ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্টজনরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩ জুলাই ২০১৫

শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্টজনরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষ করে কওমী শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। আবার দেশে অর্ধ শতাধিক বিশ^বিদ্যালয় থাকার পরও প্রতিষ্ঠান চালাতে বড় অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। বাজেটে শিক্ষা খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ থাকলেও মান সম্মত শিক্ষা অর্জনে সেটি কোন কাজে আসছে না। এ জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষায় মান বাড়ানোর ওপর তাগিদ দিয়েছেন তারা। তবে মান বাড়ানোর জন্য বাজেটে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক কম দেয়ার অভিযোগ তুলে হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ । বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খাত ভিত্তিক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি খালেদা ইকরাম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়েক সেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কষ্টার্জিত রেমিটেন্স ১৫ বিলিয়ন এলেও চার বিলিয়ন ডলার বিদেশীরা চাকরি করে নিয়ে যাচ্ছে। সব বড় প্রতিষ্ঠানের হিসাব এবং গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দক্ষ লোকের সঙ্কটে বিদেশীদের মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরি দেয়া হচ্ছে। তাহলে বিশ^বিদ্যালয়ে কী পড়ানো হচ্ছে। আগে ব্যবসায় শাখায় একটি-দুটি বিষয় পড়ানো হলেও বর্তমানে অনেক খোলা হয়েছে। এর পেছনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। এ অর্থ ব্যয়ের কোন মানে নেই, যদি তা কোন কাজে না লাগে। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে অবৈতনিক পড়ানো হয় অথচ সেখানে যারা পড়তে আসে তাদের অনেকে বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে ক্লাসে আসে। পাশর্^বর্তী ভারত কিংবা পাকিস্তানে এত সস্তায় পড়ানো হয় না। সেখানে মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় করা হয় অথচ বাংলাদেশে সেটি চার থেকে পাঁচ শতাংশ। এ অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। এ জন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রীও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা খুব দুর্বল। শিক্ষার মান নিয়ে সব পর্যায়ে ভাববার সময় এসেছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে মানোন্ননের ওপর জোর দিতে বলেন। তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধে ফেসবুক, টুইটার বন্ধ করার কথা বলেছেন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিষয়টি সংযুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে বলে উলেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রার ৬ বছর আগেই সে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি। এটি একটি বিরাট সফলতা। এ জন্য দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের অবদান রয়েছে। উত্তরণের ইতিহাসে এটি টার্নিং পয়েন্ট। দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ উল্লেখ করে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বিনায়েক সেন বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে অর্থনীতিতে অবদান খুব কম। আগামী দিনে কারিগরি শিক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুই দশকে চার থেকে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে গেছি। সেখানে অদক্ষ শ্রমিকদের অবদান বেশি। তবে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছাতে হলে দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানও শিক্ষার নিম্নমান নিয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে পারিনি। তবে আমি মনে করি না শিক্ষকরা অনুপযুক্ত। এখন আমরা ইন্টার মিডিয়েট পাস শিক্ষকদের নেই। আমাদের কাছে যেসব ফাইল আসে তা দেখে স্বাক্ষর করতে গেলে মন্ত্রিত্ব থাকে না।’ তবে শিক্ষার মানের অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, আগের চেয়ে শিক্ষার মান অনেক বেড়েছে। মাধ্যমিকের ৫৩ শতাংশ মেয়ে। অনেক বড় বেতনে মেয়েরা চাকরি করছে। এসব বিষয় সব সময়ই উপেক্ষিত থাকছে। তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষার মান খারাপ উল্লেখ করে বাজেটে বরাদ্দ কম দেয়া হয়েছে। যা খুবই হতাশাজনক। এবার ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে অথচ বাজেটে শিক্ষা খাতে গত অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এমন মন্ত্রণালয়ও আছে যেখানে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যদি ঢাকা শহরে ভিক্ষা করি তাহলেও ৫৫ কোটি টাকা তুলতে পারব।’
×