজান মাসই আরেকটি নতুন সাহিত্যপাঠের মৌসুম হয়ে ওঠে। ০৭ জুলাই ২০১৫ [email protected]
×