ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশজ ভাবনা ঐতিহ্য সুরুচি ও আধুনিকতার সমন্বয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৫ জুলাই ২০১৫

দেশজ ভাবনা ঐতিহ্য সুরুচি ও আধুনিকতার সমন্বয়

মোরসালিন মিজান ॥ রমজানের অর্ধেকটা পার হয়ে গেলে রোজা আর থাকে না। থাকে না মানে, ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এখন সে সময়। পুরোদমে চলছে কেনাকাটা। রাজধানী ঢাকার প্রায় সব মার্কেট, শপিংমল লোকে লোকারণ্য। পছন্দের পোশাক খোঁজার কাজে প্রচুর সময় দিচ্ছেন শহুরে ফ্যাশনপ্রেমীরা। কত কত রং, ডিজাইন, চাকচিক্য এখন! তবে দেশীয় পোশাকের বিশেষ একটি আবেদন সব সময়ই ছিল। আছে। সেদিক থেকে দেখলে যথেষ্টই এগিয়ে আজিজ সুপার মার্কেট। হ্যাঁ, শাহবাগে অবস্থিত মার্কেটটি দেশীয় পোশাকের জন্য আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছে। নিজস্ব কৃষ্টি আর আর আধুনিকতার সমন্বয়ে তৈরি পোশাকের দামও সহনীয়। একটু যারা শিকড় আঁকড়ে থাকতে চান, দেশীয় ফ্যাশনের অগ্রযাত্রার খোঁজ রাখেন যারা, তারা এখানে আসছেন। এরই মাঝে তাই জমে উঠেছে কেনাকাটা। বহুতল ভবনের তিনতলা পর্যন্ত মার্কেট। পুরোটাই এখন পোশাকের। দুই শতাধিক দোকান। এসব দোকানে দেশীয় কাপড়, সুরুচি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। বিচিত্র ভাবনা থেকে পোশাক তৈরি করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। ঈদ যেহেতু, পাঞ্জাবির খুব কদর। মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, পাঞ্জাবিতে একরকম ঠাসা। লাল-সাদা নীল-হলুদ, ব্যতিক্রম, আড়শি, ঢাকঢোল, আবির্ভাব, নোঙর, বিসর্গ ইত্যাদি নামে যেমন বাঙালিয়ানা পোশাকেও। শোরুমগুলোতে নানা রঙ ও ডিজাইনের পাঞ্জাবি। কিছু কিছু পাঞ্জাবিতে ভারি কাজ। ব্লক। এমব্রয়ডারি। হাতের কাজও আছে। পরিমিতিবোধের কারণে বেশ লাগে। কেউ কেউ আবার একেবারে খুব সাধারণের মধ্যে থেকেই কিছু অসাধারণ করার চেষ্টা করেছেন। তেমন একটি ফ্যাশন হাউসের নাম বালুচর। ছোট্ট শোরুম। তবে সংগ্রহ এত বিপুল যে, দেখার জন্য হাতে সময় থাকা চাই। এখানে শুধু পাঞ্জাবি। সারা বছরই। ঈদে আরও আকর্ষণীয় রং এবং ডিজাইন নিয়ে হাজির হয়েছে। পাঞ্জাবিতে খুব কিছু করার থাকে না। এর পরও এখানে খুঁজে পাওয়া গেল ১২০টির মতো ডিজাইন। ঈদ যেহেতু, গর্জিয়াস দেখতে পাঞ্জাবির সংখ্যা বেশি। অনেকগুলো মিষ্টি রং বেছে নেয়া হয়েছে। সলিড কাপড়ের উপর দারুণ সব ডিজাইন প্রিন্ট। সিল্কের কাজ। চিকন কলার চিকন প্লেট। টেনে অনেকখানি নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাতেই পেয়েছে স্মার্ট লুক। পাঞ্জাবিগুলো লম্বায় খুব বেশি নয়। কমও নয়। সেমি লং। সেমি ফিটেড। গায়ে দিলে খুব ঝুলে থাকে না। আবার পায়ের মোজার মতো কামড়েও ধরে না। হাল ফ্যাশনের ছেলে ছোকরারা