ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহজাহান মিয়া

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কুলদীপ নায়ারের কলম-সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৩০ জুন ২০১৫

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কুলদীপ নায়ারের কলম-সন্ত্রাস

ইংরেজীতে দারুণ দক্ষ ও প্রাঞ্জল ভাষায় চমৎকার লেখায় পারদর্শী ভারতের সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক বলেই সুপরিচিত। সবাই তাঁকে সেভাবেই জানে এবং সম্মান করে। কারণ, ভারতের সীমানা ছাড়িয়েও পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশেই এই দিকপাল সাংবাদিকের লেখার অনেক পাঠক ও ভক্ত-সমর্থক রয়েছে। ভারতসহ বিদেশের অনেক নামী-দামী সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় থাকলেও কুলদীপ নায়ারের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেনি। কোথাও কখনও দেখাও হয়নি। অবশ্য অফিস থেকে নব্বইয়ের দশকে আমি অফিসিয়াল এ্যাসাইনমেন্টে ভারতের কলকাতা, দিল্লী, মাদ্রাজ ও বেঙ্গালুরুতেও গিয়েছি। ১৯৮৯ সালের নবেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের প্রচ- আন্দোলনে সৃষ্ট টালমাটাল রাজনৈতিক সঙ্কটও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে আমাকে কভার করতে হয়েছিল। ঘটনাটি অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে কভার করার সময় ইসলামাবাদে তখন বিশ্বের অনেক দেশ থেকে আগত সাংবাদিকদের সঙ্গেও আমার পরিচয় ঘটেছিল। সন্দেহ নেই, কুলদীপ নায়ার একজন অত্যন্ত উঁচুমানের কলামিস্ট। কথাটি বলতে আমার মতো একজন কলমপেষা সাংবাদিকের হয়ত ঔদ্ধত্যই প্রকাশ পেতে পারে, তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি। একজন ক্ষুরধার লেখনীর অধিকারী সাংবাদিক-কলামিস্ট তাঁর লেখায় দ্যুতি ছড়ানোর মাধ্যমে লেখনীর ধার যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে তাঁর সম্মানের পাল্লাটাও তত ভারি হতে থাকে। এমন অবস্থায় কারোর মধ্যে আবার সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারের প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধির প্রবণতা একেবারে অমূলক নয়। এটা আমাদের দেশে যেমন দেখা যায়, সুযোগ পেলে সংবাদিকতায় আমাদের ছবক দেয়ার মানসিকতায় উজ্জীবিত কিছু বিদেশী সাংবাদিকের মধ্যে বিষয়টি আরও বেশি লক্ষ্য করা যায়। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলোকে শুধু এটুকু বলতে পারি যে, শুধু ব্যক্তি হিসেবে একজন সাংবাদিক-কলামিস্টই নয়, বড় বড় পত্রিকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও কোন কোন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ভাল নয়। গত ১১ জুন ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইংরেজী দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় ‘এ শট ইন দ্য আর্ম ফর হাসিনা’ শিরোনামে কুলদীপ নায়ার যা লিখেছেন তা শুধু একপেশে ও পক্ষপাতমূলকই নয়, তাতে বাংলাদেশ এবং এ মুহূর্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি চরম বৈরী আচরণই প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর মন্তব্য বিভ্রান্তিকর ও বিদ্বেষপরায়ণ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে নায়ারজী তাঁর কলমের খোঁচায় যে সব কথাবার্তার অবতারণা করে বিষোদগার করেছেন তাঁকে কলম সন্ত্রাস বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর অসময়ে হয়েছে মন্তব্য করে নায়ারজী বলেছেন, ‘দেখে মনে হয়েছিল মোদি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পড়তি ভাবমূর্তি ঠেকাতে গিয়েছিলেন। তিনি এখানে কেবল ভারতবিরোধী অনুভূতিকেই আরও তীব্র করে তুলেছেন। কেননা নয়াদিল্লীকে নিরপেক্ষ হিসেবে মনে হয়নি। কুলদীপ নায়ার তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের ওপর লিখিত এক সংবাদ বিশ্লেষণে আরও বলেন, ‘আমি জানি না কেন এবং কতদিন ধরে আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। এটা সত্য যে, তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করেছেন। কিন্তু এ পরিচয়ের কারণেই হাসিনা সংবিধান ও প্রচলিত নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা করার অধিকার পেতে পারেন না।’ আর তাই তো বাংলাদেশের পরম পূজনীয় প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (গাফ্ফার ভাই) এই পত্রিকায়ই ‘কুলদীপ নায়ার কাদের জন্য ফরমায়েশি এই লেখা লিখছেন?’ শিরোনামে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে পানি ঘোলা করার প্রচেষ্টা এখনও চলছে। তাতে ভারতের এক বুড়ো ভাম-কলামিস্ট কুলদীপ নায়ারও যোগ দিয়েছেন।’ একজন সাংবাদিকের প্রধানতম কাজ হচ্ছে জনগণের সামনে বস্তুনিষ্ঠভাবে সত্য বলা ও তুলে ধরা। একজন সৎ সাংবাদিকের ওপর এ দায়িত্বটি আরও বেশি বর্তায়। দেশ ও সমাজের সচেতন মানুষের শ্রদ্ধা অর্জনে এর কোন বিকল্প নেই। অথচ কুলদীপ নায়ারের মতো একজন বিশাল সাংবাদিক চোখ বুঁজে সত্যের অপলাপ ঘটালেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অর্জনগুলোকে আড়াল করে এদেশের বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো ডাহা মিথ্যাচার করলেন। নায়ারজীর তুলনায় আমি একজন ছোট সাংবাদিক। দিকপাল সাংবাদিক গাফ্্ফার ভাইয়ের মতো কুলদীপ নায়ারকে ‘বুড়ো ভাম-কলামিস্ট’ বলে মন্তব্য করার ধৃষ্টতা আমি দেখাব না। তবে তার যে বুড়ো বয়সে ভীমরতি ঘটেছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এটা আমি জোরগলায়ই বলতে পারি। নায়ারজী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্নিশিখা নিভিয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ভারতীয় সাবেক এই কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে পরিচিত শেখ হাসিনার মধ্যে স্বৈরশাসকের প্রতিচ্ছবিও দেখতে পেয়েছেন। এটা শুধু তাঁর মনগড়া বক্তব্যই নয়, তাঁর বুড়ো বয়সের খামখেয়ালিপনার চরম বহির্প্রকাশ। মোদির সফরটিকে তিনি দুর্ভাগ্যজনক বলেও আখ্যায়িত করেছেন। সবাই জানেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকার কারণে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ইউনিসেফ আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববাসী উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সিএনএনের বিশ্বখ্যাত উপস্থাপক জিম ফ্লেন্সি শেখ হাসিনাকে একজন সংগ্রামী নেতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘অত্যন্ত অমানবিক সন্ত্রাসের কবল থেকে তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও তিনি দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।’ আগস্টের ঐ নির্মম হত্যাকা-ের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে শেখ হাসিনাও আর পেছনে ফিরে তাকাননি। প্রচ- শোককে দুর্নিবার শক্তিতে পরিণত করে সংগ্রামী চেতনায় উদ্দীপ্ত-উজ্জীবিত এক নতুন হাসিনা নব উদ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণকে নিয়ে প্রচ- আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অনেক সময় তাঁকে ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে তাঁকে গৃহবন্দীও করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর সঙ্কল্পে থাকেন অনড় এবং লক্ষ্য অর্জনে অটল, অবিচল। সাহসী শেখ হাসিনা ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে তাঁর ওপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তা-ব মোকাবেলা করেন। সে সময় তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরতে বাধা প্রদানও তাঁর দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়। স্বজন হারানোর বেদনা তাঁর চেয়ে আর কারও বেশি বোঝার কথা নয়। আর সে কারণেই মানুষের ব্যথা-বেদনা তাঁকে কাঁদায়। গ্রামবাংলায় সফর করার সময়ও বুকভরা ভালবাসা ও গভীর মমত্ববোধ নিয়ে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো শেখ হাসিনার একটি বিরল গুণ। মন-প্রাণ উজাড় করা মমতা দিয়ে গরিব-দুখী-নিঃস্ব মহিলাদের তিনি অবলীলাক্রমে বুকে টেনে নেন। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রায় সব মানবিক গুণেরই সমাহার ঘটেছে তাঁর মধ্যে। এর মধ্যে কোন ভনিতা নেই। নেই কোন ফাঁকিবাজি। এরকম নজির এদেশের অন্য নেতা-নেত্রীদের মধ্যে পাওয়া ভার। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই মানবতা ও মমত্ববোধ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে মানবিক মূল্যবোধের এক পর্বত-প্রমাণ উচ্চতায়। অথচ কুলদীপ নায়ারের চোখ পড়েনি ঐ গৌরবোজ্জ্বল বিষয়টির দিকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও শেখ হাসিনার দৃপ্ত পদচারণা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর তাই তিনি ২০১১ সালে বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের শীর্ষ দশ নারী নেত্রীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকায় ২০০০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কলামিস্ট ও সমগ্র আমেরিকায় পরম পূজনীয় সাংবাদিক ম্যারি ম্যাকগ্ররী তাঁর একটি বড় নিবন্ধে তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল ওয়াশিংটনের ডিপ্লোম্যাটিক জোনে বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যান্সারী ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী কথা বলার পর অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে তিনি লিখেছিলেন, ‘দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ভারত ও পাকিস্তান যখন আণবিক বোমা পরীক্ষা করে বিশ্বের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ গুঁড়িয়ে দেয়, তখন শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে দুটি দেশ সফরে যান। