ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মাইকেলের জীবনী মঞ্চে আনছি ॥ অনন্ত হীরা

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২ জুলাই ২০১৫

মাইকেলের জীবনী মঞ্চে আনছি ॥ অনন্ত হীরা

অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক অনন্ত হিরা। নাট্য নির্দেশনা ও অভিনয় দিয়ে মঞ্চকে আলোকিত করে রেখেছেন দীর্ঘদিন। অভিনয় জীবনে একাধিকবার মঞ্চে এনেছেন ব্যতিক্রমী নাটক। নিজের নাট্যসংগঠন প্রাঙ্গণেমোর বাংলাদেশে নিয়মিত রবীন্দ্র নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন প্রাণ সঞ্চার ও পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছেÑ এ কথা আজ দেশের নাট্যাঙ্গনে স্বীকৃত সত্য। সম্প্রতি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী নিয়ে ‘দাঁড়াও পথিক বর’ নামে একটি প্রযোজনার কাজ শুরু করেছেন। নতুন এ নাটক ও মঞ্চ নিয়ে কথা হয় শিল্পীর সঙ্গে। নতুন নাটক বিষয়ে জানতে চাই? অনন্ত হিরা : আমাদের দল থেকে এবার ৩টি নাটক মঞ্চে আনার পরিকল্পনা করেছি। এর মধ্যে ‘দাঁড়াও পথিক বর’ নাটকটির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। নাটকটি রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কুন্ডু এবং নির্দেশনা আমার। নাটকটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী নিয়েই রচিত। যার নামকরণ করা হয়েছে মাইকেলের এপিটাসের লাইন থেকে। মাইকেলকে নিয়ে নাটক কেন? অনন্ত হিরা : মাইকেল সম্পর্কে অনেকেই জানাশোনা। তার সাহিত্য, কবিতা সব কিছুই বহুদিন ধরে মানুষ জেনে আসছে। কিন্তু তিনি যে বাংলা নাটকের এক অনন্য রূপকারÑ এ কথা অনেকের জানা থাকলেও নাটকে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। বাংলা নাটকের ট্র্যাজিডিকে তিনি প্রথম তুলে ধরেছেন। মৌলিক, কমেডি এবং অনুবাদভিত্তিক সব রকম নাটকই তিনি রচনা করেছেন। তার সাহিত্য নিয়ে যেমন কাজ হয়েছে, নাটক নিয়ে তেমন হয়নি। এ কারণেই মাইকেলকে নিয়ে আমাদের এ নাটক মঞ্চে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে কারা অভিনয় করছেন? অনন্ত হিরা : সবে কাজ শুরু করেছি। ঈদের পর ফুল রিহার্সাল শুরু হবে। এতে ৩টি চরিত্র প্রধান। মাইকেল, বিদ্যাসাগর ও হেন্ড্রিয়েটা। মাইকেলের ভূমিকায় আমি অভিনয় করছি। অন্যরা অন্য ভূমিকায় আছে। আমরা খুব শীঘ্রই নাটকটি মঞ্চে আনব। নাটকে নতুন কী ম্যাসেজ থাকবে? অনন্ত হিরা : নাটকটি মূলত নাটকের মানুষদের ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা এনে দেবে। বাংলা ভাষার প্রথম নাটকের নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত অনেকেই জানেন না। আজকের যারা নাট্যজন তাদের আশি শতাংশ এ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না। আমরা সেই জায়গাকে স্পষ্ট করতে চাই। যাত্রায় একবার মাইকেলকে নিয়ে পালা রচিত হয়েছিল। যাত্রার গুরু অমলেন্দু বিশ্বাস মাইকেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তারপর আর তাঁকে নিয়ে মঞ্চে বা অন্য কোথাও নাটক রচিত হয়নি। এক প্রকার দায়বদ্ধতা থেকে মনে করি মাইকেলকে নতুন করে নাট্যাঙ্গনে তুলে ধরা উচিত। সেভাবেই নাটকটি মঞ্চে আনার চেষ্টা করছি। মঞ্চের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আপনার বক্তব্য কী? অনন্ত হিরা : মঞ্চের অনেক কাজ হচ্ছে। দর্শক সঙ্কট দেখা দিয়েছে এটা স্বীকার করতে হচ্ছে। রাজধানীর কথাই ধরা যাক। নাট্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু শিল্পকলা একাডেমি। মানসম্মত নাটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কারণে দর্শক কষ্ট করে মিলনায়তনে নাটক দেখতে আসছে না। ফলে প্রতিনিয়ত দর্শক হারাচ্ছি আমরা। এর থেকে উত্তরণের পথ কী? অনন্ত হিরা : সচেতন সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের যেমন দায়বদ্ধতা আছে, তেমনি নাট্যাঙ্গনে যারা আছেন তাদেরও দায়বদ্ধতা কম নয়। নাটক উপযোগী মঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চ তৈরি করে নতুন নতুন নাটক দর্শকদের উপহার দিতে হবে। মানসম্মত ভাল নাটক তৈরি করা জরুরী। যেটা দেখে দর্শক আবার মঞ্চাভিমুখী হবেন। মঞ্চ নাটকে কি ধরনের প্রতিকূলতা বিরাজমান? অনন্ত হিরা : পুরোটাই প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। আমাদের দেশে এখনও উন্নতমানের মঞ্চ গড়ে ওঠেনি। নাটক নির্মাণ করতে গেলে যে সাজ-সরঞ্জাম লাগে বলতে গেলে তার কোনটাই আছে বলে মনে হয় না। সরকারী ও বেসরকারীভাবে কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এখন আমাদের দেশে অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি হয়েছে তাদের কাছে মঞ্চ নাটকের জন্য স্পন্সর চাইলে তারা দিতে চান না। অথচ অন্য ব্যাপারে তারা অনেক সাহায্য করে থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মঞ্চ নাটকের গুরুত্ব কেমন? অনন্ত হিরা : আমাদের সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মঞ্চ নাটক। দেশে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা সমাজটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে- এটা রাজনীতিকরা বোঝেন না কিংবা বুঝতেও হয়ত চান না। আমার ধারণা সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সাম্প্রদায়িক হামলা হলো, যদি সেসব স্থানে একটি করে নাটকের দল থাকত সেখানে হয়ত এ ধরনের হামলা হতো না। বর্তমান পরিস্থিতিতে মঞ্চ নাটকের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনার চলচ্চিত্রের খবর কী? অনন্ত হিরা : আপনারা জানেন ‘ও আমার দেশের মাটি’ নামে আমার একটি চলচ্চিত্র এথনও দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলছে। আমি বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে দেখেছি দর্শকরা পছন্দও করছেন। আমার নতুন একটি চলচ্চিত্রের কাজ চলছে। ‘আমি কোথায় পাব তারে’ নামের এ চলচ্চিত্রটির রচনা, চিত্রনাট্য ও নির্দেশনা আমার। লালনের এক শিষ্য গগন হরকার বিখ্যাত গানের লাইন নিয়ে আমার এ চলচ্চিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। যে গানটির সুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক আমার চলচ্চিত্রে এটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। -গৌতম পাণ্ডে
×