ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি মেঘমল্লারের প্রদর্শনী ও আলোচনা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১ জুলাই ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি মেঘমল্লারের প্রদর্শনী ও আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্র মেঘমল্লার। বরেণ্য কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প রেইনকোট অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ছবিটি। চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন। মঙ্গলবার চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছবিটি নিয়ে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে ‘চিন্তাশৈলীর পারঙ্গমতায় চলমান সমাজ (চিপাচস)’। মঙ্গলবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। ছবিটি প্রদর্শনের পরপরই শুরু হয় আলোচনা। এতে চিপাচসের ৪১তম আলোচনার ছবি মেঘমল্লার নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্র পরিচালক আব্দুল লতিফ বাচ্চু, শফিউজ্জমান লোদি, চলচ্চিত্রটির পরিচালক জাহিদুর রহিম অঞ্জন এবং চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক মাহ্মুদা চৌধুরী প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন চিপাচসের সভাপতি সুশীল সূত্রধর ও সাধারণ সম্পাদক জিয়া খোন্দকার। একাত্তরের বিভীষিকাময় প্রেক্ষাপটে মেঘমল্লার ছবিটি নিয়ে মুক্তালোচনায় উঠে আসে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্ষার টানা তিন দিনের কাহিনী নিয়ে রচিত আক্তারুজ্জামানের ‘রেইনকোট’ গল্পটি। আালোচনার সূত্র ধরে জানা যায়, শুরুতে এই চলচ্চিত্রের নামও রাখা হয় রেইনকোট। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মেঘমল্লার। এ প্রসঙ্গে পরিচালক জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, রেইনকোট’ নামে ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র রয়েছে। সে কারণেই পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটির নাম পরিবর্তন করা হয় । সরকারের জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানের সহায়তায় এবং বেঙ্গল এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি পরিবেশনা করেছে বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, অপর্ণা ঘোষ, আমিনূর রহমান মুকুল, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও শিশুশিল্পী মারজান হোসাইন জারা প্রমুখ। নাট্যশালায় মঞ্চস্থ দুই নাটক ॥ মঙ্গলবার আষাঢ়ের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হলো দুটি নাটক। নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের সাম্প্রতিক প্রযোজনা না-মানুষি জমিন। অন্যদিকে অন্যদিকে স্টুডিও থিয়েটার হলে ত্রিংশ শতাব্দী নাটকটি পরিবেশন করে স্বপ্নদল। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে না-মানুষি জমিন। প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফ সুমন। ভূমিহীন মানুষের জীবনের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে নাটকের গল্পে। একদল নারী-পুরুষ আর শিশুকে ধরে আনা হয় সীমান্তে। তাদেরকে ঠেলে দেয়া হবে ওই পারে। সুযোগ বুঝে গভীর রাতে সীমান্তরক্ষীরা তাদের ঠেলে দিল নো-ম্যান’স ল্যান্ড বা না-মানুষি জমিনে। কিন্তু ওপারের সীমান্তরক্ষীরাও প্রস্তুত। কাউকে তারা তাদের সীমানায় ঢুকতে দিল না, রুখে দাঁড়াল সঙ্গিন উঁচিয়ে। প্রচ- শীত আর কুয়াশার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে আটকা পড়ে রইল একদল মানবসন্তান। একজন গর্ভবতী নারীও রয়েছে এই দলে। কুয়াশার চাদরের নিচে সন্তান প্রসব করে মৃত্যুবরণ নারীটি। নো-ম্যান’স ল্যান্ডেই পড়ে রইল সেই মানবশিশু। কী তার দেশ? কী তার পরিচয়? এখন কী হবে ওই শিশুটির? এপার ওপার কেউই তার দায়িত্ব নেয় না। এমনই গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে নাটকটি। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুজন রেজাউল, প্রশান্ত হালদার, হাসনাত প্রদীপ, রিয়াজ হোসেন, সৈয়দ অলক, তানিয়া চৌধুরী, শাহনাজ শানু, সুমন মজুমদার, পিয়ার মোহাম্মদ, মোকাদ্দেম মোরশেদ, মাহফুজ সুমন, নূরুজ্জামান বাবু, জায়েদ হোসেন, আকিব প্রমুখ। ঠান্ডু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় নাটকের পোশাক পরিকল্পনা করছেন রোকেয়া রফিক বেবী। সেলিম মাহবুবের সঙ্গীত পরিকল্পনায় কোরিওগ্রাফি করছেন মোকাম্মেল হোসেন রিপন। নাট্যদল স্বপ্নদলের যুদ্ধবিরোধী গবেষণাগার প্রযোজনা ত্রিংশ শতাব্দীর ৭০তম মঞ্চায়ন হলো মঙ্গলবার। বাদল সরকারের রচনা অবলম্বনে আলোচিত ও দর্শকনন্দিত প্রযোজনাটির রূপান্তরের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। সম্প্রতি নয়াদিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি) অনুষ্ঠিত এশিয়ার বৃহত্তম নাট্যায়োজন ভারতের জাতীয় নাট্যোৎসব ‘ভারত রঙ মহোৎসব-২০১৫’-এ নির্বাচিত হয়ে ত্রিংশ শতাব্দীর প্রশংসিত মঞ্চায়ন করে স্বপ্নদল। যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ উপস্থাপিত হয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনীতে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অনভিপ্রেত বিষাদময় পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, গাজা-কুয়েত-সিরিয়া-তিউনিসিয়া-ইয়েমেন-মিয়ানমারে সাম্প্রতিক বর্বরতা প্রভৃতি প্রসঙ্গ। নাটকে নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ-যুদ্ধাপরাধী-অশান্তিকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কর্মের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে। সভ্যতা ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এক্ষেত্রে দর্শককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি স্থাপনই ত্রিংশ শতাব্দী প্রযোজনার প্রত্যাশা। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুয়েনা শবনম, ফজলে রাব্বী সুকর্ন, সামাদ ভূঞা, শিশির সিকদার, আমজাদ শরীফ, মোস্তাফিজুর রহমান, মাধুরী বেপারী সুমি, জেবুন নেসা, সাইদুল ইসলাম, রেজাউল মাওলা, মেহেদী রানা, তানভীর শেখ, জাহিদ রিপন প্রমুখ।
×