ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তন্বীর ঘাতক স্বামী মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৩ জুলাই ২০১৫

তন্বীর ঘাতক স্বামী মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাহ ফারগুশান তন্বী হত্যার বিচার ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তার মা সামিমা আখতার। কালোটাকার মালিক খুলনার প্রতাপশালী বিশ্বাস পরিবারের লম্পট ও ঘাতক স্বামী মামলা তুলে নিতে রীতিমতো হুমকি দিয়ে চলেছে। নগদ টাকা ও প্রভাব বিস্তার করে সুরতহাল রিপোর্ট তাদের ইচ্ছেমতো করিয়ে নিয়েছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তন্নীর বাবা-মা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা বিচারের দাবিতে এখন মিডিয়ার দারে দারে ঘুরছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তন্নীর মা এই খুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সামিমা বলেন, গত ৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সারাহ্ ফারগুশান তন্নী (২৩), পিতা- এস.এম কামরুল আলম মিন্টু, ঠিকানা- জলীল সরণি, বয়রা, খুলনাকে আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাসের পুত্র মোঃ সোহেল বিশ্বাস ও কন্যা ইতি বিশ্বাসসহ অজ্ঞাত আরও দু’তিন জন নূরনগর বিশ্বাস বাড়ি, খুলনাতে নির্মমভাবে নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকা-কে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করার নিমিত্তে ওই রাতেই পুলিশী তদন্ত ছাড়া বিশ্বাস পরিবারের লোকজন লাশ দাফন করার অপচেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে তন্নীর পিতার পরিবারের বাধার মুখে লাশ দাফন করতে পারেনি এবং পরবর্তী সময় লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ঘটনার রাতে ও পরের দিন স্থানীয় খালিশপুর থানায় মামলা দায়েরের উদ্যোগ নিলে থানা মামলা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে খালিশপুর থানায় হত্যা মামলা রুজু হয় যার নম্বর ৫(৪) ১৫। এই মামলায় প্রধান আসামি মোঃ সোহেল বিশ্বাস ও তার বোন ইতি বিশ্বাস। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে খুলনার খালিশপুর থানাধীন নুরনগর বিশ্বাস পাড়ার আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাসের পুত্র মোঃ সোহেল বিশ্বাসের সাঙ্গে তন্নীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তন্নী সোহেলের একাধিক নারীঘটিত কেলেঙ্কারি, মাদকসেবনসহ নানা অপকর্মের কথা জানতে পারে। তাকে দুষ্কর্ম থেকে ভালপথে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করলেও সে তার কথায় কর্ণপাত করত না। বরং বিভিন্ন সময়ে সোহেল তাকে কারণে অকারণে নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত এবং কখনও কখনও মেরে ফেলার হুমকিও দিত। তিনি জানান, হত্যার ঘটনার তিন দিন পূর্বে সোহেল জরুরী প্রয়োজনে তাকে তিন দিন খুলনার বাইরে থাকতে হবে বলে খুলনা ছাড়ে। সোহেল বিশ্বাস দুশ্চরিত্র ও পরনারীতে আসক্ত থাকায় তন্নীর তখন সন্দেহ হয় এবং সে খোাঁজখবর করে জানতে পারে সোহেল অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে খুলনার বাইরে অবস্থান করছে। এরপর সে বাড়ি ফিরলে তাকে ওই বিষয়ে জানতে চায়। এতে সোহেল তাকে বেদমভাবে প্রহার করে আর এ কাজে তার বোন সহযোগিতা করে। নির্যাতনের খবর পেয়ে তন্নীর পরিবারের লোকজন ওই বাড়িতে গেলে জানানো হয় তন্নীকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, কিন্তু ততক্ষণে সে আর জীবিত ছিল না। এরপর বিশ্বাস পরিবার লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর না করে জোর করে বিশ্বাস বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন সকালে খালিশপুর থানার এস আই কমল কান্তি পাল ফোর্সসহ আসামিদের বাড়িতে আসে এবং তন্নীর মৃতদেহ আমার ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মোকাবেলায় মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মৃতদেহের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন। সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃতদেহের মাথা, বুক, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাধা গুরুতর আঘাতের চিহ্ন উল্লেখ আছে। খুলনা মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে তন্নীর ময়নাতদন্তের সময় বিশ্বাস পরিবারের পক্ষ থেকে নানা প্রকার অশুভ তৎপরতা ও তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ ও কর্মচারীদের হুমকি-ধমকি দেয়ার ঘটনা ঘটে। লাশ হস্তান্তরের পর একপ্রকার জোর করেই নিজস্ব ট্রাকে করে লাশ তন্নীর পিতার বাড়িতে না নিয়ে বিশ্বাস বাড়িতে নিয়ে যায়। সবকিছুকে জনসম্মুখে স্বাভাবিক করার প্রয়াসে উক্ত বাড়িতে লাশের গোসল, জানাযা ও দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও মামলাকে প্রভাবিত করা এবং বাদীর পরিবারকে হুমকি দেবার প্রতিবাদে মানবাধিকার সংগঠনগুলো খুলনায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে। পরবর্তীতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থানায় প্রেরণ করে। প্রতিবেদনে এটিকে আত্মহত্যামূলক ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। এর উপর ভিত্তি করে গত ৫ মে থানা আদালতে আসামি সোহেল বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট প্রদান করে। আশ্চর্যজনকভাবে আসামির সহযোগী তার বোনকে অভিযোগনামা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি সোহেল বিশ্বাস মারধরসহ নির্মম অত্যাচার করে ভিকটিমকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে, যা আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে আলোচিত এ হত্যাকা- সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আসামি পলাতক থাকে। এর কয়েকদিন পর মুন্সীগঞ্জ থেকে র‌্যাব-৬ আসামিকে গ্রেফতার করে। আদালতে পুলিশের অভিযোগপত্রের (চার্জশীট) বিরুদ্ধে আমি না-রাজি আবেদন করলে আদালত মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে সিআইডি আদালতে রিমান্ড চাইলে তা মঞ্জুর হয়, অন্যদিকে জেল কর্তৃপক্ষ সুস্থ-সবল আসামিকে অসুস্থ দেখিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। একটি আত্মহত্যায় মৃতের জিহ্বা বের হওয়া থাকে, হাত মুষ্টিবদ্ধ থাকবে ও পায়ের পাতা সামনের দিকে বেঁকিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা অবহিত করেন। এ মামলার পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনের সকল আলামত ও নিহতের ছবি দেখলে যে কেউ ধারণা করতে পারবেন যে এটি হত্যাকা-। তাই আসামিপক্ষের প্রবল প্রতিপত্তি ও অর্থের কাছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত হয়েছে এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তাছাড়া, বর্তমানে তারা মামলা তুলে নেবার জন্য আমাদের পরিবার ও আইনজীবীকে মারধরসহ হুমকি প্রদান করছে এবং পরিবহনখাতে ধর্মঘটের পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, আসামিও হাসপাতাল থেকে মোবাইলে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ও তার পরিবারের যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।
×