ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরে ফেরা

টিকেট না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন অনেকেই

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৫ জুলাই ২০১৫

টিকেট না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন অনেকেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের মানুষের বাসের টিকেট সংগ্রহে হয়রানি চলছেই। দ্বিতীয় দিনেও টিকেট বিক্রিতে ভোগান্তি কমাতে পরিবর্তন আসেনি। মধ্যরাত থেকে দীর্ঘ লাইন। নারী-পুরুষের এক লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ। বাড়তি ভাড়া আদায়। টিকেট কালোবাজারী। দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কোন কিছু বদলায়নি। সবই ছিল পুরনো চিত্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন ছিল না। টিকেট সংগ্রহ করতে না পেরে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে অনেকের। আর ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষার যারা উত্তীর্ণ হতে হয়েছেন, তারা সবাই টিকেট হাতে গালভরা হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। দেখিয়েছেন বিজয় চিহ্ন। অনেক কাউন্টার থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই টিকেট শেষ হওয়ায় কথা জানানো হলে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্বিত-া হয়। আবার সোনার হরিণ টিকেটের খোঁজে কাউন্টার কাউন্টারে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নেয়া মানুষদের। ১৩ ও ১৭ জুলাইয়ের বেশকিছু টিকেট এখন অবিক্রীত। ঈদ আসন্ন। তাই উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থাকার ইচ্ছা সবারই। এরই অংশ হিসেবে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। বেসরকারী পরিবহন কোম্পানিগুলোও আগেভাগেই টিকেট দেয়া শুরু করেছে। উত্তর-দক্ষিণ জনপদের প্রায় ৬০টি রুটের টিকেট বিক্রি হচ্ছে দিনভর। নামী-দামী পরিবহন কোম্পানির টিকেটের চাহিদা বেশি। এসি কোচের বাড়তি চাপ তো আছেই। ১৫-১৬ জুলাইয়ের বাসের টিকেট নিয়ে রীতিমতো যেন কাড়াকাড়ি। তবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত; থাকা সাপেক্ষে টিকেট দেয়া হবে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নামী-দামী কোম্পানির বেশিরভাগ টিকেট বিক্রি শেষ। যদিও বলা হচ্ছে আগামীকাল পর্যন্ত টিকেট বিক্রির শেষ দিন। দ্বিতীয় দিনে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখের টিকেট না পাওয়া মানুষের সংখ্যাও নিহায়ত কম নয়। রমজান শেষে কর্মক্ষেত্রে ছুটি ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়া যায়, সে জন্যই টিকেট ক্রয়ে এত ব্যস্থতা। ঈদ উপলক্ষে রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় নৌপথের যাত্রী বেশি। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ নৌপথে ঈদ করতে বাড়ি যান। আগামী ১৪ জুলাই থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হতে পারে। নয় জুলাই সকাল থেকে বিক্রি হবে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট। ১০ জুলাই থেকে রাজধানী-নারায়ণগঞ্জসহ চারটি ডেপো থেকে একযোগে বিআরটিসি বাসের টিকেট বিক্রি হবে। শনিবার ছিল ছুটির দিন। নগরবাসীর মধ্যে ঈদের প্রস্তুতি ছিল সকাল থেকেই। অর্থাৎ উৎসবের কেনা কাটায় রাস্তায় ঢল নামে মানুষের। তবে রাজপথ থেকে অলিগলি ছিল অনেকটাই স্থবির। তীব্র যানজটে গাড়ি লড়ে না। শনিবারের রাস্তায় যেন রীতিমতো শনির দশা! বাসের টিকেট সংগ্রহে ভোর থেকে কাউন্টারের বাইরে টিকেট প্রত্যাশীদের লম্বা লাইন। কাউন্টারগুলোতে কমেনি টিকেট বিক্রি। বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, ১৪, ১৫, ১৬ জুলাইয়ের টিকেট বিক্রি শেষ। তবে ১৩ জুলাই সকালের এবং ১৭ জুলাই বিকেলের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলোতে অনেক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও কর্মজীবীরাও এসেছেন টিকেট সংগ্রহ করতে। খুলনা, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনাবাবগঞ্জ, পাবনা, নড়াইল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, যশোর, পিরোজপুর, ঝালকাঠিসহ বেশ কয়েকটি জেলার টিকেটের চাহিদা বেশি। হানিফ কাউন্টার থেকে দিনাজপুরের টিকেট নিতে আসা বকশী বাজারের নয়ন মিয়া বলেন, গতকাল এসে টিকেট পাইনি। তাই আজকের টিকেটের জন্য মধ্যরাতে এসে লাইনে দাঁড়াই। অনেক কষ্টের পর টিকেট পেয়েছি। শ্যামলী কাউন্টারে টিকেট নিতে আসা মান্নান জানান, অল্প সময়ের পরই কাউন্টার থেকে টিকেট শেষ হওয়ার কথা জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার মন্টু কুমার ঘোষ বলেন, টিকেট থাকা সাপেক্ষে সবাই পাবেন। আমরা সবাইকে টিকেট দিতে চাই। কেউ খালি হাতে বাড়ি ফিরুক তা চাই না। তিনি জানান, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় (নাটোর, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, নওগাঁ,) যাওয়ার জন্য একটি রুট ব্যবহার হয়। সড়কের বেশকিছু স্থানে খানাখন্দ থাকার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আর উত্তরবঙ্গের যাত্রীবেশী, বলে গাড়ির চাপও বেশি। তাই একটি ট্রিপ ঘুরে আসতে সময় বেশি লাগছে। এই সব দিক বিবেচনা করে আমরা গাড়ি বাড়াতে চাচ্ছি না। আমাদের কোম্পানিতে বাস আছে সাড়ে ৪শ’টি। তবে এবার ঈদের সময়ও ৪শ’ বাস রাস্তায় নামবে। এখন পর্যন্ত কোন রিজার্ভ বাস রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। টিকেট বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শনিবার ১৩ ও ১৭ জুলাই এর অগ্রিম টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। তবে ১৪, ১৫ ও ১৬ জুলাই এর সব টিকেটের বিক্রি শেষ। এদিকে হানিফ এন্টারপ্রাইজের জিএম মোঃ মোশাররেফ হুসাইন বলেন, হানিফ পরিবহনের পক্ষ বিভিন্ন রুটে প্রায় ৬শ’ বাস চলবে। যদি রাস্তায় যানজট কম থাকে তাহলে হয়ত ৫০ থেকে শ’টি অতিরিক্ত বাস নামবে। সড়কে যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চান্দুরা মোড়, মির্জাপুর রেলগেট থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রচ- যানজটে পড়তে হয়। আর এদিকে যমুনা সেতুর পরে নলকা ব্রিজের এপারে ওপারে মিলিয়ে ছয় কিলোমিটার রাস্তায় চালকদের অনেক কষ্ট হয়। এই রাস্তায় অনেক খানাখন্দ। অপরদিকে টাঙ্গাইল বাইপাস ও রেলগেটের দিকে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে।
×