ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়া ও রাজশাহীর শোরুমে বাহারি সাজ

রঙিন সুতোয় সোনামুখী সুইয়ের কাজ, ঈদের পোশাকে আকর্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ জুলাই ২০১৫

রঙিন সুতোয় সোনামুখী সুইয়ের কাজ, ঈদের পোশাকে আকর্ষণ

সমুদ্র হক ও মামুন অর রশিদ রঙিন সুতায় সোনামুখী সুইয়ের কাজই আলাদা। শোরুমগুলোর থ্রিপিস, টুপিস, লেহেঙ্গা, আনারকলি ও মাসাককলিসহ আধুনিক পোশাকের কারুকাজ হয় সুই, সুতা আর আনুষঙ্গিক জিনিসে। নতুন বৌয়ের শাড়ির ওপর এমনভাবে নক্সা করা হয় যা বোঝাই যায় না এগুলো নারীদের হাতে করা সূচিকর্ম। ছেলেদের পাঞ্জাবির ওপর নক্সা করা হয় একইভাবে। এসব নক্সার বাহারি নাম। কারচুপি, এ্যাপ্লিক, ক্যাটওয়ার্ক, বাটিক, ক্রুশকাঁটা প্রিন্ট ইত্যাদি। ঈদের কেনাকাটায় দোকানিরা যেমন হিমশিম খাচ্ছে সূচিকর্মের শিল্পীরাও বসে থাকার একদ- সময় পাচ্ছে না। এসব শিল্পী সারা বছর যত রোজগার করে ঈদ মৌসুমে তা বেড়ে যায়। সূচিশিল্পীর অনেক তরুণী এই কাজ করেই লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছে। তাদের একজন নাজনীন (২০)। বাড়ি বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকায়। মাধ্যমিক পাস করার পর স্বল্প আয়ের পরিবারে কাজের সন্ধান করতে হয় তাকে। একপর্য়ায়ে ওই এলাকার সূচিকর্মে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী লিজা আক্তার রানীর দেখা পান। তিনি কাজ শিখিয়ে দেন লিজাকে। এরপর সে সূচিকর্মে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছে যে থ্রিপিসের ডিজাইন অন্যরা করে এক মাসে সে কাজ নাজনীন তা করে দুই সপ্তাহে। তবে সূচিকর্মে নক্সা করা মোটেও সহজ নয় বলে জানান লিজা। পুরো কাজটি করতে হয় বৃদ্ধাঙ্গুলি তর্জনীর মধ্যে চিকন একটি সুই এঁটে। সোনামুখী সুই এই কাজের উপযোগী। নানা ধরনের কাপড়ে সুইয়ের ফোড় দেয়ার সময় চোখ ও আঙুলের সমান্তরাল ব্যবহার হয়। শোরুমের মালিক যখন অর্ডার দেয় তখন থ্রিপিসে কি নক্সা হবে তারাই ঠিক করে দেয়। আবার ডিজাইনবুক দেখে কেউ সিলেক্ট করে। যখন ভিড় বেশি হয় তখন সূচিশিল্পীদের ওপর নক্সার দায়িত্ব দেয়া হয়। যেমন ঈদের আগের এই সময়টায় অনেকে থ্রিপিস, টুপিসসহ নানা ধরনের পোশাক কিনে সূচিকর্মের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ডিজাইন দেখে অর্ডার দিচ্ছে। একজন তরুণী গৃহবধূ জানালেন শোরুমে কারুকাজের থ্রিপিসের যা দাম সাধারণ থ্রিপিস কিনে সূচিকর্ম করে নিলে দাম অনেক কম পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন শিক্ষার্থী সূচিকর্মের প্রতিষ্ঠান রিয়া কারচুপিতে গিয়ে ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়ালের নায়িকা যে পোশাক পরেছে স্মার্টফোনে তোলা সেই ছবি সূচিশিল্পীদের দেখায়। শিল্পীরাও প্রযুক্তির ব্যবহারে কম্পিউটারে তা তুলে নেয়। এভাবেও নক্সা দেখিয়ে অর্ডার দেয়া হচ্ছে। লিজা আক্তার জানালেন মাধ্যমিক পাস করার পর লেখাপড়া হয়নি তার। সংসারের হাল ধরতে বছর দশেক আগে তিনি এই কাজ শিখেছেন। তখন সূচিকর্মের এত চাহিদা ছিল না। থ্রিপিস টুপিস যা আসত তাই কিনতে হতো। দিন দিন এই শিল্পের গতি এসেছে বাহারি পোশাকের সঙ্গে। লেহেঙ্গা মাসাককলি, আনারকলি মুঘল-ই আযম পোশাকের সঙ্গে যে উন্নত সূচিকর্ম থাকে তা সাধারণ নয়। ভারতে এই কাজগুলো আধুনিক মেশিনে হয়। যেমন গয়নার পাথর চুমকি আয়নার মতো ছোট্ট টুকরো এমনভাবে এঁটে দেয়া হয় যা পড়ে যায় না। এই সূক্ষè কাজগুলোই ম্যানুয়ালি অর্থাৎ সূচিকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয় থ্রিপিস টুপিস শাড়ি পাঞ্জাবিতে। অনেক সময় চাদরেও এক ধরনের নক্সা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ক্যাটওয়ার্ক। সবচেয়ে কঠিন হয় নতুন বৌয়ের শাড়ির ডিজাইনে। নক্সা অনুযায়ী প্রতিটি থ্রিপিসের জন্য নেয়া হয় ৪শ’ থেকে এক হাজার দুইশ’ টাকা। বাহারি ডিজাইনে সময় লাগে অন্তত এক মাস। বর্তমানে যে কাজগুলো হচ্ছে তার অর্ডার এসেছে প্রায় এক-দেড় মাস আগে। এর মধ্যেই ছোট্ট ডিজাইনগুলো করতে ৩/৪ দিন সময় লাগছে। এখন কোন অর্ডার নেয়া হচ্ছে না। হাতে যে কাজ আছে তা ঈদের আগে সিরিয়াল অনুযায়ী দিতে হবে। রাজশাহীর শোরুমে বাহারি সাজ ॥ আমের পর রাজশাহী সিল্কের কদর দেশজুড়ে। এজন্য রেশম নগরীও বলা হয় রাজশাহীকে। সময়ের পরিক্রমায় এখন চলছে আমের মৌসুম। আবার একই সময় শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ। রাজশাহীর মানুষের ঈদ আর সিল্ক একই সুতোয় গাঁথা। তাই ঈদের কেনাকাটা জমতে শুরু করেছে রাজশাহীর সিল্ক হাউসগুলায়। রাজশাহীর সিল্কপল্লী এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন শোরুমের তাকে স্থান পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী সিল্কের পসরা। বেচাকেনাও জমে উঠতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। আর ক’দিনের মধ্যে দেদার বিক্রির আভাসে পুলকিত হতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মনপ্রাণ। রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকার শোরুমগুলোয় এখন কেউ গেলেই দূর থেকে সবার আগে কানে বিঁধবে তাঁতের শব্দ। সামনে ঈদ তাই বিসিক এলাকায় দিনরাত চলছে তাঁত মেশিন। ঈদের মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সিল্ক সমগ্রী যেমন শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ বেচাকেনা হবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। ঈদ সামনে রেখে রাজশাহী বিসিক শিল্প এলাকায় এখন পুরোদমে সচল সব কলকারখানা। ঈদের বাজার ধরতে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক কারখানাগুলোয় শুরু হয়েছে রাতদিন কাজ আর কাজ। শাড়ি বুনন, রং, হাতের কাজ চলছে এসব কারখানায়।
×