ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের ড্রামে কোকেন-নানা রহস্য!

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২ জুলাই ২০১৫

চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের ড্রামে কোকেন-নানা রহস্য!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দরে ভোজ্যতেলের সঙ্গে অবৈধ পথে আসা কোকেনের চালান নিয়ে সন্দেহ দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সূর্যমুখী ব্র্যান্ডের ১০৭ ড্রাম বোঝাই ভোজ্যতেল এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে। এর একটি ড্রামে রয়েছে প্রায় ১৬৫ কেজি কোকেন। তাও আবার ভোজ্যতেলের সঙ্গে মিশ্রিত। আটক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এ ঘটনার নেপথ্যে যা প্রকাশ করা হয়েছে সবই রহস্যঘেরা। আর এ কোকেনের গডফাদার কে বা কারা তা এখনও অজানাই রয়ে গেছে। এ ঘটনায় ২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে চার। একজন চট্টগ্রাম থেকে ও অবশিষ্ট তিনজন ঢাকা থেকে। যার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জাল করে ভোজ্যতেলের এ চালানটি আনা হয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী গ্রুপের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ এ মামলার আসামি হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন। তার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল অফিসের কাগজপত্র জাল করে লন্ডন প্রবাসী দুই বাংলাদেশী ও এক ভারতীয় নাগরিকের যোগসাজশে তিনি ভোজ্যতেলের চালানটি এনেছেন বলে স্বীকার করলেও কোকেন আনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তথ্য দিয়েছেন। ইতোমধ্যে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তিন। এরা হলেন গার্মেন্টস পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ম-ল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান খান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক একে আজাদ এবং গোলাম মোস্তফা নামের একজন। গুলশান-বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এদের চট্টগ্রামে আনার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম ঢাকায় গেছে। আজ বৃহস্পতিবার তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসার কথা। এদিকে প্রথম গ্রেফতারকৃত গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অবশিষ্ট যে ৩ জনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এদেরও রিমান্ডে আনার আবেদন করা হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে এ চারজনকে সম্মিলিতভাবে আবার এককভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করে আসল তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে। এ পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্যের মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেলের সঙ্গে একটি ড্রামে মিশ্রিত অবস্থায় কোকেন এসেছে। এর পরিমাণ কত এখনও নির্ণয় করা যায়নি। এছাড়া পুরো চালানটি এসেছে কোন ধরনের এলসি ছাড়াই। সঙ্গত কারণে রহস্য দানা বেঁধেছে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যে ক’টি স্তর রয়েছে এর কোনটিই এক্ষেত্রে প্রতিপালিত হয়নি। ফলে নানা জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে যে কোন পণ্যের চালান আনা যায় কিনা তা নিয়ে। আবার যে কোন ধরনের পণ্য রি-এক্সপোর্ট হওয়ার সুযোগ আছে কিনা। আর যদি সে সুযোগ থাকে তাহলে সরকারী সংস্থাগুলোর এসব তৎপরতা সফলতা কোথায়। আর যদি না থাকে তাহলে এ পণ্য এলো কিভাবে? আবার যাবার কথা বা কিভাবে আসে? এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী অবৈধ পথে আসা এ কোকেন ভারতের কলকাতা হয়ে উত্তর আমেরিকার কোন দেশে যাওয়ার কথা ছিল। প্রশ্ন উঠেছে এটা আদৌ সম্ভব কিনা। এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু সন্দেহ রয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত গডফাদার কে বা কারা তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হবে কিনা তা নিয়ে। কেননা, এ ধরনের একটি অবৈধ তরল মাদক আটকের পর তড়িঘড়ি করে ৫৪ ধারায় মামলা করার রহস্য কোথায়। আবার শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে পাশ কাটিয়ে পুলিশের পক্ষে তড়িঘড়ি করে মামলা দায়েরের হেতু কি। এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুলিশ এটা আগ বাড়িয়ে করেছে। মূল মামলা করবে তারা। অথচ হয়েছে উল্টো। এদিকে মামলাটি ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে। প্রথম পর্যায়ে মামলার আইও করা হয় বন্দর থানার এক এসআইকে। এখন নতুন তদন্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের এক সহকারী কমিশনারকে। ঢাকায় গত মঙ্গলবার তিনজনকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলন করেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ডিজি। এখন তদন্ত শুরু করবে গোয়েন্দা পুলিশ। এ দুই সংস্থার এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডে শেষ পর্যন্ত তদন্তের ফল কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এ তরল কোকেন চালানের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানকারী কোন বাংলাদেশী বা দেশে অবস্থানকারী কারা সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত তাদের পরিচয় জানা এবং গ্রেফতার করা যাবে কিনা। এ পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে এদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে এ পর্যন্ত নিশ্চিত করা হলেও নেপথ্যের গডফাদার কে বা কারা তা জানার সুযোগ ঘটবে কিনা তা নিয়ে ঔৎসুক্য মহলে ইতোমধ্যে দানা বেঁধেছে।
×