ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চেন্নাইয়ের নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মুক্ত জীবনে ফিরছে সাত তরুণী

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৩ জুলাই ২০১৫

চেন্নাইয়ের নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মুক্ত জীবনে ফিরছে সাত তরুণী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের আন্তরিকতায় নতুন জীবন পাচ্ছেন সাত তরুণী। দীর্ঘ দেড় বছর পর পরিবারের কাছে ফিরছেন তারা। দেড় বছর আগে এদের সীমান্ত পথে পাচার করা হয়েছিল। পাচারের পর তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল ভারতের চেন্নাইয়ের একটি পতিতালয়ে। পতিতালয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে তাদের ওপর। ভাষাগত পার্থক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তাদের জায়গা মেলে ভারতের একটি এনজিওর সেফ হোমে। সেই এনজিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি এনজিও, দুই দেশের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও হাইকমিশনের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়। তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের আন্তরিকায় মুক্ত জীবনে ফিরছেন ওই সাত তরুণী। শনিবার বিকেল তিনটায় ভারত থেকে বিমানযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরার কথা রয়েছে ওই সাত তরুণীর। বিমানবন্দরে তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাচারের শিকার তরুণীদের তরফ থেকে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। মামলা দায়ের না হলেও সিআইডির তরফ থেকে পাচারকারীদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে। আগামী রবিবার বনানীর একটি বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে ওই সাত তরুণীকে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সাত তরুণীকে ভাল চাকরি দেয়ার নাম করে সীমান্ত পথে ভারতে পাচার করে একটি মানব পাচারকারী চক্র। সুন্দরী সাত তরুণীর বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাদের মানবপাচারকারীরা টার্গেট করে। সাত তরুণী বাংলাদেশেই চাকরি করত। তাদের বেতন ছিল সাত থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে। পাচারকারীরা তাদের ভারতের চেন্নাইয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির লোভ দেখায়। ভাল চাকরি দেয়া বাবদ প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ থেকে একলাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করে। দাবিকৃত টাকা ভারতে যাওয়ার পর হুন্ডি বা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা বলা হয় মানবপাচারকারীদের তরফ থেকে। এমন প্রলোভনে স্বাভাবিক কারণেই পা দেন ওই সাত তরুণী। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে একে একে সাত তরুণীকে একত্রিত করা হয়। বাংলাদেশের মানবপাচারকারী চক্রটি তাদের বাংলাদেশÑভারত সীমান্ত এলাকার একটি বাড়িতে রাখে। এরপর সুযোগ বুঝে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশের মানবপাচারকারীরা তাদের বিক্রি করে দেয় ভারতের একটি মানবপাচারকারী চক্রের কাছে। ভারতীয় মানবপাচারকারীরা তাদের চেন্নাইয়ের একটি পতিতালয়ে মোটা টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকেই ওই সাত তরুণীর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ অনেকটাই বিছিন্ন হয়ে যায়। গত বছরের নবেম্বরের শেষ দিকে চেন্নাইয়ের পতিতালয়ে অভিযানকালে ভাষাগত পার্থক্যের কারণে ওই সাত তরুণী ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশ তাদের এমসিসিএসএস (মাদ্রাজ খ্রীস্টান কাউন্সিল ফর সোস্যাল সার্ভিস) নামের একটি এনজিওর সেফ হোমে রাখে। সেখানে ভারতের একটি টাস্কফোর্স সাত তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশী ও ভারতীয়দের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে টাস্কফোর্স। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে টাস্কফোর্স সাত তরুণীকে বাংলাদেশে পাঠানোর আগ পর্যন্ত ভারতীয় ওই এনজিওটির সেফ হোমেই রাখার কথা জানায়। সেই থেকে সাত তরুণী সেই সেফ হোমেই রয়েছে। এনজিওটি পতিতাদের নিয়ে কাজ করে এমন বাংলাদেশী এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে যোগাযোগ হয় লাইট হাউস নামের একটি বাংলাদেশী এনজিওর সঙ্গে। লাইট হাউস এনজিওর টিম লিডার নিকোলাস বিশ্বাস জনকণ্ঠকে জানান, ভারতীয় এনজিওর সেফ হোমে থাকার সময় তাদের সেলাইসহ নানা ধরনের হাতের কাজের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। সেখানে উদ্ধারকৃত তরুণীরা তাদের পাচার হওয়া থেকে শুরু করে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ একবছরের অমানবিক নির্যাতন আর জীবনযাপনের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। উদ্ধারকৃতরা নিজ দেশে ফেরত যেতে মরিয়া হয়ে উঠেন।
×