ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ গণভোট, বিভক্ত গ্রীস

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৫ জুলাই ২০১৫

আজ গণভোট, বিভক্ত গ্রীস

গ্রীসে ধর্থনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে রবিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ গণভোটের প্রাক্কালে হাজার হাজার গ্রীক শুক্রবার পাল্টাপাল্টি সমাবেশে যোগ দেয়। এ থেকে দেশটি দুটি শিবিরে বিভক্ত হওয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বেইল আউট দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে অর্থ সহায়তা নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের শর্ত মেনে নেয়া হবে কিনা, গ্রীকরা সেই প্রশ্নেই ভোট দেবেন। এতে দেশটিতে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোই চালু থাকবে কিনা, তা স্থির হতে পারে ইপসোসের সর্বশেষ সমীক্ষায় শতকরা ৪৪ ভাগ ভোটার হ্যাঁ ভোট ও ৪৩ ভাগ ‘না’ ভোট দেয়ার পক্ষে বলে দেখা যায়। খবর এএফপি, বিবিসি, ওয়াশিংটন ও ইয়াহু নিউজের। প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি সিপরাস রাজধানী এথেন্সের কেন্দ্রস্থলে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে দেশটিকে সচল রাখতে ঋণদাতাদের প্রস্তাবিত এক সাহায্য চুক্তির কঠোর শর্তের প্রতি ‘না’ ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু আশপাশেই আয়োজিত আরেক বিশাল সমাবেশে ‘না’ ভোট দেয়া হলে গ্রীস ইউরোজোন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলে জনগণকে সতর্ক করে দেয়া হয়। এর আগে গ্রীসের এক আদালত গণভোট অনুষ্ঠান অবৈধ ঘোষণা করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। গ্রীসের বর্তমান বেইল আউট কর্মসূচীর মেয়াদ মঙ্গলবার শেষ হয়ে যায়। ব্যাংকগুলো পুরো সপ্তাহ ধরেই বন্ধ থাকছে এবং অর্থ উত্তোলন সীমিত করে দেয়া হয়েছে। ‘না’ ভোট দিলে গ্রীস ইউরোজোন থেকে ছিটকে পড়তে পারে বলে ইইউ নেতাদের সতর্কবাণী খ-ন করেন সিপরাস। তিনি হর্ষোৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা কেবল ইউরোপে থাকার সিদ্ধান্তই নিচ্ছি না আমরা মর্যাদার সঙ্গেই ইউরোপে বাস করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ৪০ বছর বয়সী ঐ ক্যারিজমেটিক নেতা বলেন, আমি আল্টিমেটামের প্রতি ‘না’ বলতে এবং আপনাদের যারা ভয় দেখাচ্ছে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে আহ্বান করছি। তিনি বলেন এ আবেগ ও আশাবাদকে কেউই উপেক্ষা করতে পারবে না। তিনি আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় তার হাতকে শক্তিশালী করতে এ গণভোট আহ্বান করেন। ওই সমাবেশ থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে এক পাল্টা সমাবেশে ‘হ্যাঁ’ সমর্থকরা ইউরোপপন্থী সেøাগান দেয়। সিপরাস ইচ্ছামতো কাজ করার সুযোগ পেলে ইউরোজোন থেকে গ্রীসের বিদায়ঘণ্টা নিয়ে তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। ৪৩ বছর বয়সী এক চিকিৎসক বলেন, তারা আর একথা বলতে পারবে না যে, এটি ইউরোপ ত্যাগের প্রশ্ন নয়। তিনি বলেন, ইউরোর বাইরে কেবল দুর্দশাই রয়েছে। এথেন্সের সমাবেশগুলোতে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার লোক যোগ দেয় বলে ধারণা করা হয়। ‘না’ সমাবেশই অপেক্ষাকৃত বড় ছিল বলে পুলিশ ও পর্যবেক্ষকরা একমত। চলতি সপ্তাহে পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এটিএম থেকে দৈনিক অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ সীমিত করে দেয়া হলে অনেক গ্রীসই ‘হ্যাঁ’ শিবিরের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এর আগে মঙ্গলবার গ্রীসকে আন্তর্জাতিক সাহায্য দেয়ার কর্মসূচীর মেয়াদ শেষ হয়। সর্বশেষ দু জরিপে পূর্ববর্তী জরিপগুলোর তুলনায় ‘হ্যাঁ’ পক্ষের প্রতি সমর্থনের হার বাড়তে দেখা যায়। শুক্রবার এ্যালকো ইনস্টিটিউটের এক জরিপে শতকরা ৪৪ দশমিক ৮ ভাগ গ্রীক ‘হ্যাঁ’ ভোট এবং ৩ দশমিক ৪ ভাগ ‘না’ ভোট দিতে চান বলে দেখা যায়। গ্রীসের মেসিডোনিয়া ইউনিভার্সিটির পক্ষে ব্লুমবার্গ পরিচালিত জরিপে শতকরা ৪৩ জন ‘না’ ভোটের এবং ৪২ দশমিক ৫ জন ‘হ্যাঁ’ ভোটের সমর্থক বলে দেখানো হয়। ‘না’ ভোট বেইল আউট আলোচনায় গ্রীক রাজনীতিকদের হাত শক্তিশালী করবে তাদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউরোপীয় নেতারা। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ ক্লদ জাঙ্কার এবং অর্থমন্ত্রীদের সমিতি ইউরো গ্রুপের প্রধান জেরোয়েন ডিজসেলব্লোয়েম উভয়ই জোর দিয়ে বলেন, ‘না’ ভোট গ্রীকদের অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং ‘হ্যাঁ’ ভোটও কোন চুক্তিতে পৌঁছানো সহজ করবে না। ইইউর নির্বাহী শাখা ইউরোপিয়ান কমিশন চায়, এথেন্সের ঋণ সংক্রান্ত বাধ্যবাধ্যকতা পালন করতে কর বৃদ্ধি ও জনকল্যাণ খাতে ব্যয় হ্রাস করুক। ইউরোপিয়ান কমিশন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ও ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক গ্রীসের তিন ঋণদাতা।
×