ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর্জেন্টিনার ‘পনেরো’ না চিলির ‘প্রথম’

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ জুলাই ২০১৫

আর্জেন্টিনার ‘পনেরো’ না চিলির ‘প্রথম’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাইশ বছরের হাহাকার ঘোচাবে আর্জেন্টিনা না নিজেদের ইতিহাসে প্রথম শিরোপার দেখা পাবে চিলি। এই প্রশ্ন সামনে রেখে কোপা আমেরিকা ফুটবলের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক চিলি ও ফেবারিট আর্জেন্টিনা। চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোতে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২টা থেকে শুরু হবে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই মহারণ। আর্জেন্টিনা সর্বশেষ কোপা আমেরিকা জিতেছে সেই ১৯৯৩ সালে। এরপর কোপা কেন, কোন আন্তর্জাতিক শিরোপাই জিততে পারেনি দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যে কারণে আধুনিক যুগের আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের বলা হয়ে থাকে ‘অভাগা’! এই তালিকার সর্বাগ্রে থাকবেন লিওনেল মেসি। ক্লাব দল বার্সিলোনার হয়ে ভূরি ভূরি শিরোপা জেতা মেসি জাতীয় দলের হয়ে এখনও ‘শূন্য’। এই শূন্যতা ঘোচানোর সুযোগ ব্রাজিল বিশ্বকাপে পেয়েছিলেন। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবান। এক বছরের ব্যবধানে ওই ক্ষতে প্রলেপ দেয়ার সুযোগ পেয়েছে মেসি ও আর্জেন্টিনা। চিলিকে হারাতে পারলেই উৎসব আনন্দে মেতে উঠবে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। সেক্ষেত্রে উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কোপায় সর্বোচ্চ ১৫ বার শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়বে আর্জেন্টিনা। স্বাগতিক চিলিও ছেড়ে কথা বলতে নারাজ। দেশটি ৯৯ বছরের কোপার ইতিহাসে কখনই শিরোপা জিততে পারেনি। এর আগেও চারবার ফাইনাল খেলেছে। কিন্তু প্রতিবারই হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে। এবার দেশের মাটিতে শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছে ক্লাউডিও ব্রাভোর দল। শুধু কোপা না, চিলির ইতিহাসেই নেই বড় কোন আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের নজির। যে কারণে প্রথমবারের জন্য উৎসব করার সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ দেশটি। অবশ্য দু’দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানে দৃষ্টি দিলে চিলির কোন সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না! এ পর্যন্ত ৮০ বার মুখোমুখি হয়েছে তারা। এতে আর্জেন্টিনার ৫৩ জয়ের বিপরীতে চিলির জয় ৬ ম্যাচে। বাকি ২১ ম্যাচ ড্র হয়। কোপা আমেরিকায় চিলির অবস্থা আরও করুণ। এখানে আর্জেন্টিনাকে কখনই হারাতে পারেনি চিলি। ২৪ মুখোমুখিতে আর্জেন্টিনার জয় ১৮ ম্যাচে। বাকি ৬ ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে চিলির সর্বশেষ জয় সেই সাত বছর আগে। পরিসংখ্যান চিলিকে চোখ রাঙ্গানি দিলেও দলটি শিরোপা ছাড়া কিছুই ভাবছে না বলে জানিয়েছে। আর্জেন্টিনা ও চিলির ফাইনাল মহারণ নিয়ে দু’দেশের সমর্থকদের মধ্যে চলছে উন্মাদনা। যেন অতীতের মতোই প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের আবহ চলছে। খেলার মাঠ ছাড়াও নানা কারণে দু’দেশের মধ্যে আছে বিভিন্ন বিষয়ে বৈরিতা। চিলির এক দিকের পুরো সীমান্তই আর্জেন্টিনার সঙ্গে, দুই দেশের মধ্যে প্রকৃতি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আন্দিজ পর্বতমালা। পৃথিবীর তৃতীয় দীর্ঘতম সীমান্ত ভাগাভাগি করে নেয়া দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা কয়েক শতাব্দী ধরেই। গত দুই দশকে সেই বরফ অনেকটাই গলেছে। এরপরও চিলি ও আর্জেন্টিনা যখন কোপার ফাইনালে মুখোমুখি তখন উত্তাপটা ঠিকই বিরাজ করছে। অনেকেই এই লড়াইকে মাঠের ‘যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করছেন। এমন প্রেক্ষিতে সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার জ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো। অবশ্য ফাইনালে কঠিন প্রতিপক্ষ চিলির বিপক্ষে মাঠের বাইরের ব্যাপারগুলো আর্জেন্টিনাকে প্রত্যাশিত লক্ষ্য থেকে সরাতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি। মাশ্চেরানো বলেন, আমি আশা করব মানুষ এটা বুঝতে পারবে যে, এটা নিছক একটি ফুটবল ম্যাচ, কোন যুদ্ধ নয়। এ ক্ষেত্রে দেশ দু’টির মধ্যে অতীতে কী ঘটেছে তা বড় করে দেখতে চান না বার্সিলোনার এই তারকা মিডফিল্ডার। তিনি বলেন, অতীত অতীতই। খেলাতে রাজনীতির বেড়াজালে ফেলে দেয়াটা মোটেও আমাদের উচিত হবে না। তাছাড়া চিলি ও আর্জেন্টিনা দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ। অবশ্যই আমাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। মাঠের লড়াইয়ে যে দুই দলের কেউ কাউকে ছাড় দেবে না এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে যেভাবে খেলেছে, তাতে শিরোপাটা মেসি, মারিয়াদের হাতেই দেখছেন অনেকে। কিন্তু নিজেদের মাঠে চিলিও ছেড়ে কথা বলবে না। স্বাগতিক ডিফেন্ডার জোশে রোহাস বলেছেন, তারা (আর্জেন্টিনা) বিশ্বের অন্যতম সেরা দল, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ফেবারিট হওয়াটাই জয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। আমরা নিজেদের মাঠে খেলছি, সমর্থকেরা আমাদের পেছনেই আছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমরা শিরোপা ছাড়া কিছুই ভাবছি না।
×