ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভিড় বাড়ছে শাড়ির দোকানে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো রুচির দিক থেকে এগিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২ জুলাই ২০১৫

ভিড় বাড়ছে শাড়ির দোকানে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো রুচির দিক থেকে এগিয়ে

রহিম শেখ ॥ ঈদ উপলক্ষে নারী ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে শাড়ির দোকানগুলোতে। ভিন্নধর্মী নকশা, চোখ ধাঁধানো রং আর মনকাড়া কারুকাজের শাড়িগুলো নজর কাড়ছে নারীদের। বিশেষ করে এবার ঈদে ঐতিহ্যবাহী ও ভারি কাজের শাড়ির প্রতিই নারীদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। বিক্রেতারা জানান, এ পর্যন্ত ভারতীয় বিভিন্ন কাতান শাড়িই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির তালিকায় এগিয়ে আছে আদি জামদানি। ভরা বর্ষায় ঈদ উদযাপনে গরম ও বৃষ্টির কথা মাথায় রেশে দেশীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এনেছে হালকা ও আরামদায়ক শাড়ি। আধুনিকতার সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উৎসব পালনে তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন জর্জেট, শিফন ও সিল্কের কাপড়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরাবরের মতো কাঞ্জিভরম, পঞ্চমকলি, অপেরা কাতান, কাঁঠাল কাতান, আলাপ কাতান, ভোমকা কাতান, খাদি কাতান, শিফন, ক্র্যাফট, জর্জেটসহ বিভিন্ন নামের ভারতীয় শাড়ির দখলে এ দেশের বাজার। শাড়ি আমদানিকারকরা জানালেন, এবার ঈদ বাজারকে লক্ষ্য রেখে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার শাড়ি আমদানি হয়েছে। বিক্রেতারা বললেন, ঈদের বেচাকেনা এখনও জমে ওঠেনি। বিক্রেতাদের মতে, ভারতীয় শাড়ির প্রতি এ দেশের ক্রেতাদের দুর্বলতা থাকলেও আগে এর বাজার ছিল সীমিত। কিন্তু গত এক দশকে বাংলাদেশে ভারতীয় শাড়ির বাজার বড় হয়েছে কয়েকগুণ, একই সঙ্গে ভারতীয় শাড়ির চাহিদা তৈরি হয়েছে সব শ্রেণী ক্রেতার মাঝেই। রাজধানীর সবচেয়ে বড় শাড়ির বাজার এখন মিরপুরে। রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই এখানে ভিড় বাড়ছে। তবে বেচাকেনা সেভাবে বাড়েনি বলে বিক্রেতারা জানান। বেনারসিপল্লীকে কেন্দ্র করেই এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল শাড়ির বাজার। এখানে দেশে উৎপাদিত বেনারসি শাড়ির পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় শাড়ি। বিভিন্ন শাড়ির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শাড়িগুলোতে এমব্রয়ডারি ও ডলার ব্যবহার করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে শাড়িতে ব্লক ও কারচুপির কাজ বেশি দেখা গিয়েছিলে। এবারের ঈদ বাজারে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে সুতি ও সিল্ক শাড়ি। আর জামদানির দাম পড়বে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এবারের ঈদ উপলক্ষে মসলিন শাড়িতে করা হয়েছে বির্টস, দপকা, জরি কম্বিনেশনে হাতের কাজ। জামদানি শাড়িতে করা হয়েছে পাল্স, বিটস দিয়ে হাতের কাজ। এছাড়া আছে শিপন ও জর্জেট শাড়ি। গরমের কারণে শাড়ির রং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হালকা রং। গরমের কারণে শাড়ির রং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হালকা কালার। গোলাপি, বেগুনি, হালকা নীল, জলপাই, এ্যাশ, অফহোয়াইট কালার ব্যবহার করা হয়েছে শাড়িতে। মসলিন শাড়ির দাম পড়বে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, জামদানি, জর্জেট ও শিপন শাড়ির দাম পড়বে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সুতি, সিল্ক, হাফসিল্ক ও মসলিন শাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে ঈদ উৎসবের রং। ডিজাইনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এ্যাপ্লিক, সুতার কাজ, কারচুপি, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্টসহ নানা মাধ্যম। তবে এবারের শাড়ির বাজারে দামটা বেশ চড়াও বলেছেন এমন অনেক ক্রেতা। আর তা স্বীকার করলেন অনেক বিক্রেতাই। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের জ্যোতি শাড়ির ম্যানেজার মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে বলেন, উৎসবের মৌসুমে সব ধরনের ভারি কাজের শাড়ির প্রতিই ক্রেতার আগ্রহ থাকে। তবে এ মৌসুমে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কাতান শাড়িগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, এবার লেহেঙ্গা কম বিক্রি হলেও লেহেঙ্গ স্টাইলের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই আবার পার্টি শাড়ি খুঁজছেন। বসুন্ধরার জামদানি শাড়ি কুটিরের বিক্রেতা সাইফুল আহমেদ জানান, তার দোকানে সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের জামদানি শাড়ি রয়েছে। বেচাকেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার দামী শাড়ির প্রতি ক্রেতার ঝোঁক কম। বিক্রি এখনও জমে ওঠেনি। বসুন্ধরা শপিংমলে ৪র্থ তলায় শালিমার শাড়ির শোরুমে কথা হয় ধানম-ি থেকে আসা ক্রেতা সোনিয়া