ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যমুনার পেটে ॥ চৌহালী উপজেলা সদর

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ২ জুলাই ২০১৫

যমুনার পেটে ॥ চৌহালী উপজেলা সদর

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ যমুনার ভাঙ্গনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা পরিষদ এখন শুধুই স্মৃতি। গত বছরও এখানে ছিল উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাদ্য গুদামসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন অফিসের নানা স্থাপনা। কিন্তু এ বছর তার সামান্যতম চিহ্নও নেই। মানুষের কোন পদচারণাও নেই। যমুনা গ্রাস করেছে সকল দালানকোঠা, পুরো উপজেলা সদর এখন পানির নিচে। যমুনা নদীর পেটে। চৌহালীর ভাঙ্গনে সর্বশান্ত মানুষের বাকি ভিটেমাটি রক্ষায় সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত ২৪ জুন সরেজমিন চৌহালীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি চৌহালী উপজেলার অবশিষ্টাংশ রক্ষায় সরকার ৬৮০ কোটি টাকা কাজ বাস্তবায়ন করবে বলে এলাকার জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। এডিবি এবং নেদারল্যান্ডস্ সরকারের সহযোগিতায় আগামী অক্টোবর মাস থেকে প্রথম ধাপের ১২০ কোটি টাকার ৫ কিলোমিটার কাজ শুরু করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। গত বছর পানি উন্নয়ন বিভাগ, উপজেলা রক্ষার জন্য এডিবির অর্থায়নে ১শ’ ২০ কোটি টাকার এ প্রকল্প হাতে নেয়। চৌহালী উপজেলা সদর এখন যমুনার পানি নিচে, দেখে বোঝার উপায় নেই যে ক’দিন আগেও এখানেই ছিল বড় বড় দালান-কোঠা, যেখানে প্রতিদিন হাজারও মানুষ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো। এখন যমুনা পারে নদী ভাঙ্গা অসহায় মানুষের বুকফাঁটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। দূর-দূরান্ত থেকে কৌতূহলবশত প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আসছে যমুনার তা-বলীলা দেখতে। বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই, তা শুধুই স্মৃতি। এ বছর রাক্ষুসী যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেল চৌহালী উপজেলা পরিষদের সকল স্থাপনা। সেই সঙ্গে নদীর ভাঙ্গনে অসহায় মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। পানি উন্নয়ন বিভাগ, উপজেলা রক্ষার জন্য এডিবির অর্থায়নে ১শ’ ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখার আগেই উপজেলা পরিষদের মূল ভূ-খ- যমুনা গ্রাস করে মানুষকে সর্বশান্ত করেছে। এখন আমরা কি পরিচয়ে বেঁচে থাকবো এমনটাই প্রশ্ন উপজেলার পশ্চিম খাস কাউলিয়ার বয়োবৃদ্ধ চাঁন মিয়ার। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমাদের রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এলো না।। নিজের কোন ঠিকানাও থাকলো না। উপজেলা সদরের মুদি দোকানি সোহবার আলী (৬৫) বললেনÑ আমাগোরে এখন হাসপাতাল নাই, কোথায় যায়া চিকিৎসা নিমু। থানাও নাই, কোথায় গিয়া বিচার চামু। কি নির্মম যমুনা নদী! যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে প্রাণহীন হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী চৌহালী উপজেলা। নদী ভাঙ্গা হাজারও মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে ভাঙন ঠেকাতে পাউবোর উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর যমুনায় পানি বৃদ্ধির পর থেকে ক্রমাগতভাবে উপজেলা পরিষদের হেডকোয়ার্টারের অবশিষ্ট অংশ, শিক্ষা অফিস, এলজিইডি অফিস, ডাক বাংলো, পরিত্যক্ত কোর্ট বিল্ডিং, ২টি মসজিদ, থানা ভবন, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খাদ্য গুদাম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,আবাসিক কোয়ার্টার, ডক্টরস ডরমেটরিসহ প্রায় ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি, অসংখ্য গাছপালা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া পানি কমতে শুরু করায় আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। উপজেলা পরিষদসহ সরকারী অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৭শ’ পনের মিটার দৈর্ঘের বাঁধ নির্মাণ হলেও রক্ষা পায়নি উপজেলা হেড কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গত বছর বর্ষা মৌসুমে সদ্য নির্মিত ওই বাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট ধসে যায়। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, উপজেলা রক্ষার জন্য এডিবির অর্থায়নে ১২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব) অব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চৌহালী এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ার উপক্রম। এ অবস্থার জন্য পাউবো দায় এড়াতে পারে না। সঠিক নিয়মে কাজ করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না ।
×