ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজকালের ভাষ্য

সিপিআই ভাঙ্গার নেপথ্যে-

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ৩ জুলাই ২০১৫

সিপিআই ভাঙ্গার নেপথ্যে-

অর্ধশত বছর আগে ১৯৬৪ সালে দিল্লীতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে অমৃত ডাঙ্গে তখনও অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান। ১৯২৪ সালে কানপুর কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘গুপ্তচর’ হিসেবে কাজ করেছিলেন কিনা সেটাই ছিল ওই বৈঠকের বিবেচ্য। ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা রজনী পাম দত্তের প্রিয় খ্যাতিমান পার্লামেন্টারিয়ান প্রতিভা ভূপেশ গুপ্ত ডাঙ্গেকে অনুরোধ করেছিলেন, আলোচনাটি যখন তাকে ঘিরেই। তাই তিনি যেন বৈঠকের বাইরে থাকুন। বাইরে তখন রাজনীতির ঘনঘটা। ১৯৬১ সালের সম্মেলনের পরেই বোঝা গেছে, বাম ও সংসদীয় পদ্ধতির দিকে ঝোঁকের কারণে পার্টিতে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। জ্যোতি বসু, ভুপেশ গুপ্ত প্রমুখ তথাকথিত মধ্যপন্থীরা কংগ্রেস-বান্ধব ডাঙ্গেকে সরিয়ে পার্টির ভাঙন রুখতে উদগ্রীব। তবে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি তথা সরকারের প্রধান নিকিতা ক্রুশ্চেভের, বিংশতম পার্টি কংগ্রেসের শান্তিপূর্ণ পথে শাসকদের নিয়েই বিপ্লব লাইনের অনুগামী পার্টি দোর্দ- প্রতাপ চেয়ারম্যান ডাঙ্গে ও তার অনুগামীরা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্লব ছাড়াই সমাজতন্ত্রে যেতে মশগুল। অন্যদিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী চরিত্র পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা হারানোর আশঙ্কায় তখনই বোঝা যাচ্ছিল দল ভাঙার আশঙ্কা। সেই সময়ের বিশেষ করে পার্টির ঘাঁটি আগলানো বাংলার ও অন্ধ্রের তেভাগা, তেলেঙ্গানা অভিজ্ঞরা- যেখানে ট্রাম ও খাদ্য আন্দোলনে বামপমন্থীদের কংগ্রেসকে সরিয়ে রাজ্য সরকারে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা বুঝতে পারছিলেন কিছুতেই কংগ্রেস সঙ্গ মেনে নিত না। প্রবীণ কমিউনিস্ট ঐতিহাসিক ভানুদেব দত্ত তার দশ হাজার পাতার সিপিআই অনুমোদিত এবং মনীষা প্রকাশিত কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের সদ্য শেষ পঞ্চদশ খণ্ডে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের উল্লেখে সিদ্ধান্ত টেনেছেন, ভূপেশ গুপ্তের কথা মেনে প্রকাশ্যে কংগ্রেস সখ্যের কথা বলা ডাঙ্গে যদি সেদিন নমনীয় হয়ে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন তবে পার্টি ভাঙত না।
×