ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবপাচার

সমস্যাটি গোটা বিশ্বের- স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ॥ আমার প্রমাতামহও পাচারের শ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ জুলাই ২০১৫

সমস্যাটি গোটা বিশ্বের- স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ॥ আমার  প্রমাতামহও পাচারের শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবপাচার এখন গোটা পৃথিবীর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মানবপাচারের ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। মানবপাচার রোধে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন। মানবপাচার রোধে আইনের কঠিন প্রয়োগ ও পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার শেষ করা হবে। এজন্য ‘ন্যাশনাল প্ল্যান অব এ্যাকশন’ নামে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মানবপাচার রোধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে সেমিনারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট মানবপাচারে ক্ষতিগ্রস্ত তার পরিবারের কথা উল্লেখ করে বলেন তার প্রমাতামহ মানবপাচারের শিকার হয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতি জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। মানবপাচারের মতো অপরাধীদের প্রতি কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। মানবপাচার সম্পর্কিত মামলাগুলোর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কাজ চলছে। মানবপাচারকারীদের সতর্ক করে দিয়ে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। মানবপাচারের পাশাপাশি মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত পাওয়া গেলে কেউ ছাড় পাবে না। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মানবপাচার রোধে সরকার কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিদেশে পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জাহাজগুলোকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও জেলেদের পরিচয়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অতিথি ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, স্বররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব মোঃ শহিদুল হক, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দার প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দিয়েছে ইউএসআইডি ও উইন্ডো ইন্টারন্যাশনাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোহাম্মদ রহতুল মুনিম ‘ন্যাশনাল প্ল্যান অব এ্যাকশন’ নামে মানবপাচার রোধে যে কাজ শুরু হয়েছে সে বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মানবপাচার রোধে আমাদের চলমান প্রতিশ্রুতিকে আজকে আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের সঙ্কটময় সময়ে আজ আমরা এক সঙ্গে বসতে পেরেছি। মানবপাচার রোধে আমি সর্বোচ্চ জোর দিয়ে বলতে পারি যে এই মুহূর্তে জরুরী ভিত্তিতে আমাদের সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হাজার হাজার মানুষকে জনাকীর্ণ অবস্থায় নৌকায় ছেড়ে আসার দ্বারা যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাতে আমরা সকলেই ক্ষুব্ধ। আমি নিশ্চিত যে, এসব মানুষ ও তাদের পরিবারের যন্ত্রণা ও অসহায়ত্ব আমাদের সকলকে স্পর্শ করেছে। তাদের এ ঘটনা আমাদের একটি পরিষ্কার বার্তা দেয়Ñ মানবপাচার রোধে আমাদের আরও সমন্বিত, কঠোর ও কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। বার্নিকাট বলেন, এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা হয়ত ধারণা করতে পারবেন না সমস্যাটি কত মানুষকে ভুগিয়েছে। ব্যাপারটি আমার ব্যক্তিগত। আমার প্রমাতামহ মানবপাচারের স্বীকার হয়েছিলেন। ১৯শতকে মিশ্র জাতীয় শিশু হিসেবে তিনি শিনেকক নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের পূর্বদিকে আমেরিকান আদিবাসী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে শিশু অবস্থায় একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবারে চুক্তিভিত্তিক দাস হিসেবে দিয়ে দেয়া হয়। যেখানে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক বছর ধরে ধোয়া-মোছার কাজ ও গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন। দুঃখজনকভাবে আজ মানবপাচার ও দাসত্ব চলছে, তবে তার ধরন আগের তুলনায় অনেক ব্যাপকতা পেয়েছে। শ্রমিক পাচার, যৌনতার উদ্দেশ্যে মানবপাচার, ভিক্ষুক পাচার, শিশু যোদ্ধা ও অন্যান্য নিঃগৃহীত শ্রমে মানবপাচার হচ্ছে। মানবপাচার প্রতিরোধ বিশেষ ধরনের জটিল সমস্যা। বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধের মতো এটি কোন একটি দেশ, একটি সংস্থা, অথবা কোন একটি সরকারের মন্ত্রণালয় দমন করতে পারে না। এর উৎপত্তি, মাধ্যম এবং গন্তব্য দেশগুলোকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মানবপাচার মোকাবেলা শুধু সরকারের একার পরিসরের মধ্যে পড়ে না। এ প্রচেষ্টায় সমাজের সব স্তরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এটা খুবই উৎসাহজনক যে বাংলাদেশের সরকার এবং সুশীল সমাজ এই সহযোগিতার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। মানবপাচার রোধ ও সুরক্ষা এবং মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সমষ্টিগত উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এ পর্যন্ত অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখতে পুনরায় অনুরোধ করছি। মানবপাচার মোকাবেলায় ‘ন্যাশনাল প্ল্যান অব এ্যাকশন’ এ বিষয়ে সঠিক পথের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। আমি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই মানবপাচার মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারের ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য। আমরা বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর, বিচার বিভাগ এবং ইউএসএআইডির মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়ে যখন ‘ন্যাশনাল প্ল্যান অব এ্যাকশন’ তৃতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা আমাদের অংশীদারকে এ কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে চাই। আমরা জানি মানবপাচার প্রতিরোধ একটি অসম্ভব কঠিন ও জটিল কাজ। কিন্তু মানবপাচার প্রতিবেদন ২০১৪ প্রকাশনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমরা জেনেছি যে এই অপরাধ বিশ্বের প্রতিটি দেশকে আক্রান্ত করে, আমাদেরসহ। আমরা এর বাইরে নই। ন্যূনতম দুই কোটিরও বেশি মানুষ মানাবপাচারের ভুক্তভোগি। যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম স্বীকার করে যে কোথাও কোন সরকার এখন এর জন্য বেশি কিছু করছে না। আমাদের সবার আরও কঠোর চেষ্টা ও বেশি কাজ করা প্রয়োজন।’
×