ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃক্ষমেলা-২১৫

আমের চারা বিক্রি হলো লাখ টাকায়

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ জুলাই ২০১৫

আমের চারা বিক্রি হলো লাখ  টাকায়

এমদাদুল হক তুহিন ॥ রাজধানীর বাণিজ্যমেলার মাঠে আয়োজিত বৃক্ষমেলা ২০১৫ তে কেনাবেচার কথা কম বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিক্রি একেবারেই নেই বলা হলেও লাখ টাকায় উন্নত জাতের আমের চারা বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি উচ্চ গুণসম্পন্ন ‘ওয়ার্ল্ড কিং ম্যাংগো’ নামের একটি চারা বিক্রি করে লাখ টাকায়। উচ্চ মূল্যসম্পন্ন গাছের চারা বিক্রির কথা হিসাবে না ধরলে তুলনামূলক হিসাবে বিক্রি একেবারেই কম। গাছের দাম এক লাখ, তাও আবার আম গাছ! বৃক্ষ সম্পর্কে যাদের ধারণা একেবারেই কম, শুনে তাদের কাছে অবিশ্বাস্যও মনে হতে পারে। তবে শুধু তাই নয়, বিশেষ কোন প্রজাতির গাছের দাম এক থেকে দেড় লাখ। এমনকি এক লাখ টাকা দামের বট বনশাই নামের একটি বৃক্ষ দেখা গেল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের নার্সারির স্টলে। নার্সারির ম্যানেজার কবির হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের স্টলে ৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। এমনকি এক লাখ টাকা দামের গাছও আছে। বট বনশাই। তবে বিক্রি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এ বছর বিক্রি তেমন ভাল নয়। একটানা পাঁচ বছর ধরে মেলায় অংশ নিচ্ছি, তবে এমন কম বিক্রি আর হয়নি। ব্র্যাকের এ স্টলে প্রায় তিন শ’ থেকে চার শ’ প্রজাতির বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ রয়েছে। এমনকি আছে শোভা বর্ধক নানা গাছ। ক্যাকটাস তো আছেই। গাছের নাম বললে শেষ হবে না। নানা বর্ণের নানা রঙের চেনা জানা অচেনা প্রজাতির গাছ। অপরিচিত তবু চেনা জানা সবুজ ভুবন। আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকি, তরমুজ, কুল, কাঁঠাল, পেয়ারা, তেজপাতা। চেনা জানা আবার আচেনা। তেলসুর, গামার, গর্জন, লেবু, লিচু কি নেই! বিশ্বের নানা প্রান্তে সকল গাছের সমারোহের নাম জাতীয় বৃক্ষমেলা-২০১৫। অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোন মেলা আয়োজনের পেছনে ভিন্ন একটি অর্থ বহন করে। প্রচার, প্রসার ও ব্যবসায়িক মুনাফার বিষয়টি মাথায় রেখেই আয়োজন হয় অধিকাংশ মেলার। তবে বাণিজ্যমেলার মাঠে আয়োজিত এবারের বৃক্ষ মেলাটি প্রচার না পাওয়ায় হতাশ নার্সারি মালিকরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নার্সারির নানা প্রজাতি ও বর্ণের বৃক্ষ সবুজ হয়ে ওঠা বাণিজ্যমেলার মাঠে এ মেলার আয়োজনে আছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে। তবে নামমাত্র স্টল বসিয়ে দিয়ে এর প্রচার প্রচারণার বিষয়ে তারা অনেকটাই নীরব। শুক্রবার দুপুরের নামাজের পর মেলায় অবস্থানকালীন এক ঘণ্টা সময়ে মেলার তথ্য কেন্দ্রে পাওয়া যায়নি কোন কর্তাব্যক্তিকে। তথ্য কেন্দ্রের পাশেই অবস্থিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একটি ফোন নম্বর দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ২৫ বছর ধরে নার্সারির ব্যবসা করেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার দেলোয়ার হোসেন। নিজের গড়া নার্সারির নাম দিয়েছেন বনরুপা নার্সারি। মেলার ৫৫ নং স্টলে কথা হয় তার সঙ্গে। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২৫ বছর ধরে নার্সারি করছি। অন্যবারও মেলায় অংশ নিই। রোজ ও আনুষ্ঠানিভাবে মেলা উদ্বোধন না হওয়ার কারণে বেচাকেনা কম। লোকজনও কম আসছে। প্রায় দুই সপ্তাহ মেলায় অংশ নিয়ে তিনি মাত্র ৭০ হাজার টাকার গাছ বিক্রি করেছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার স্টলে প্রায় ১৫০ প্রজাতির নানা ধরনের গাছ আছে। শোভাবর্ধক নানা ধরনের বৃক্ষ তরুণ প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। লেকভিউ সেন্টারের সামনে অনেকটা খেজুর গাছের মতো পানিক্স পাম নামে একটি বৃক্ষ। যে সেই গ্রামের শীতকালের দৃশ্য। খেজুর গাছের মতো গাছটিতেও যেন সদ্য হাঁড়ি দেয়া হয়েছে। মেলা ঘুরে অন্য রকম এক শীতলতা অনুভূত হয়। কেউ কেউ বলেছে, যেন সবুজের এক গ্রামে পরিণত হয়েছে এ মাঠ। মেলায় ঘুরে যে কারও নার্সারি করার শখ জেগে উঠতে বাধ্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার মেলায় অন্য যে কোন দিনের তুলনায় বৃক্ষপ্রেমীদের ভির ছিল বেশি। তবে সব মিলিয়ে রোজার কারণে বিক্রির পরিমাণ ছিল কম। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পিকআপে ওঠানো কিংবা নামানো হচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ।
×