ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থ জালিয়াতি, খেলাপী ঋণ

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৩ জুলাই ২০১৫

অর্থ জালিয়াতি, খেলাপী ঋণ

জনগণের আমানত নয়-ছয় করার ফলে ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অপরাধীদের রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। বরং এদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কাছে সংশ্লিষ্টরা যেন অসহায়। অক্ষমের আর্তনাদের মতোই শোনায় অসহায়দের ক্ষোভ। প্রতিকারের নেই তেমন কোন বিধিবিধান কিংবা কার্যকর উদ্যোগ। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক হতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। শুধু জালিয়াতি নয়, খেলাপী ঋণের বিস্তারও বাড়ছে। এর মাধ্যমেও হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব হচ্ছে। গায়েবকারীদের গায়ে সামান্য টোকাও দেয়া যাচ্ছে না। জালিয়াত ও ঋণ খেলাপীরা জনগণের অর্থ এভাবে লোপাট করে বিত্তে-চিত্তে এমনই বেড়েছে যে, টাকার জোরে তারা বশে আনে চারপাশ। তাদের দাপট ও প্রতিপত্তির কাছে রাষ্ট্রও যেন অসহায়। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও পরিচালনা পরিষদের যোগসাজশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকা গিলে ফেলা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার কোন সুরাহা হচ্ছে এমনটা দৃশ্যমান নয়। জড়িতদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না, যেহেতু এরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় লালিত-পালিত। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কয়েকজন জেল খাটছে। কিন্তু হোতাদের টিকিটিও স্পর্শ করা যাচ্ছে না। এমনকি তদন্তে এদের সংশ্লিষ্টতা যাতে অন্তর্ভুক্ত না হয় সেজন্য রাজনৈতিক চাপের মুখে তাদের রেহাই দেয়া হয়েছে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, দলীয় লোকদের কারণে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রী অবশ্য এও বলেছেন, এখন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে অতীতে এরকম পদক্ষেপ কেউ নেয়নি, সাহসও করেনি। হলমার্ক কেলেঙ্কারি সরকার ও ব্যাংকিং খাতে ইমেজ ক্ষুণœ করেছে। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, এজন্য ব্যাংক খাতে কিছুটা আস্থার সঙ্কট রয়েছে। শুধু জালিয়াতি নয়, খেলাপী ঋণের পরিমাণও বাড়তে বাড়তে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনকালে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা, যা গত ৬ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করা এখন প্রভাবশালীদের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গ্রামের মাতবর থেকে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি অনেকেই ঋণ পরিশোধ করেন না। এরা যখন যে দল বা জোট ক্ষমতায় থাকে তাদের সহযোগী হয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেন না। এই গোষ্ঠীকে দলে বা জোটের পক্ষে রাখতে গিয়ে জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকেও খেলাপীদের চাপ দেয়া সম্ভব হয় না ঋণ পরিশোধের জন্য। সরকার কেন অর্থ জালিয়াত ও খেলাপী ঋণের সঙ্গে জড়িতদের সমীহ করে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দলের প্রভাবে দুর্নীতি যখন ঘটে তখন সরকারের মুখে সুশাসনের কথা বায়বীয় ঠেকে নাকি। ব্যাংকের টাকা অবাধে লুটপাট বন্ধে এর কারণগুলো অপসারণ জরুরী। এর সঙ্গে জড়িত রাজনীতি ও দুর্নীতিও বন্ধ করতে হবে। কারণ জনগণের আমানতের টাকা নিয়ে ঋণ খেলাপীর নামে লুটপাট বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি লুটেরাদের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ জনগণেরও প্রত্যাশা।
×