ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেনাপোল কাস্টম হাউসে ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১ জুলাই ২০১৫

বেনাপোল কাস্টম হাউসে ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ বিদায়ী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে যে পরিমাণ রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছে, তা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছে বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছে, বন্দরে শুল্ক ফাঁকি, ঘুষ, দুর্নীতি আর নানা অনিয়ম না থাকলে রাজস্ব আদয়ের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেত। অন্যদিকে বেনাপোল কাসম হাউস কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যা না থাকলে সদ্য সমাপ্ত এই অর্থবছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে তা ছাড়িয়ে কম পক্ষে ৫শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেত। বেনাপোল কাসম হাউস সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সর্বমোট ২ হাজার ৫১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী এই অর্থবছরের ২৯ জুন পর্যন্ত কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ সর্বমোট ২ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ জুন পর্যন্ত ৯১ দশমিক ২১ কোটি টাকা বেশি। কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, প্রতিদিন কাস্টম কর্তৃপক্ষ এখান থেকে ১১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় করে। কাস্টম সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রাজস্বের লক্ষ্য ছিল ২১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয় ১শ’ ৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এছাড়া আগস্টে ১৭৭ কোটি ৮০ লাখের বিপরীতে ২শ’ ২ কোটি ৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ২১০ কোটি ৮৭ লাখের বিপরীতে ২৩৭ কোটি ৫৭ লাখ, অক্টোবরে ১৯৯ কোটি ৪ লাখের বিপরীতে ১৬৫ কোটি ৩৪ লাখ, নবেম্বরে ১শ’ ৯৪ কোটি ৫৪ লাখের বিপরীতে ২শ’ ১৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ১শ’ ৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয় ১শ’ ৯১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া জানুয়ারিতে ২শ’ ১৪ কোটি ৭৭ লাখের বিপরীতে ১শ’ ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ১শ’ ৯৫ কোটি ৬৭ লাখের বিপরীতে ১শ’ ৮৭ কোটি ২০ লাখ, মার্চে ২শ’ ৩ কোটি ২০ লাখের বিপরীতে ২শ’ ৩২ কোটি ৮৭ লাখ, এপ্রিলে ২শ’ ২৯ কোটি ৬১ লাখের বিপরীতে ২শ’ ৪৩ কোটি ৩১ লাখ, মে মাসে ২শ’ ২৪ কোটি ৭ লাখের বিপরীতে ২শ’ ৮৮ কোটি ৪২ লাখ এবং জুন মাসে টার্গেট ছিল ২শ’ ৫৭ কোটি ৬৫ লাখ। এর বিপরীতে ২৯ জুন পর্যন্ত আদায় হয় ২শ’ ৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কাস্টম সূত্র জানায়, দেশের সর্ববৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোলে ধীরে ধীরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের গতি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। চোরাচালান রোধসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারলে রাজস্ব কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে আমদানি হওয়া অধিকাংশ পণ্যই আসে স্থলবন্দরটি দিয়ে। তবে এই বন্দরে রয়েছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ব্যবহার না করে অন্য বন্দরে চলে গেছে। অন্যদিকে, কাস্টমসের এ রকম হয়রানির পরও বেনাপোলের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি রোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেন না। বেনাপোলের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান ব্যবসায়ী সংগঠনের অনেক নেতা তাদের নিজেদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ আছে। বিশেষ করে বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে বেনাপোলের এক ব্যবসায়ী জানান, মফিজুর রহমান সজন সংগঠন পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তবে এ রকম অভিযোগ অস্বীকার করে বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ক্লিয়ারিং হাউস চালু হলে এই কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন জানান, এ বন্দর দিয়ে কাঁচা ফলমূল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ, বেনাপোল স্থলবন্দরের নানা বিড়ম্বনা, অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ, ইকুইপমেন্ট সমস্যা, চুরি রোধসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে রাজস্বও। এদিকে বেনাপোলের অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যশোর বেনাপোল সড়কের আমড়াখালী এলাকায় বিজিবি চেকপোস্ট বসিয়ে বৈধ আমদানিকারকদের নানাভাবে হয়রানি করে। এ ব্যাপারে সিএ্যঅন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশন যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারপরও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। বেনাপোল কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থার পরেও আমরা সদ্য সমাপ্ত এই অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ জানান, রাজস্ব আহরণে বেনাপোল কাস্টম হাউসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। যদিও বন্দরে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে।
×