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে সংযম পালনের অনুরোধ জানান। একজন প্রতিবেশী হিসেবে হাসিনা তাদের বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ গরিব। অস্ত্রের প্রতিযোগিতা ও সংঘাতের চেয়ে দেশের জনগণের উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত করার দিকেই আমাদের মনোনিবেশ করা উচিত।’ তিনি জীবনে অনেক আন্তর্জাতিক এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাকন কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত ‘পার্ল এস বাক’ এ্যাওয়ার্ডটি অন্যতম। ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে এ্যাওয়ার্ডটি দেয়া হয়েছিল। পুরো উপমহাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার এ বিশেষ অর্জনটির দিকেও মনভোলা (?) নায়ারজীর নজর পড়েনি। তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন ইতিহাসের এ সত্যটিকেও। তিনি নিশ্চয়ই পুলিটজার প্রাইজ উইনার ম্যারী ম্যাকগ্ররিকে চেনেন। শারীরিক গড়নে ছোটখাটো এই আমেরিকান সাংবাদিকের নাম শুনলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বাঘা বাঘা রাজনীতিকের বুকে কাঁপন উঠত। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি, ম্যারী ম্যাকগ্ররিকে তো কোন লোভ-লালসায় ফেলে কিছু লেখানো সম্ভব ছিল না। আমেরিকা থেকে আমি চলে আসার পরও আমাকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করেছিলেন। ম্যাকগ্ররি ২০০৪ সালে মারা যান। উল্লেখযোগ্য, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নয়াদিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে মোদি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বানিয়েছেন, আর তাঁর মেয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন।’ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে কি অসীম শ্রদ্ধা পোষণ করেন ঐ আটটি শব্দেই তার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেছে। কারণ, মোদির এই মন্তব্যটি ছিল তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত। এ কথাটি নির্দ্বিধায় বলা যায়, কুলদীপ নায়ার কংগ্রেস ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী বিরোধী। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ভারতে জরুরী অবস্থা জারি করলে তিনি শতাধিক সাংবাদিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তার প্রতিবাদ করেছিলেন। ভাল কথা এবং তার জন্য তিনি সাধুবাদ পেতেই পারেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রতিনিধিত্ব করে আমার জীবনে আমি নিজেও তাদের স্বার্থরক্ষায় বহুবার দৃষ্টান্তমূলক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভের নগ্ন প্রকাশ এখন কেন বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ঘটবে? শেখ হাসিনা কেন তাঁর চক্ষুশূল হবেন। এখন তো আর কংগ্রেসও ক্ষমতায় নেই। ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি। আসলে বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কট্টর-বিরোধী কুলদীপ নায়ার সম্পর্কে কিছু বলাও মুশকিল। মনে হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্কেও বিশ্বাসী নন। বিরল রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বে ঈর্ষণীয় পারদর্শিতা সম্পন্ন এবং কথা বলায় অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী নরেন্দ্র মোদি তাঁর খোলামেলা বক্তব্য দিয়ে এদেশের মানুষের হৃদয় জয় করে গেছেন। ভারতের পার্লামেন্টকে ঐক্যবদ্ধ করে যেভাবে তিনি স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস করিয়ে ছিটমহল বিনিময়ের পথ সুগম করেছেন তা শুধু তাঁর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতারই প্রমাণ করে না, তাঁর সুমহান নেতৃত্বে দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতা ও সততারও পরিচায়ক। অন্যদিকে পিতার মতো দেশ ও মানুষের মঙ্গলের জন্য সদা উন্মুখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভাবনীয় উদ্যম ও উদ্যোগ এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আন্তরিকভাবে আগ্রহী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রবল ইচ্ছার ইতিবাচক প্রতিফলনও ঘটে। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথকে সুগম করে অনেক বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হবে বলে দু’দেশের সাধারণ মানুষের একান্ত প্রত্যাশা। সেখানে ফরমায়েশি লেখা বা অসত্য আবোল-তাবোল কিছু বলে কুলদীপ নায়াররা কোন বিঘœ সৃষ্টি করতে পারবেন বলে মনে হয় না। লেখক : সাংবাদিক
×