ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

পটুয়াখালীর ফোরকান ও বাগেরহাটের তিন রাজাকারের রায় শীঘ্র

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৫ জুলাই ২০১৫

পটুয়াখালীর ফোরকান ও বাগেরহাটের তিন রাজাকারের রায় শীঘ্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিক ও বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরামের মামলার রায় শীঘ্র ঘোষণা করা হবে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, ১৪ জুন পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিক আর ২৩ জুন বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২। অর্থাৎ যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে। এছাড়া তদন্ত সংস্থা কয়েকটি নতুন মামলার রিপোর্ট প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। মামলাগুলোর এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তদন্ত চলছে। কাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে এ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে তাদের নাম বলেনি তদন্ত সংস্থা। অন্যদিকে প্রসিকিউশন থেকে আসামিদের নাম বলা হয়নি। নাম প্রকাশ করলে তারা পালিয়ে যেতে পারে। প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা আশা করছি বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে শীঘ্রই রায় ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে একটি মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম নায়ক মোঃ আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন। আর এবার একই মামলায় বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। সে দিক দিয়ে এ মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে এক মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়নি। অন্যদিকে প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদানের ক্ষেত্রে কোন দেরি করছেন না। সেদিক বিবেচনা রেখে আমরা আশা করছি সহসাই ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। পটুয়াখালীর রাজকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ২৮ মে থেকে শুরু করে ১ জুন যুক্তিতর্ক শেষ করেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ আসামি পক্ষ ২ জুন থেকে শুরু করে তিন কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। আসামি ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন রায়সহ মোট ১৪ জন সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেছেন। ২৬ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন চারজন সাফাই সাক্ষী। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ। ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। বিপক্ষে শুনানি করেন ফোরকান মল্লিকের আইনজীবী আব্দুস সালাম খান। অন্যদিকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরামের মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২৩ জুন রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামরার রায ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য রয়েছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এই মামলায় সিনিয়র প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী প্রসিকিউশন পক্ষে আইনী বিষয়ের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ রয়েছে। এই সাত অভিযোগে গত বছরের ৫ নবেম্বর বিচার কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্ত ৩ জনই আটক আছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কচুয়ার শাঁখারিকাঠি বাজারে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোসহ ছয়টি সুনির্দিষ্ট অপরাধ ও ৮১৯ জনকে হত্যার অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে তার চাচাশ্বশুর মৃত মোসলেম পাইকের পরিত্যক্ত খুপড়ি ঘর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
×