ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষার্থীরা যখন গিনিপিগ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১ জুলাই ২০১৫

শিক্ষার্থীরা যখন গিনিপিগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তার অজ্ঞতা হোক আর মতভেদই হোক, এর মাসুল দিতে হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা বোর্ডের সুপারিশ, এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির পদক্ষেপ নেয়া হয়, যা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। যদিও পদ্ধতিটি একেবারেই নতুন কিংবা আনকোরা নয়। তথ্যপ্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা না থাকার পরও প্রথমবারই এভাবে সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইনে যুক্ত করতে গিয়েই ভর্তির ক্ষেত্রে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইনে আবেদন করতে পারেনি আরও সোয়া লাখ এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী। আর যার অজ্ঞতার কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি সেই তিনিও দায় স্বীকার করেছেন এই অবস্থার। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের আইসিটি খাতের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এই পদ্ধতিতে ভর্তির উদ্যোগ এর আগে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রচেষ্টায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ লাঘব করে। যুগোপযোগী ইতিবাচক পদ্ধতিটি ঢাকাসহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু করেনি। কারণ এতে আয় কম হয়। বরং ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোটি কোটি টাকা আয় করে আসছে। পরীক্ষিত এই পদ্ধতিটি কলেজ পর্যায়ে শুরুতেই হোঁচট খাবে এমন ভাবনাও কেউ করেননি। কিন্তু ঘটেছে তাই। টানা চার দিন ধরে দফায় দফায় তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত রবিবার গভীর রাতে প্রকাশ করা হয় তালিকা। ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটায় ক্লাস শুরুও পিছিয়ে গেছে। চার দিনেও ভর্তির তালিকা প্রদানের মতো কাজটি সম্পন্ন করতে না পারার বিষয়টি আসলেই অচিন্তনীয়। এই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সার্ভারের ধারণক্ষমতার অভাব, বিপুল ডাটা হ্যান্ডলিংয়ে অনভিজ্ঞ, বুয়েট ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কাজে সমন্বয়হীনতা, বেসরকারী যে কোম্পানিটি কাজ পায়নি তারা সাইট কয়েক দফা হ্যাক করেছে বলে বলা হচ্ছে। এসব কারণও হয়ত দায়ী এই অনভিপ্রেত বিড়ম্বনার জন্য। আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে তথ্যপ্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা না থাকার পরও প্রথমবারেই এভাবে সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইনে আনার চিন্তাটা ছিল ভুল। তাই অজ্ঞতার মাসুল দিতে হচ্ছে। আর সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে সরকারকে। শিক্ষামন্ত্রী একসঙ্গে সারাদেশে অনলাইনে ও এসএমএসে ভর্তির বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ভর্তি নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন না দিয়ে মন্ত্রণালয়ের নথিতে লেখেন- যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্বল, পশ্চাৎপদ এবং শিক্ষার্থী পায়নি তাদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আগামীতে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেখার বিষয় যেখানে এখন পর্যন্ত দেশের উল্লেখযোগ্য কলেজগুলোর নিজস্ব কোন ওয়েবসাইট নেই, সেখানে এমন সিদ্ধান্তের অর্থ জানা নেই। দেশের ১২ লাখ শিক্ষার্থী কেন ভুক্তভোগী হবে ব্যক্তি বিশেষের অর্বাচীন ভূমিকার জন্য সে কৈফিয়ত দেয়ারও কেউ নেই। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে এমন হেলাফেলা না করে প্রয়োজন অভিজ্ঞ তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সহযোগিতা নিয়ে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানানোর পথ ও পন্থা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে- এটাই সবার কাম্য।
×