ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংরক্ষণ করা যাবে নির্ভুল তথ্য

বিদ্যুত বিভাগের অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩০ জুন ২০১৫

বিদ্যুত বিভাগের অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে

রশিদ মামুন ॥ অডিট আপত্তি নিস্পত্তিতে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন করলো বিদ্যুত বিভাগ। এখন থেকে অডিট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম নামে নতুন একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিদ্যুত বিভাগের অডিট নিস্পত্তি হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায় অডিট কার্যক্রমকে তথ্য প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসায় প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এতে এক দিকে অডিট আপত্তির নির্ভুল তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে অন্যদিকে নিষ্পত্তি কাজ ত্বরান্বিত হবে। বিদ্যুত বিভাগের ১০ প্রতিষ্ঠানে ছয় হাজার ৮৩৯ অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে কোন কোন অডিট আপত্তি তোলা হলেও তা নিষ্পত্তিতে যথাযথ উদ্যোগ নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে অডিট আপত্তির তথ্যও পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব সমস্যার কারণে অডিট নিষ্পত্তি করা যায় না। বিদ্যুত বিভাগে প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যমতে সব থেকে বেশি অডিট আপত্তি জমে রয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডে। পিডিবির‘র তিন হাজার ৪১৪টি অডিট এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর পরেই অনিষ্পত্তি হওয়া অডিট আপত্তির শীর্ষে রয়েছে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুত বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। কোম্পানিটির এক হাজার ২৩৩টি অডিট আপত্তি জমে রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এর নাম। সংস্থায় জমে রয়েছে এক হাজার ১৯৪টি অডিট আপত্তি। এর বাইরে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এর ৫৬০টি, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১৯৯টি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর ২০৩টি, আশুগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল) এর ৫৮টি, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) এর ১৬টি অডিট আপত্তি রয়েছে। সব থেকে কম অডিট আপত্তি রয়েছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (নওপাজেকো) এবং পাওয়ার সেলের। নওপাজেকো এর একটি এবং পাওয়ারসেলের ৬টি অডিট আপত্তির এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো গত ২৫ জুন পর্যন্ত তাদের অডিট আপত্তি থাকার কথা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। অডিট আপত্তির মধ্যে বকেয়া বিদ্যুত বিলের রয়েছে এক হাজার ৯৮২টি, বিধিবহির্ভূত পরিশোধ রয়েছে ৬৯৫টি, সিস্টেম লস ৪৬৭টি, আত্মসাৎ রয়েছে ৫৯টি, ভ্যাট এবং আয়কর সংক্রান্ত রয়েছে ৪৩৬টি, ঘাটতি রয়েছে ৯৮টি, অপচয় সংক্রান্ত ৩৪৪টি, চুরি রয়েছে ২৫১টি এছাড়া বিবিধ অভিযোগ রয়েছে দুই হাজার ৫৪৩টি। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সবগুলো অডিট আপত্তিতেই বিপুল পরিমান অর্থ আটকে আছে। এসব আপত্তি নিষ্পিত্তি করাগেলে প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দেশে যে অডিট আপত্তি জমে রয়েছে তা বাজেটের দ্বিগুন বলে মন্তব্য করেছেন। এসব আপত্তি নিষ্পত্তির উপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জানতে চাইলে পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, এতে করে আর বিশাল ফাইল রাখতে হবে না। এখন যে কেউ চাইলেও অনিষ্পত্তি হওয়া অডিট আপত্তি গুলো দেখতে পারবেন। আগে এসব অডিট আপত্তির কোন খোঁজ রাখা হতো না। এখন তা আর হবে না। অডিট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়্যারটি সরাসরি বিদ্যুত বিভাগের আওতায় পরিচালিত হবে। অডিট নিষ্পত্তি না হওয়া প্রসঙ্গ বিদ্যুত বিভাগ বলছে দীর্ঘ দিনের পুরাতন আপত্তিকৃত পুরাতন চুরির ঘটনা নিষ্পত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় না। নিখোঁজ এবং মৃত গ্রাহকদের কারণে বিদ্যুত বিলের অনেক বকেয়া আদায় হয় না এছাড়া সারচার্জ আদায় না করার কারণে অডিট আপত্তি জমে থাকে। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতে তিনটি সমস্যা খুঁজে পেয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। সূত্র বলছে, অনিষ্পন্ন অনেক অডিটের ক্ষেত্রে অডিট অধিদপ্তর বাস্তব যাচাই করতে চায়। কিন্তু বাস্তব যাচাই না হওয়ার কারণে আপত্তি নিষ্পত্তি হয় না। সিস্টেম লসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় অডিট আপত্তি তোলা হয়। যা কোন দিনই নিষ্পত্তি করতে পারে না বিতরণ কোম্পানি। এছাড়া বিদ্যুত কোম্পানিগুলো চলে কোম্পানি আইনে কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষ সরকারী অন্য আইনে আপত্তি তোলা হয়। কিন্তু দুই আইন কোন কোন ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক হওয়ায়ও অডিট নিষ্পত্তি হয় না। এজন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন অডিট নিষ্পত্তি আরো জোরদার করার সুপারিশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×