ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প জ্বালানি

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২ জুলাই ২০১৫

বিকল্প জ্বালানি

বাংলাদেশে জ্বালানির মূল উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। এ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদনে, সার কারখানায়, বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় এবং গৃহস্থালির কাজে। গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে দ্রুতগতিতে। এ অবস্থায় গ্যাসের বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের। রবিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান মজুদ গ্যাস আরও ১৬ বছর ব্যবহার করা যাবে। একই সময়ের মধ্যে ধীরে ধীরে গ্যাসের সরবরাহও কমে যাবে। জ্বালানি শক্তি হিসেবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পের জন্য এটি সতর্কতামূলক বার্তা। বিষয়টি বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যও ইঙ্গিতবাহী। প্রথমত সব বিকল্প ব্যবস্থার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা দরকার। দ্বিতীয়ত নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের বিষয়টিও বাদ দেয়া যাবে না। তৃতীয়ত গ্যাস ব্যবহারে আরও সাশ্রয়ী হতে হবে। বহু আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়ে আসছিলেন বড় ধরনের জ্বালানি সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। প্রধান জ্বালানি গ্যাসের প্রমাণিত মজুদের অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে স্থলভাগে উল্লেখ করার মতো কোন মজুদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এখনও তেমন সুখবর মেলেনি। ভূতাত্ত্বিকরা সুসংবাদ দিতে পারেননি বটে। তারা বলেছেন, নতুন করে স্থলভাগে বড় মজুদ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় গ্যাস মজুদ বাড়াতে সারা দেশে বড় ধরনের জরিপ চালানো দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়ে এসেছেন। বাপেক্স-এর পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানি দিয়ে অফশোর ও অনশোরে ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধান চালানোর কথাও উঠে এসেছে প্রসঙ্গক্রমে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে যে চরম ঝুঁকিতে পড়বে খাতটি, তাতে সংশয় নেই। তাই বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে ব্রতী হওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। বিশ্বের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকে নানা গবেষণা চালিয়ে আসছেন নিরাপদ বা উত্তম জ্বালানির উৎসের সন্ধানে। তারা অপ্রচলিত কিছু জ্বালানির উৎসের সন্ধানও পেয়েছেন। সৌরশক্তি, বায়োফুয়েল ইত্যাদি এর প্রকৃত উদাহরণ। কয়লা, কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোল ইত্যাদি জ্বালানির উন্নত মাধ্যমে হলেও তা পরিবেশের জন্য কম-বেশি ক্ষতিকর। বিজ্ঞানীরা বর্তমানে গ্যাস-হাইড্রেট নিয়ে নানা গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বলছেন, সমুদ্রের তলদেশে থাকা এ গ্যাস হাইড্রেট হতে পারে ভবিষ্যত জ্বালানির অন্যতম উৎস। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রায় এক হাজার বিলিয়ন টন পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট সঞ্চিত রয়েছে সমুদ্রতলের গভীরে কিংবা মেরু অঞ্চলের পারমাফ্রস্টের মধ্যে। সঙ্গত কারণেই ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এই বিশাল জ্বালানি সম্পদ। বিকল্প জ্বালানির উৎস হিসেবে সমুদ্রের ওপর আমাদের আশা হারানোর তাই কোন কারণ থাকতে পারে না। তবে ২০০৯ সাল থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হলেও বড়পুকুরিয়ার বাইরে নতুন কোন খনি উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। এদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সারা পৃথিবীতেই এখন নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা বা লাতিন আমেরিকার মতো দেশগুলোতে এখনই বেশ বড় আকারে শক্তি উৎপাদনের উৎস হচ্ছে বায়ু প্রবাহ, সৌরশক্তি এবং বায়োগ্যাস। আমাদের দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার থাকলেও বায়ু প্রবাহ, বায়োগ্যাস, হাইড্রোজেনসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নেই বললেই চলে। এ সম্ভাবনার দিকটি মনে রাখতে হবে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌর শক্তির রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। আশার কথা, সরকার এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে, প্রতিমাসে প্রায় ৮০ হাজার পরিবারের ঘরে সোলার প্যানেল বসছে। জ্বালানির মজুদ কমে আসার ফলে আগামী এক যুগের মধ্যেই আমাদের ব্যাপকভাবে নবায়নযোগ্য ও বিকল্প শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
×