ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া পেট্রোল রফতানি করবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২ জুলাই ২০১৫

গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া পেট্রোল রফতানি করবে বাংলাদেশ

রশিদ মামুন ॥ দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবার পেট্রোল রফতানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করায় এর সহজাত হিসেবে কনডেনসেটের উৎপাদনও বাড়ছে। কনডেনসেট প্রক্রিয়া করে উৎপাদিত পেট্রোল দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সম্প্রতি পেট্রোল এবং কনডেনসেট রফতানির অনুমতি চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানির পদক্ষেপ নেয়া হবে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, রফতানি করা না গেলে মূল্যবান এসব পেট্রোলিয়াম পণ্য পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর রফতানি করা গেলে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কনডেনসেটের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মজুদ করা সম্ভব নয়। এজন্য মাঝে মাঝে গ্যাস উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ তেল রফতানি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির অপেক্ষা করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। দেশে এখন পেট্রোবাংলার অধীন তিনটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) এবং বেসরকারী পর্যায়ে ১০টি প্ল্যান্ট কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন (প্রক্রিয়া) করছে। দেশে উৎপাদিত কনডেনসেটের পূর্ণ মাত্রায় ফ্রাকশনেশন করতে হলে বেসরকারী কোম্পানিগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য জ্বালানির বিক্রি নিশ্চিত এবং সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশের গ্যাসক্ষেত্র তিন লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন কনডেনসেট উৎপাদন হয়েছে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আর চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ হবে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। দেশের ১৪টি কেন্দ্রে এই বিপুল পরিমাণ কনডেনসেট পরিশোধনের সুযোগ থাকলেও দেশের বাজারে কনডেনসেট থেকে পরিশোধিত এ পরিমাণ পেট্রোল ও অকটেন ব্যবহারের সুযোগ নেই। জানা গেছে, সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে ১৪টি প্রতিষ্ঠান কনডেনসেট পরিশোধন করে পেট্রোল ও অকটেন তৈরি করছে। এর মধ্যে সরকারের চারটি পরিশোধন কেন্দ্র এসজিএফএল, বিজিএফসিএল, আরপিজিসিএল ও ইআরএল মিলিয়ে তিন লাখ ২৮ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন কনডেনসেট পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সরকারের এ চারটি প্রতিষ্ঠান গত এপ্রিল পর্যন্ত দুই লাখ ১১ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন পরিশোধন করছে। অন্যদিকে ১০টি বেসরকারী কোম্পানির ক্ষমতা রয়েছে সাত লাখ ২৪ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক। তবে তারা গত এপ্রিল পর্যন্ত পরিশোধন করছে দুই লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন। জানা গেছে, এখন দেশে দৈনিক গড়ে এক হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন কনডেনসেট উৎপাদিত হয়। তবে এখন দৈনিক এক হাজার থেকে এ হাজার ১০০ মেট্রিক কনডেনসেট পরিশোধন করছে। বাকিটা পুড়িয়ে ফেলতে হচ্ছে। যাতে করে দৈনিক ৩০ শতাংশ মূল্যবান এই পেট্রোলিয়াম পণ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়। সম্প্রতি দেখা গেছে আশুগঞ্জে কনডেনসেট ট্যাংকারে ধারণক্ষমতা প্রায় ৭১ হাজার মেট্রিক টন। এ পরিমাণ কনডেনসেট এখানে প্রায় সব সময় মজুদ রাখতে হচ্ছে। ফলে বিবিয়ানা থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট সেখানে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে কনডেনসেট বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই ক্ষেত্রের দুটি লিকুইড রিকভারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গ্যাসের উৎপাদনও এক্ষেত্রে কমে যায়। জানা গেছে, দেশে পেট্রোল, অকটেন এবং জেট ফুয়েলের চাহিদা না থাকায় বেশিরভাগ সময়ে অবিক্রিত থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারী প্ল্যান্টের ফ্রাকশনেশনে উৎপাদিত পেট্রোলিয়াম পণ্যই অবিক্রিত থেকে যায়। দেশের চাহিদা না বৃদ্ধি পেলে অথবা বিদেশে রফতানিরর সুযোগ না থাকায় বেসরকারী কোম্পানিগুলো কনডেনসেট নিতে চায় না। জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বলা হয়েছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্রাকশনেশন ক্ষমতার সমান কনডেনসেট নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে গ্যাস ফিল্ডে কনডেনসেট জমে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে গ্যাসের উৎপাদনও বিঘিœত হচ্ছে। অনেক সময় মূল্যবান এই পেট্রোলিয়াম পণ্য পুড়িয়ে ফলতে হচ্ছে। একই বৈঠকে বেসরকারী উদ্যোক্তারা জানায়, চাহিদা কম থাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তাদের কাছ থেকে এসব জ্বালানি তেল কিনতে চায় না। দিনের পর দিন উৎপাদিত পণ্য পড়ে থাকছে। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলো লোকসান ঠেকাতে কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণ থেকে বিরত থাকছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি কোম্পানির উৎপাদিত পেট্রোল ও অকেটন অবিক্রিত থাকার কথাও বলা হচ্ছে ওই বৈঠকে। ফলে তাদেরও মাঝে মাঝে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি পেট্রোবাংলাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নানা সময়ে পেট্রোবাংলাকে বলে আসছে। জ্বালানি বিভাগের সচিব মোঃ আবুবকর সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চেয়ে যে সারসংক্ষেপ প্রেরণ করেছে তাতে বলা হয়েছে দেশে কনডেনসেট ফ্রাকশনেশনের পরিমাণ বাড়ছে এবং গ্যাস ফিল্ডের কনডেনসেট উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু ওই হিসেবে দেশে পেট্রোলের চাহিদা বাড়ছে না। এ অবস্থায় পেট্রোবাংলার তরফ থেকে জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে উদ্বৃত্ত পেট্রোল এবং কনডেনসেট রফতানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। জ্বালানি সচিব প্রধানমন্ত্রীকে আরও জানান, দেশে উৎপাদিত কনডেনসেট জি টু জি (সরকার টু সরকার) মাধ্যমে অথবা দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিদেশে রফতানির করা যেতে পারে। চিঠিতে বলা হয় গ্যাসের ও সহজাত কনডেনসেট পরিশোধন করে পেট্রোল, অকেটন ও জেট ফুয়েল, সামান্য ডিজেল এবং কেরোসিন তৈরি হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল পরিমাণ পেট্রোল, অকেটন ও জেট ফুয়েল ব্যবহারের সুযোগ নেই। যদিও ডিজেল এবং কেরোসিনের দেশে চাহিদা রয়েছে। সঙ্গত কারণে পেট্রোল অথবা কনডেনসেট রফতানির অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। গ্যাসের উৎপাদন ঠিক রাখতে হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
×