ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে বাজেট আলোচনা

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য ॥ রওশন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩০ জুন ২০১৫

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য ॥ রওশন

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা, রাজনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশের ১৩ থেকে ১৪ লাখ ব্যবসায়ীকে করের আওতায় এনে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঢালাও করারোপ করা ঠিক হবে না। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক নিয়োগ দেয়ার কারণে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব ব্যাংক হাজার হাজার টাকা ঋণ দিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু আদায় করতে পারছে না। মানুষের আস্থা ব্যাংকগুলোর ওপর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। শক্তহাতে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সোমবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী দিনে অংশ নিয়ে তিনি এসব সুপারিশ করেন। সমাপনী দিনে আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, দবিরুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াছিন আলী ও জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় প্রায় এক মাসব্যাপী প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা। আজ মঙ্গলবার প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে রওশন এরশাদ প্রস্তাবিত বাজেট স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে এবার কম বরাদ্দ দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, দেশে ১৬-১৭ কোটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা করার দাবি জানান তিনি। শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি খাতেও কম বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল বাজেট, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বেশি, অথচ বরাদ্দ কেন কম ? এ বিষয়ে তিনি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেন। শিক্ষা খাতের আরও বেশি বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাস্থ্য খাতের মতো শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি খাতেও বরাদ্দ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ করার দাবি জানিয়ে বিরোধী দলের নেতা বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক জিপিএ পেলেও পরবর্তীতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তারা পাসও করতে পারে না। সেশন জটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ করার পরামর্শ দেন। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের গুরুত্বারোপ করে রওশন এরশাদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ও চট্টগ্রাম- কক্সবাজার সড়ক উন্নয়নের কাজ গুরুত্বসহকারে নিয়ে দ্রুত শেষ করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের ক্ষতির অভিযোগটি বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বরাদ্দ বিশাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক প্রকল্প নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে খরচ বেড়ে যায়। এছাড়াও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেয়ার নেতিবাচক দিকও তুলে ধরেন তিনি। ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকিং নিয়মকানুন মেনে চলতে চান না। দিনে দিনে ব্যাংকের ওপর থেকে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। রওশন এরশাদ বলেন, কৃষকরা এবার ধানের মূল্য পায়নি। গতবারেও পায়নি এবং তাদের হাজার হাজার মণ আলু পচে গেছে। কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। মোবাইলে কথা বলার ওপর করারোপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কম পয়সায় সাধারণ পেশার মানুষ এটি ব্যবহার করে। এখানে করারোপ করা ঠিক হয়নি। মাছের খামার ও গরু- ছাগলের খামারের ওপর করারোপও ঠিক হয়নি। কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দাবি জানান । মুক্তিযোদ্ধাদের সবাইকে একই হারে ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ সম্বোধন করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কারণেই এসব নারী নিগৃহীত হয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উদীয়মান পাঁচটি অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। বিএনপি নামক দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই গণহত্যায় লিপ্ত হয়। জেনারেল জিয়াও হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে, খালেদা জিয়াও তাই করেছে। এখনও খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে চান, গণতন্ত্র কায়েম করতে চান। কিন্তু হত্যাকারীদের জন্য এদেশে কখনোই গণতন্ত্র থাকবে না। তাই এ সমস্ত কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। জনগণ আগেও এদের প্রত্যাখ্যান করেছে, আগামীতেও করবে।
×