ইসলামের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ঈদের জন্য তিনি ভারতীয় বেঙ্গল কাতান শাড়ি কিনেছেন। তার মতে, উৎসবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাব ফুটিয়ে তুলতে কাতান শাড়ির বিকল্প নেই। এ ছাড়া নগরীর ধানম-ি হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, কর্নফুলী গার্ডেন সিটিসহ বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানে এবার জামদানি, কাতান, সিল্ক, হাফসিল্ক ও বেনারসি শাড়ির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন নারীরা। গরমের কথা মাথায় রেখে এবার শাড়িতে অল্প ডিজাইন ও হালকা রংয়ের কাজগুলো কমই প্রাধান্য পেয়েছে। তবে হাতের কাজের গর্জিয়াস শাড়িও আছে প্রচুর। এবার শাড়ির দোকানগুলোতে আকর্ষণীয় শাড়ির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে মসলিন শাড়িতে অলওভার কাজও। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদে চাহিদাসম্পন্ন শাড়ি হচ্ছে ‘চেন্নাই কাতান’ ও ‘বেঙ্গল কাতান’। এ শাড়ির আঁচলে ভারি কাজের পাশাপাশি সারা গায়ে হালকা কাজের সঙ্গে ভারি কাজও থাকছে। এর মূল্য ৫ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। ভরা বর্ষায় হবে এবার ঈদ উৎসব। ঋতুর চাহিদায় আর উৎসবকে মাথায় রেখে তুলনামূলক উজ্জ্বল রঙের শাড়ি বেছে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর শাড়িতেও লাল, কালো, নীল ও সবুজ রংকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শাড়ির মধ্যে রয়েছে জামদানি, টাঙ্গাইল ও পাবনার তাঁতের শাড়ি এবং মিরপুরের কাতান। টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি এক হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা, রাজশাহী সিল্ক চার হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা এবং সুতি শাড়িতে ব্লক, বাটিক, হাতের কাজ ও এ্যাপ্লিক করা এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে। তবে ঈদকেন্দ্রিক শাড়ির বাজার এখনও ভারতীয় শাড়ির দখলে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। চরকা ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী জাভেদ কামাল জানান, গরম এবং বৃষ্টিকে মাথায় রেখে এবারের শাড়ির ডিজাইন করা হয়েছে। শাড়িতে আনা হয়েছে নানা কাটিং ভেরিয়েশন। কন্ট্রাক্ট এবং কালারের কম্বিনেশন এবার চোখে পড়ার মতো। হাফ সিল্কের সঙ্গে এন্ডি, আবার সুতির সঙ্গে এন্ডি মিলিয়ে ডিজাইনে নতুনত্ব আনা হয়েছে। রং হিসাবে প্রধান্য পেয়েছে সবুজ, টিয়া, পেস্ট, গোলাপি, বেগুনি, কালো ইত্যাদি রং। ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে মিশ্র মাধ্যম ও প্যাচ ওয়ার্ক। দাম পড়বে ১২০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো যদিও নিজেদের ফ্যাশনে ও মননে যুগোপযোগী করে তুলতে সচেষ্ট। কখনও সম্পূর্ণ দেশি ঢঙে, আবার কখনও ভিনদেশী ফ্যাশনের ধারার সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি করছে ক্রেতা চাহিদার শাড়ি। কিন্তু দামে ভারতীয় শাড়ি তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় সেদিকেই ক্রেতারা ঝুঁকছেন বেশি। আজিজ সুপার মার্কেটে রয়েছে আরও কিছু শাড়ির দোকান। নবরূপা, দোয়েল সিল্ক, মনে রেখ শাড়িসহ বিভিন্ন দোকানে চলছে ক্রেতার যাওয়া-আসা। নগরদোলা এনেছে বৈচিত্র্যময় কিছু শাড়ি। আর যাদের বাজেট একটু বেশি তারা যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটি ও পিঙ্ক সিটিতে। এখানে শাড়ি রয়েছে ৬০ হাজার পর্যন্ত দামেরও। স্মোক শিফনের শাড়ি, ধুপিয়ান কাতান, অপেরা জুট কাতান, গাদোয়ান কাতান, গাদ্দি কাতানসহ বিভিন্ন শাড়ি ক্রেতারা পছন্দ করছেন এবার। ফ্যাশনে জামদানি শাড়ির প্রচলন সব সময়। ডেমরার জামদানি কুটিরে ঘিরে রঙের জমিনে জরির হাতের কাজের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩২ হাজার টাকায়। টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরে তসরের ওপর জামদানি কাজের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। এ ছাড়াও মসলিনে জরির কাজের শাড়ি, ভেজিটেবল ডাইংয়ের শাড়ি ৩ হাজা টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে। অঞ্জন’স-এর স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার শাহীন আহম্মেদ বলেন, এবার রাজশাহী সিল্ক, কটন, এন্ডি সিল্ক, হাফসিল্ক, মসলিন, তাঁত কটনসহ বিভিন্ন কাপড়ে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, কাঁথা স্টিচ, বিভিন্ন ম্যাটারিয়ালের কাজ করা হয়েছে। তবে এবার এম্ব্রয়ডারির প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বেশি। বেশিরভাগ শাড়িতে একাধিক মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। নিজস্ব বুনন ডিজাইনে তঁাঁতের শাড়ি করা হয়েছে। বয়স ও উৎসবকে মাথায় রেখে শাড়ি ডিজাইন বিন্যাস করা হয়েছে। এসব শাড়ির দাম পড়বে সুতি ১০০ থেকে ৫ হাজার টাকা, সিল্ক ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, মসলিন ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, হাফসিল্ক ২৫ শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা।
×