ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছরে সহস্রাধিক কিশোরী যুবতীর ঠাঁই ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১ জুলাই ২০১৫

পাঁচ বছরে সহস্রাধিক কিশোরী যুবতীর ঠাঁই ভারতের  নিষিদ্ধ পল্লীতে

শংকর কুমার দে ॥ গত প্রায় পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হয়েছে সহস্রাধিক কিশোরী-যুবতী। পাচার হওয়া এসব কিশোরী-যুবতীর ঠাঁই হয়েছে ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে। বাংলাদেশের এই নারী পাচারের হোতা হচ্ছে সাহিম নামের এক ব্যক্তি। তার সহযোগী হচ্ছে সেলিম। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ টাস্ক ফোর্স বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ টাস্ক ফোর্স বৈঠকে আলোচনা হবে কিশোরী-যুবতী পাচার হয়ে ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে ঠাঁই পাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ টাস্ক ফোর্স সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, গত বছরের ৬-৭ এপ্রিলে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ টাস্ক ফোর্সের চতুর্থ বৈঠকটি। ২০১২ সালের ৮-১০ এপ্রিলে টাস্ক ফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতায়। জুন মাসে হওয়ার কথা ছিল পঞ্চম বৈঠকটি। অনিবার্য কারণে তা পিছিয়ে জুলাইয়ে ধার্য করা হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার জন্য এ্যান্টি হিউমান ট্রাফিকিং ইউনিটের তথ্যাবলী তৈরি করা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাচার হওয়া কিশোরী-যুবতীদের কেউ চট্টগ্রাম, কেউ খুলনা, কেউ ভোলা আবার কেউ বরিশালের, আবার কেউবা ঢাকার রূপগঞ্জ, কেউ সিদ্ধিরগঞ্জর। সূত্র জানান, ভারতের সিআইডির এ্যান্টি হিউমান ট্রাফিকিং ইউনিট তদন্ত করে যে রিপোর্ট তৈরি করেছে সেই রিপোর্টের আলোকে দেখা গেছে, গত চার-পাঁচ বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে কিশোরী-যুবতী পাচার হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। আলোচ্য সময়ে সহস্রাধিক কিশোরী-যুবতীকে পাচার করা হয়েছে। এই পাচারের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাহিম ও তার সহযোগী সেলিমকে। ভাল কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে নারী পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। তদন্তে পাওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১৪ নবেম্বর হাওড়ার শ্যামপুর থানায় নারী পাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় দুই বাংলাদেশী তরুণীর সঙ্গে উদ্ধার হয়েছিল কলকাতার গিরিশ পার্কের এক কিশোরী। পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে সবাই সাহিমের লোকজন। বাংলাদেশ থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করে গোটা পাচারচক্রটি পরিচালনা করত সাহিম। পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাঠ, বনগাঁ, স্বরূপনগর, গাইঘাটা, হাবড়া, ক্যানিং, গোসাবা, কুলতলি, ডায়মন্ডহারবার, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, মালদহের লোকজন জড়িত আছে পাচারকারী চক্রের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ছেড়ে গুজরাট, আহমেদাবাদ, মহারাষ্ট্রের পুনে ও দিল্লীর লোকজনও পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র জানান, বাংলাদেশ-ভারত টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে যেসব কিশোরী-যুবতী উদ্ধার হয়েছে এবং দায়ের করা মামলাগুলোর তথ্যাবলী নিয়ে আলোচনা হবে। যেসব মামলা ও উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত হয়েছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাহিম ও তার সহযোগী সেলিমের নাম ওঠে এসেছে। ২০১২ সালের ৮-১০ এপ্রিলে কলকাতায় যে দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছিল যে, ৫৫৬ জন বাংলাদেশের পাচারকারী ও ৬১৪ জন দালালের নাম ঢাকাকে দেয়া হয়। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাহিম ও তার দলবলের নাম। তাদের কয়েকজনের মোবাইল ফোনের নম্বরও দেয়া হয়। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ টাস্ক ফোর্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই টাস্ক ফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কুখ্যাত সাহিম ও তার দলবল এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও এখন যদি তারা ধরা পড়ে তবে নারী পাচারের ঘটনা অনেক কমে আসবে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কিশোরী-যুবতীসহ নারী পাচারের অনেক অজানা ঘটনা জানা যাবে।
×