ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপাস্বপ্নে বিভোর মেসি-মারিয়ারা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৩ জুলাই ২০১৫

শিরোপাস্বপ্নে বিভোর মেসি-মারিয়ারা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অপেক্ষার প্রহর বড়ই বেদনার। সেটা যদি হয় বছরের পর বছর তাহলে তো কথাই নেই। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ক্ষেত্রে হয়েছে এই দশা। সেই যে দিয়াগো ম্যারাডোনার যুগে সাফল্য, তারপর আর কোন শিরোপার দেখা পায়নি দেশটি। ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকা জয়ই আর্জেন্টিনার শেষ আন্তর্জাতিক শিরোপা। সেই খরা ঘোচানোর দ্বারপ্রান্তে এখন লিওনেল মেসির দল। চলমান কোপা আমেরিকার ফাইনালে স্বাগতিক চিলিকে হারাতে পারলেই ২২ বছর পর শিরোপা জয়ের উৎসব করবে আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা। এ লক্ষ্যে কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত জেরার্ডো মার্টিনোর দল। যে কোন মূল্যে শিরোপা জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে আর্জেন্টিনা। তারকা ফরোয়ার্ড কার্লোস তেভেজ বলেছেন, এবারের সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে চাই না। অনেকবার তীরে এসে তরী ডুবেছে। আর না। আর্জেন্টিনা সর্বশেষ যখন কোপা জয় করে তখন মেসির বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। কালের পরিক্রমায় সেই মেসি এখন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ২০০৭ সালেও মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কোপার ফাইনালে খেলেছেন। কিন্তু সেবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল আর্জেন্টিনার। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে উরুগুয়ের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল মেসিদের। এই জ্বালা জুড়াতে এবার বদ্ধপরিকর আর্জেন্টিনা। মেসি বলেছেন, আমরা একটা লক্ষ্য নিয়েই এখানে (চিলি) এসেছি। তা হলো ট্রফি জয়। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, চলমান কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার পাঁচ ম্যাচে দশ গোলের মধ্যে মেসি পেয়েছেন একটি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে সবেধন নীলমণি গোল পেয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এই প্যারাগুয়ের বিপক্ষেই সেমিফাইনালে ৬-১ গোলে জিতে ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। অথচ হাফডজন এই গোলের মধ্যে মেসির গোল নেই একটিও। তবে এই গোল খরা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন দেশটির অধিনায়ক। বার্সিলোনা ফরোয়ার্ডের আশা, ফাইনালেই গোল পাবেন তিনি। সেমিতে মেসির গোল না পাওয়া নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে তিনি হতাশ নন বলে জানিয়েছেন। মেসি বলেন, গোল করছি না, এটা সত্যি আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে না। আশা করছি, আমার গোল ফাইনালে আসবে। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভাঙ্গে আর্জেন্টিনার। এবার শিরোপা জিতেই বাড়ি ফিরতে চান আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। দৃঢ়প্রতীয় মেসি বলেন, কোপা আমেরিকা জেতাটা হবে অসাধারণ। আমি মনে করি, দারুণ অবস্থায় থেকে ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি আমরা। মেসি বার্সিলোনার হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন। তবে তার প্রধান সমালোচনা হচ্ছে, তিনি ক্লাবের মতো করে জাতীয় দলে সাফল্য পাননি। অনেকেই তো বলে থাকেন, মেসি নাকি আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে গা বাঁচিয়ে খেলেন। এই দুর্নাম ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ এখন চারবারের ফিফা সেরা ফুটবলারের সামনে। মেসি ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা অনুর্ধ ১৯ দলের হয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছিলেন। তবে সেটি ছিল জুনিয়র দল। মূল দলের হয়ে এখন পর্যন্ত কোন শিরোপা জয় করতে পারেননি। স্বপ্নের ফাইনাল ম্যাচকে সামনে রেখে কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত জেরার্ডো মার্টিনোর দল। চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোর এস্টাডিও ন্যাসিওনালে চূড়ান্ত মহারণে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। এ জন্য অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন দলটির ফুটবলাররা। মেসি, এ্যাগুয়েরো, হিগুয়াইন, ডি মারিয়া, তেভেজ, মাশ্চেরানোরা স্ট্রেচিং, রানিং, ব্যায়াম করে নিজেদের প্রস্তুত করছেন। বার্সিলোনার পর জাতীয় দলের হয়ে বড় কোন শিরোপা জয়ের জন্য এবার শুরু থেকেই মুখিয়ে আছেন মেসি। শেষ চারের ম্যাচে মেসি কোন গোল করতে পারেননি। তবে আর্জেন্টাইন এ অধিনায়কের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পাঁচ গোল হয়। ম্যাচটিতে তিনি ডিফেন্ডার থেকে মিডফিল্ডার সব পজিশনে খেলেছেন। মেসি ও আর্জেন্টিনার এক বছরের মাঝে এটি দ্বিতীয়বার বড় কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা। গোল না পেলেও দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে শেষ চারে ম্যাচসেরা হন মেসি। ১৯৯৩ কোপা আমেরিকা জয়ের পর আর্জেন্টিনা আর কোন বড় শিরোপা জেতেনি। ২০০৭ সালে মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কোপার ফাইনাল খেললেও সেবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। ২০১১ সালে আরও বড় বেদনায় জ্বলতে হয়েছিল তাদের। ঘরের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়েছিল মিশন। হারতে হয়েছিল উরুগুয়ের কাছে। এবার দুঃখ, কষ্ট, না পাওয়ার বেদনা ভোলার মোক্ষম সুযোগ আর্জেন্টিনার।
×