ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফেলানী হত্যার আপীলের রায়

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৬ জুলাই ২০১৫

ফেলানী হত্যার আপীলের রায়

কিশোরী ফেলানী হত্যা মামলায় আবারও নির্দোষ সাব্যস্ত হলেন অভিযুক্ত বিএসএফ প্রহরী অমিয় ঘোষ। বৃহস্পতিবার কোর্ট মার্শালের সমতুল্য বিএসএফের আদালত এই রায় দিয়েছে। বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট বা জিএসএফসি প্রথমে যে রায় দিয়েছিল, পুনর্বিবেচনার পরেও সেই রায় বহাল রাখে তারা। অর্থাৎ আগের রায়টি বহাল রেখেছে আদালত। এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক তাহলে কি সেদিন ফেলানী নামে কোন তরুণী নিহত হননি বা তাকে হত্যা করা হয়নি? হত্যা করা হলে সেই হত্যাকারী কে? যেহেতু হত্যাকান্ডটি ঘটেছে তাই হত্যাকারী যেই হোক তার বিচার হওয়া জরুরী। আদালতের ব্যাখ্যা ফেলানী অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিল। আরও বলেছে, কর্তব্যরত অবস্থায় এবং যে পরিস্থিতিতে অমিয় ঘোষ গুলি চালিয়েছে তাতে হত্যা প্রমাণ করা সম্ভব নয় । তবে এটাই চূড়ান্ত রায় নয়, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে ফেলানীর পরিবারের কাছে এই রায় চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ-এর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয় বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুন। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বরও অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ আদালত। এ হত্যাকাণ্ডে সে সময় দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনা প্রায়শই ঘটে। প্রতিটি ঘটনার পর বিএসএফ গতানুগতিক একটা বিবৃতি দেয়। সেখানে বলা হয় অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার কারণেই বিএসএফ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। কোন কোন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করা হয়। পরে দেখা যায় সীমান্তে হত্যা বন্ধে উর্ধতন পর্যায়েও পতাকা বৈঠকসহ নানা উপায়-কৌশল খোঁজা হয়। আশ্বাস দেয়া হয় ভবিষ্যতে এমনটি আর ঘটবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনও সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। ফেলানী হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও আলোচিত ঘটনা। তাই পুনর্বিবেচনার রায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি ফের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় সবাইকে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করেছে। বলা চলে ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পায়নি। এটি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত রায় তার পরিবারের জন্য। এ রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে খোদ ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও। তারা বলেছে, এ রায় আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তারাও মনে করে ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পায়নি। ফেলানীর পরিবার অবশ্য এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন আইনীভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। দেখতে হবে আইনী আর কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়। যেহেতু রায়ের বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে ফেলানীর পরিবার এবং সেদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও ফেলানীর বাবাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা উচিত। ন্যায়বিচার পেতে দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো সহযোগিতা করবে এমন প্রত্যাশা সবার।
×