ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মন্তব্য

চাকরিচ্যুত করায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছেচাকরিচ্যুত করায় আইনের শাসন প্রতিষ

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২ জুলাই ২০১৫

চাকরিচ্যুত করায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছেচাকরিচ্যুত করায় আইনের শাসন প্রতিষ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ যৌন নিপীড়ক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি যৌন নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন এবং দোষীদের শাস্তি কার্যকর করার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন তারা। বুধবার বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করায় তারা অনেক খুশি হয়েছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীও ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং একই অভিযোগে ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলামকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ঐ শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এসময় বিভাগটির শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করে। মানববন্ধন, প্রতিবাদ মিছিল, মশাল মিছিল, প্রতিবাদী নাটক প্রদর্শনী, উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পালন করেন। এদিকে ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সহিদ আকতার হোসেনকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিকে ৩১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐ শিক্ষকের কক্ষটিও সিলগালা করা হয়েছে। বিভাগটির শিক্ষার্থীরাও নাট্যকলা বিভাগের সাইফুল ইসলামের মতো ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতির দাবি জানিয়েছেন। নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র সাফওয়ান মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে, তীব্র রোদে পুড়ে আমরা আমাদের বোনের জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। ওই দোষী শিক্ষককে চিরস্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি করেছিলাম। অবশেষে আমাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে। শিক্ষক নামের কলঙ্ক সাইফুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেই, এটিই আমাদের পাওয়া। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম সব ভ- ও মুখোশধারী শিক্ষক নামক পাষ-কে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। একই বিভাগের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, এই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেকেই অনেক কথা বলেছিল। কেউ বলেছিল এটি বানানো, এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। আন্দোলন করে লাভ নেই। শিক্ষকদের কিছু হয় না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এরকম সিদ্ধান্ত সব সমালোচকের মুখে চপেটাঘাত করেছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের আন্দোলন বৃথা যায়নি। অনেক বাধা এসেছিল আামাদের আন্দোলনে, কিন্তু কোন কিছুই আমাদের প্রতিহত করতে পারেনি। আরেক ছাত্রী আফরিন হুদা তোরা বলেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও অনেক সময় কোন লাভ হয় না। আমরা অতীতে এ রকমটিই দেখেছি। তবে আমাদের বিভাগের ওই শিক্ষকের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ আশাবাদী ছিলাম। আমরা আন্দোলন করেছি, সফল হয়েছি। এজন্য অনেকটা স্বস্তি এসেছে আমাদের মধ্যে। আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম অনেক ঘটনার কথাই শোনা যায় তবে অনেক ছাত্রীই সাহস করে অভিযোগ করতে পারেন না। ওই ছাত্রী যে অভিযোগ করেছিলেন, তদন্তের মাধ্যমে তার সত্যতা মিলে যাওয়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াগুলোকে আরও দ্রুততর করার কথা বলেন তারা। এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্সে থাকবে। অপকর্মে যেই জড়িত থাকুক না কেন শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
×