ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাসের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে মধ্যরাত থেকে লাইন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৪ জুলাই ২০১৫

বাসের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে মধ্যরাত থেকে লাইন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনভর ভোগান্তি, বাড়তি ভাড়া আদায় আর টিকেট পাওয়া-না পাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যে বাসের আগাম টিকেট বিক্রি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সোনার হরিণ টিকেট সংগ্রহে মধ্যরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যারা টিকেট হাতে পেয়েছেন তাদের চোখে-মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। গালভরা হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা। সব কষ্টই যেন কষ্ট নয়। আর যারা কাউন্টারে গিয়ে কাক্সিক্ষত দিনের টিকেট পাননি তাদের কষ্টের যেন শেষ ছিল না। অনেকে এসি বাস ও নামীদামী বেশকিছু পরিবহনের টিকেট দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেন। মহিলাদের জন্য এবার সকল কাউন্টারে পৃথক বুথ ছিল না। কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল না। আগামী দিনে সকল বাস কাউন্টারে বুথ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সবাই। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট নিয়ে মহাদুশ্চিন্তার কথা জানালেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি ঈদেই বাসের আগাম টিকেট কিনতে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় গাবতলী বাস টার্মিনালে। শুক্রবার আগাম টিকেট বিক্রির প্রথম দিনও মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারী পরিবহনের কাউন্টারে দেখা গেল একই চিত্র। ১২ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করবে পরিবহন কোম্পানিগুলো। ৫ জুলাই পর্যন্ত টিকেট বিক্রি হবে। ১৫ ও ১৬ জুলাইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রথম দিনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নামীদামী অনেক পরিবহনের টিকেট শেষ হয়ে যায়। নির্ধারিত দিনের টিকেট পাননি অনেক যাত্রী। পরিবহনের প্রকারভেদে তিন থেকে পাঁচটি পর্যন্ত টিকেট সংগ্রহ করতে পেরেছেন যাত্রীরা। প্রতি বছরের মতো এবারও মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুই টার্মিনাল থেকে কখনই অগ্রিম টিকেট দেয়া হয় না। যাত্রীরা সরাসরি টিকেট কেটে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবেন। এদিকে ১০ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে সরকারী বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট দেয়া। ৯ জুলাই থেকে দেয়া হবে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট। অনলাইনে এবারও ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা যাবে। এসআর পরিবহনের সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, এবার যাত্রীদের কাছ থেকে টিকেটের দাম বেশি রাখা হচ্ছে না। তবে ঈদ উপলক্ষে টিকেটের ডিসকাউন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে আল-হামরা পরিবহনের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, লাইন ছাড়াই অনেকেই কাউন্টারের ভেতরে ঢুকে টিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। গাবতলী বালুর মাঠে হানিফ কাউন্টারের সামনে ভোর থেকেই দীর্ঘ লাইন। সকালে এক পশলা বৃষ্টি আর রোদে দাঁড়িয়ে সময় যেন কাটছিলই না। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, টিকেটের জন্য কাউন্টারের সামনে লোক আসা শুরু হয়েছে মধ্যরাত থেকে। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে যখন বিক্রি শুরু হলো, ততক্ষণে লাইনে কয়েক শ’ মানুষ টিকেটের অপেক্ষায়। গাবতলী থেকে মূলত উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন গন্তেব্যের বাস ছাড়ে। বিভিন্ন কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, হাতে টিকেট থাকলে আজ শনিবার ও রবিবার টিকেট বিক্রি চলবে। মীরপুর বড় বাজার থেকে দিনাজপুরের টিকেট কিনতে আসা ব্যবসায়ী মোঃ আলী জানান, রাত তিনটার দিকে লাইনে দাঁড়ান তিনি। তখনও সামনে ছিল অন্তত ৫০ জন। বেলা ১১টায় টিকেট পাওয়ার পর তার চোখে-মুখে ফুটে বেরোচ্ছিল আনন্দের ঝিলিক। এই কাউন্টার থেকে যারা টিকেট হাতে পেয়েছেন, তারা সবাই হাসি দিয়ে হাত উঁচু করে টিকেট দেখাচ্ছিলেন। অর্থাৎ ভোগান্তি হলেও প্রিয়জনের সান্নিধ্যে যাওয়া নিশ্চিত। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বিল্লাল বলেন, ৬০০ টাকার টিকেট ৮৫০ টাকা নিচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য টিকেট নিলেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে বালিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত। তবে কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেছেন, ঈদে মাঝপথে নামলেও শেষ গন্তব্যের ভাড়া নেয়া হবে। কারণ যাত্রী সঙ্কটের কারণে ঢাকায় বাসগুলো খালি ফিরবে। তাই নির্ধারিত ভাড়াই রাখা হচ্ছে। একই অভিযোগ পাওয়া গেল কল্যাণপুরে হানিফ কাউন্টারে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণবের কাছে। তিনি জানান, এমনিতে যশোরের টিকেট ৪৮০ টাকা হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার (উত্তরাঞ্চল) মোঃ ওয়াহিদুজ্জমান বলেন, আমরা টিকেটের গায়ের যে মূল্য সেটাই নিচ্ছি। তবে যে যেখানেই নামুক, টিকেটে লাস্ট স্টপেজের ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ১৫ ও ১৬ জুলাইয়ের টিকেটের চাপ বেশি। আমরা চেষ্টা করছি সবাই যাতে টিকেট পান সে ব্যবস্থা করার। আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি আছে। ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মহিলাদের জন্য আলাদা লাইন সম্ভব নয়। এ কারণে ভিড় বেশি। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হানিফ, শ্যামলী, টিআর, এসআর, কেয়া, নাবিল পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী। কয়েকটি কাউন্টারে মহিলাদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা থাকলেও তা নেই অধিকাংশ কাউন্টারে। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কাটতে আসা যাত্রী মেহেরুননিসা জানান, মহিলাদের জন্য আলাদা কোন লাইনের ব্যবস্থা নেই। টিকেট সংগ্রহ করতে পুরুষদের সঙ্গে গাদাগাদি করেই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। হানিফ এন্টারপ্রাইজের জিএম মোঃ মোশাররফ হুসাইন বলেন, আমাদের এই কাউন্টারে নিয়মশৃঙ্খলা মেনেই যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি চলছে। লাইনের বাইরে টিকেট বিক্রির অভিযোগ এখনও পাইনি। তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রায় ৬শ’ থেকে ৭শ’ গাড়ি চলবে। এতে সিট সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। রাস্তায় যানজট কম থাকলে যাত্রীদের সুবিধার্থে আরও ৫০ থেকে ১শ’ গাড়ি ছাড়া যাবে। সড়কে যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চান্দুরা মোড়, মির্জাপুর রেলগেট থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত যানজট হয়। যমুনা সেতুর পরে নকলা ব্রিজের এপারে-ওপারে ছয় কিলোমিটার রাস্তায় চালকদের অনেক কষ্ট হয়। এই রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এদিকে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে ঈদের অগ্রিম টিকেটের দাম বেশি রাখছে বলেও অভিযোগ করেন বেশ কয়েজন যাত্রী। লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের কাউন্টারের ভেতর থেকে বলা হচ্ছে টিকেট না থাকার কথা। যাত্রীদের অভিযোগ, গাইবান্ধার টিকেট আগে ছিল ৪৫০ টাকা কিন্তু ওই টিকেট ৭৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। যাত্রীরা জানান, গাইবান্ধার সাধারণ ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ৫২০ টাকা পর্যন্ত সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এই কাউন্টার থেকে ৫২০ টাকার টিকেট ৭৫০ টাকায় বাধ্য হয়েই কিনতে হয়েছে। টিকেটপ্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম বলেন, লাইনে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। আগে পুলিশ এসব লাইন ঠিক করত। এবার কোন পুলিশ নেই। কেউ কারও কথা মানছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন টিকেটপ্রত্যাশীরা। অনেকটা যুদ্ধ করেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
×