ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিক টেক্সটাইলের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২ জুলাই ২০১৫

চিক টেক্সটাইলের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানি চিক টেক্সটাইলের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ১৯৯৬ সালে চিক টেক্সটাইলের শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই মামলায় আসামিরা একাধিকবার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর এটাই প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানা। অভিযুক্তরা হলেন- চিক টেক্সটাইলের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাকসুদুর রসূল ও মোঃ ইফতেখার মাহমুদ। রাজধানীর পুরানা পল্টনের হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরশেন ভবনে অবস্থিত পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর ২৮ জুন এ পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কারসাজির আমলে চিক টেক্সটাইলের পরিচালক ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাকসুদুর রসূল ও ইফতেখার মোহাম্মদ। ওই বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তারা চিক টেক্সটাইলের শেয়ারের দর বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কর্মকা করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ১৯৯৭ সালের ২ এপ্রিল বিএসইসির ওই সময়ের নির্বাহী পরিচালক এম এ রশীদ খান বাদী হয়ে তদন্তের সকল প্রমাণসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বাদী হয়ে মামলা (মামলা নম্বর-১০৮২) দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৬ সালে চিক টেক্সটাইলের মোট শেয়ারের সংখ্যা ছিল ৭৮ লাখ ৪০ হাজার। আর প্রতিটি শেয়ারের অবহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা। ওই বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত চিক টেক্সটাইলের প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৯ টাকা। কিন্তু পাঁচ মাসের ব্যবধানে ওই শেয়ারটির দর ৪৪ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ টাকায়। ওই সময়ে শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছিল না। তবে এর মধ্যে আগস্ট মাসে শেয়ারটির দর নেমে আসে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ারটির দর ছিল ৯ টাকায়। এর পর আবার ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দর ৬ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ টাকায়। তার এক মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর শেয়ারটির দর অস্বাভাবিকভাবে ২৮ টাকা বেড়ে অবস্থান নেয় ৪২ টাকায়। এর ১৬ দিন পর অর্থাৎ ১৬ নবেম্বর শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ৫৩ টাকায় চলে যায়, যা জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান। তার পর থেকে শেয়ারটির দরপতন শুরু হয়। শেয়ারটির ক্রমাগত দরপতনে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তা ১৮ টাকায় নেমে আসে। এভাবেই শেয়ারটির দর কৃত্রিমভাবে উঠানো হয় এবং পরে তা পড়ে যায়। বিএসইসি এ ঘটনার কারণ তদন্ত করে জানতে পারে, চিক টেক্সটাইলের মোট ৭৮ লাখ ৪০ হাজার শেয়ারের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূলের কাছে ছিল ৮ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৪টি শেয়ার। আর মোঃ ইফতেখার মোহাম্মদের কাছে ছিল ৮ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার, যা কেনাবেচা করার মাধ্যমে তারা বাজারে কৃত্রিম প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন। বিএসইসির মতে, অভিযুক্তদের এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারা লঙ্ঘনের শামিল। ফলে তাদের বিরুদ্ধ ওই অধ্যাদেশের ২৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি শেয়ার কেনাবেচা করার মাধ্যমে সুবিধা নিতে পারবেন না। যদি কেউ (ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) এ ধারা লঙ্ঘন করে তাহলে অধ্যাদেশের ২৪ ধারা অনুযায়ী ন্যূনতম পাঁচ বছরের কারাদ অথবা ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা অর্থদ করা যেতে পারে। এদিকে মঙ্গলবার মামলাটির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির দিন ছিল। কিন্তু বাদীপক্ষ উপস্থিত হলেও বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ও আসামি কেউই উপস্থিত হননি। তবে বাদীপক্ষ উপস্থিত থাকলেও তাদের এ মামলা পরিচালনার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি না থাকায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন জানানো হয়। পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে তা ২ জুলাই চার্জ গঠনের জন্য নির্ধারণ করেন। বাদীপক্ষের (বিএসইসি) সিনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিমের পক্ষে আইনজীবী এস এম রফিকুল ইসলাম সময়ের আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর শেষে আইনজীবী এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, এ মামলাটি ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারীর মামলা। আমাদের জোরালো প্রচেষ্টায় এ মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। তবে বাদীপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিমের শারীরিক অসুস্থার কারণে এখন মামলাটি পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে গত ২৫ জুন বিএসইসিকে মামলা পরিচালনা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলী বলেন, এ ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত কোন কাগজ হাতে পাইনি। কাগজ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×