ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১২ জেএমবি জঙ্গী ধরতে এবার শুরু ‘সার্চ অপারেশন-১২’

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২ জুলাই ২০১৫

১২ জেএমবি জঙ্গী ধরতে এবার শুরু ‘সার্চ অপারেশন-১২’

শংকর কুমার দে ॥ অভিযানের নাম ‘সার্চ অপারেশন-১২’। এই অভিযানের নাম ও পরিচালনার বিষয়টি গোপন। এটা পরিচালনা করছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির দুর্ধর্ষ ১২ জঙ্গীকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযানটির নামকরণ করা হয়। মোস্ট ওয়ান্টেড ১২ জঙ্গী বিভিন্ন কারাগারে আটক জেএমবির জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিছুতেই তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তাদের কাছে আছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমার সরঞ্জাম মজুদ। নাশকতা করে আটক জেএমবি জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয় তারা। এই ১২ জঙ্গীর নেতৃত্বে প্রিজনভ্যানে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে ছিনিয়ে নিয়েছিল ৩ জেএমবির জঙ্গীকে। ছিনিয়ে নেয়ার পর মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জেএমবির দুর্ধর্ষ দুই জঙ্গী মিজান ও সালেহীন এখনও পলাতক। গত দেড় বছরেও গ্রেফতার করা যায়নি তাদের। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জঙ্গী বহনকারী প্রিজনভ্যানে ফিল্মি কায়দায় হামলা করে জেএমবির জঙ্গীরা। প্রিজনভ্যানের ভেতর থেকে ৩ জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার সময়ে জঙ্গীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও বোমাবাজিতে এক পুলিশ নিহত ও প্রিজন ভ্যানের পুলিশ গুরুতর আহত হয়। প্রিজনভ্যানের তালা ভেঙে ও হ্যান্ডকাফের চাবি কেড়ে নিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গীরা। এ সময় তাদের গুলিতে গুরুতর আহত হন পুলিশের এসআই হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল সোহেল রানা ও আতিকুল ইসলাম। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার পুলিশ সদস্য আতিকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করে। পরে পলাতক ও ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যেসব জঙ্গী প্রিজনভ্যান থেকে সহযোগী জঙ্গীদের ছিনতাই করে তারা খুবই দুর্ধর্ষ। তারপর ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গী ও ছিনতাইকারী জঙ্গীদের মধ্যে যারা খুবই দুর্ধর্ষ তাদের বাছাই করে তালিকা তৈরি করা হয়। এই বাছাই করা দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের গ্রেফতারের জন্য তালিকা করে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সার্চ অপারেশনের তালিকায় যে ১২ দুর্ধর্ষ জঙ্গীর নাম এসেছে তারা হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গী কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সি, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, নাদিম, ময়েজ। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে প্রিজনভ্যানে হামলা চালায় সার্চ ১২ জঙ্গী। প্রিজনভ্যানে গুলি ও বোমা হামলা করে কর্তব্যরত পুলিশ হত্যা করে তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। ছিনিয়ে নেয়া সাজাপ্রাপ্ত তিন জঙ্গী বোমারু মিজান, সালেহীন ও রাকিবকে। পুলিশের সার্চ অপারেশনে পলাতক জঙ্গী রাকিব ধরা পড়লেও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রাকিব। এরপরও বাকি দুই জঙ্গী ধরতে পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযান চলতে থাকে। অব্যাহত অভিযানের পরও দীর্ঘ ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশের পক্ষে পলাতক দুই জঙ্গীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১২ জেএমবি জঙ্গীর নেতৃত্বাধীন জেএমবির জঙ্গী দলটি। ছিনিয়ে নেয়ার দেড় বছর পরও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এমনকি তারা কোথায় তাও হদিস করা যায়নি। আত্মপোপনে থেকে তারা আবারও তাদের সহযোগী কারাবন্দী ছিনিয়ে নেয়ার কোন পরিকল্পনা করছে কিনা সেই বিষয়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর যখন জেএমবির জঙ্গীরা তাদের সহযোগী দ-প্রাপ্ত ৩ জঙ্গীকে আদালতে হাজির করার সময়ে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয় তখন সার্চ অপারেশন-১২ নাম দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সার্চ অভিযানে ছিনিয়ে নেয়া ৩ জঙ্গীর মধ্যে এক জঙ্গী ধরা পড়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। অপর ২ জঙ্গী এখনও পলাতক এবং জঙ্গী ছিনতাইকারী দলের সদস্যরাও পলাতক। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গী বর্ডার পার হয়ে ভারত বা অন্য দেশে পালিয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। জঙ্গীরা পলানোর পর নানারকম রূপ ধারণ করে। পলাতক রাকিব দাড়ি কেটে অন্য বেশে পালানোর চেষ্টা করলেও পরে সে ধরা পড়ে। পলাতক জঙ্গীরাও তার মতোই পোশাক-আশাক, দাড়ি-গোঁফ কেটে পরিবর্তিত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। তবে জঙ্গী বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকায় পলাতকরা যে কোন দিন গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
×