ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ কাজ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার হবে উন্নয়নের বিশাল ক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩ জুলাই ২০১৫

কক্সবাজার হবে উন্নয়নের বিশাল ক্ষেত্র

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ তিনমাস ধরে বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার অবরোধ-হরতাল, আন্দোলন, নানা সমস্যার পাহাড় ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ঘটনা ইত্যাদি সব বাঁধা পেরিয়ে মহাজোট সরকারের সদিচ্ছায় অবশেষে আলোর মুখ দেখছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ শুভক্ষণের মধ্যদিয়ে কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটলো। এতে অত্যন্ত খুশি সৈকত রানী কক্সবাজারবাসী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন সময়ে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন বেসামরিক বিমান ও পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পশ্চিমা মহাদেশে ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন হার হবে কক্সবাজার। তাই কক্সবাজারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, কক্সবাজার হবে উন্নয়নের বিশাল ক্ষেত্র। কক্সবাজারকে উপলক্ষ্য করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মধ্য দিয়ে এর সূচনা হলো। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কক্সবাজার অনেক দিন অবহেলিত ছিল। আর তা হতে দেব না। ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে যে রূপরেখা তৈরি করেছেÑ তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবেই ইন্শাল্লাহ। তার অধিকাংশই ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঘুমধুম-দোহাজারী রেললাইন প্রকল্পও অচিরেই বাস্তবায়ন হবে। এর জন্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এখন শুধু শুরু করা। ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বাবার সঙ্গে ছুটিতে স্বপরিবারে বেড়ানোসহ কক্সবাজার ঘিরে নানা স্মৃতির কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শেষে বেসামরিক বিমান ও পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক, আব্দুর রহমান বদি, জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথসহ জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। জানা যায়, প্রথম ধাপের এ উন্নয়ন কাজের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৯ কোটি ৬৪ দশমিক ২১ লাখ টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সচেতন মহল জানান, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের কাজ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এখন থেকে বদলে যাবে কক্সবাজার। কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, কক্সবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পরিকল্পনা দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ জেলার প্রতিটি উন্নয়ন কাজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নিজেই তদারকি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন সরকার প্রধান। কক্সবাজার-২ মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা কথা দিয়ে কথা রাখেন। তাই তিনি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছেন এ জেলার দিকে। যার জলন্ত প্রমাণ এ সব উন্নয়ন কর্মকা-। সিভিল এ্যাভিয়েশন সূত্র জানায়, এপিপির আওতায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রথম পর্যায়ে রানওয়ে বর্ধিতকরণ ও প্রশস্তকরণের কাজ হবে। এর পাশাপাশি রানওয়ের পিসিএস বাড়ানো হবে। স্থাপিত হবে নতুন ভিওআর, ডিএমই ও আইএলএস, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড ও লাইটিং সিস্টেম। এছাড়া বিমানবন্দরের চারপাশের ভংগুর দেয়ালও মেরামত করা হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতার ছোট ছোট কাজগুলো শুরু হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের ভাঙ্গা অংশে নির্মিত হচ্ছে দেয়াল। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে কিছু কাজ চলতে দেখা গেলেও মূল কাজ শুরু হবে উদ্বোধনের পর থেকে। সূত্র জানায়, ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট হতে ৯ হাজার ফুট পর্যন্ত করা হবে রানওয়ে। পাশাপাশি রানওয়ের প্রস্থ বৃদ্ধি করে ১৫০ ফুট হতে ২শ’ ফুট করার কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি রানওয়ের পিসিএনও বাড়ানো হবে প্রয়োজন মতো। যেখানে স্থাপিত হবে নতুন ভিওআর, ডিএমই ও আইএলএস, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড ও লাইটিং সিস্টেম। এছাড়া প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন কাজে নতুন ভিওআর, ডিএমই ও আইএলএস, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড ও লাইটিং সিস্টেম স্থাপিত হবে। বর্তমানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হলে পর্যটন শহরের সঙ্গে পুরো বিশ্বের সম্পর্ক স্থাপিত হবে। পর্যটকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বড় বিমানগুলো সহজে এ বন্দরে অবতরণ করতে পারবে। ফলে কক্সবাজারের বাণিজ্যিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকার গণভবনের সেমিনার হল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ কাজের উদ্বোধন কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। কক্সবাজার বিমানবন্দর পার্কিং এলাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে সম্প্রতি বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, বন্যা দূর্গতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক যোগাযোগ ও দূর্গতের ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই দেশের প্রতিটি জায়গায় উন্নয়নে হাত দিয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হলে পর্যটন শহরের সঙ্গে পুরো বিশ্বের সম্পর্ক স্থাপিত হবে। পর্যটকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বড় বিমানগুলো সহজে এ বন্দরে অবতরণ করতে পারবে। ফলে কক্সবাজারের বাণিজ্যিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে বিশাল এলাকার ওপর উন্নতমানের ৪ তলাবিশিষ্ট ফ্ল্যাট বাড়ি (ভবন) তৈরি হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে। ইতোমধ্যে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। পুনর্বাসিত এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকালে তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত ছোট আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করে মানুষ মেরেছেন। তারা দেশকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে, নিবেও ভবিষ্যতে। এছাড়া, রামু বৌদ্ধ বিহারও তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমরা সেটিকে আরও আধুনিক দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী হয়ে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্পটি দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া। এটি এতোদিন কেন বাস্তবায়িত হয়নি আমার জানা নেই। তবে এবার আমরা ভূমি অধিগ্রহণের কাজও সম্পন্ন করেছি। শীঘ্রই দু’লাইনের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে কক্সবাজারের বাণিজ্যের দ্বার আরও উন্মোচিত হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিতিদেরকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বড় স্ক্রিনে দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও কক্সবাজার বিমানবন্দরে উপস্থিতিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেখেন। এর আগে অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করেন কক্সবাজার বিমানবন্দর জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা আতাউর রহমান। এরপর ঢাকার গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনাকারী পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বিমানবন্দরের কাজের বিবরণ দেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারী-বেসরকারী সংস্থার আওতায় প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্ধিতকরণ ও প্রশস্তকরণের কাজ করা হবে। পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩০ মাস। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুট করা হবে। প্রস্থ বাড়িয়ে ১৫০ ফুট থেকে করা হবে ২০০ ফুট। স্থাপিত হবে নতুন ভিওআর, ডিএমই, আইএলএস, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড ও লাইটিং সিস্টেম। প্রথম ধাপের এ উন্নয়ন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
×