পরতে পারে। বড় এবং বুড়োদের বেলায় প্রযোজ্য। বালুচর’র প্রধান নির্বাহী শাহীন চৌধুরী বয়সে তরুণ। ফ্যাশন ভাবনাটাও সমকালীন বলে মনে হলো। তাঁর মতে, ভারি ডিজাইন এখন আর চলে না। হাল্কার মধ্যেই কাজ করতে হয়। তবে সময়টাকে বুঝতে হবে। তিনি জানান, সারা বছর শুধু পাঞ্জাবি করেন তারা। এবার ঈদে মোট ২০০ ডিজাইনের পাঞ্জাবি আসবে। বহুল পরিচিত ফ্যাশন হাউসগুলোর কোন কোনটির শোরুম আছে আজিকে। কেমন একটির নাম কে-ক্র্যাফট। নিচতলার শোরুমে কত ডিজাইনের পাঞ্জাবিÑ কে তা গুণে বের করবে! আজিজে মেয়েদের পোশাকেরও ভাল একটি সংগ্রহ। এ ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আছে। বহু ডিজাইনের থ্রিপিস দিয়ে দোকান সাজানো। আলাদাভাবে বিক্রি হচ্ছে টপস, সালোয়ার, ওড়না। অন্য সময় শাড়ি পরা না হলেও, ঈদে নারীদের শাড়ি কেনা চাই। মেঠোপথ নামের একটি শোরুমে ঢুকে দেখা গেল, থ্রিপিসের বড় সংগ্রহ। এখানে হাতের কাজের প্রাধান্য। এত সুন্দর কাজ যে, দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। কাপড়-ই-বাংলা নামের ফ্যাশন হাউসটি এখন বেশ পরিচিত। তৃতীয় তলায় বেশ বড় শোরুম। এখানে শতভাগ দেশী কাপড়। নিজেদের ডিজাইন। এবার মনে হলো কাটিং নির্ভর। সাদা, বেগুনী, নীল রঙের প্রাধান্যটাও চোখে পড়ার মতো। স্বত্বাধিকারী বিথুন বললেন, এবার কাটিং আর রংটাই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি পোশাকে আছে আমাদের দেশ ভাবনা। বাড়তি শ্রম ও যতœ। মেয়েদের পোশাকের জন্য এখন বিখ্যাত দেশাল। শোরুমে গিয়ে দেখা গেল, থ্রিপিস টপস সালোয়ার যথারীতি আছে। যোগ হয়েছে মেয়েদের পাঞ্জাবি। শোরুমের দায়িত্বে থাকা রোমিও জানালেন, তাঁরা বরাবরের মতোই দেশীয় কাপড় বেছে নিয়েছেন। তাতে প্রকৃতি, পরিবেশ, নদী, গাছ ইত্যাদি মোটিফ রেখেছেন। গাঁওগেরাম, পৌরাণিক, দেশীয়া ইত্যাদি নামের শোরুমগুলোতেও দারুণ সব সংগ্রহ। আর আজিজ মার্কেট যেহেতু, নিত্য উপহারের কথা না বললেই নয়। হ্যাঁ, মার্কেটের পাইওনিয়ার ফ্যাশন হাউসটিতে আছে সব ধরনের পোশাক। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়িÑ সবই নজর কাড়বে। টিশার্টেরও বড় সম্ভার আজিজ মার্কেট। নিত্য উপহারে শুরু। এখন প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যায়। শনিবার মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মুস্তাফিজুর রহমান বললেন, দেশীয় কাপড়ের একটা মায়া আছে। সেই মায়ায় পরে এখানে আসি। দামটাও সহনীয়। তবে কোন কোন দোকানে ভারতীয় নিম্ন মানের পোশাক ঢুকে গেছে বলে অভিযোগ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আরিবা। এ দোকানগুলো এড়ানো গেলে মার্কেটে কেনাকাটা করে যে কেউ খুশি হবেন বলে মনে করেন তিনি। পরামর্শটুকু মাথায় নিয়েও বলা যায়, ঈদের আগে একবার অন্তত ঢুঁ মেরে আসা চাই আজিজ মার্কেটে।
×