ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি

ঈদে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি, বাঙালী নারীর সবচেয়ে প্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩০ জুন ২০১৫

ঈদে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি, বাঙালী নারীর সবচেয়ে প্রিয়

ইফতেখারুল অনুপম ॥ বাঙালী নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। এই পোশাকেই তাদের বেশি মানায়। বিশ্বের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালী নারীর শাড়ির প্রতি রয়েছে আলাদা টান। এ বিচারে তাঁত শাড়ির প্রতি তাদের বাড়তি আকর্ষণ আবহমানকালের। টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি বাঙালী নারীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদেও টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র্য আর নতুনত্ব। বাহারি ডিজাইনের শাড়ি বুনন এবং তা সারাদেশে সরবরাহে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীগুলো। শাড়ির পাশাপাশি থ্রি-পিসের চাহিদাও ব্যাপক রয়েছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার আরও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদ সামনে রেখে প্রায় ২০ লাখ পিস শাড়ি উৎপাদন করা হয়েছে। এ থেকে প্রায় একশ’ কোটি টাকার ওপরে ব্যবসা হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের। তবে বরাবরের মতো এবার কিছুটা বাড়তি দামে পছন্দের শাড়ি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর ঈদে তেমন সুবিধা করতে পারেনি টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ীরা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা গেলে এবার ঈদে ভাল ব্যবসা হবে বলে আশা তাদের। তাই ঈদ সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় মুখরিত এখন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীগুলো। চলছে কাপড় বুননের ধুম। বেশি দাম দিয়ে সুতা কেনা হলেও কাপড় বুনন কাজে দিন রাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁতীরা। জেলার পাথরাইল, চন্ডি, বাজিতপুর, নলসন্ধ্যা, নলুয়া, বড়টিয়া, চিনাখোলা, মঙ্গলহোড়, টেগুড়ি, বীরপুষিয়া, গোপালপুর, রূপসী, ডুলুটিয়া, ছিলিমপুর, দেলদুয়ার, পোড়াবাড়ী, চাড়াবাড়ী, এনায়েতপুর, করটিয়া, কালিহাতী, বল্লা, রামপুর, মমিননগর, কোকডহরা, নাগবাড়ি, কাজীবাড়িসহ তাঁতপল্লী এলাকাগুলোতে প্রবেশ করলেই শোনা যায় তাঁতের খটখট শব্দ। দিন রাত চলছে কাপড় বুননের প্রতিযোগিতা। জেলায় ৬৪ হাজার একশ’ তাঁত রয়েছে। আর এতে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে শাড়ি কেনার জন্য টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেটগুলোতেও ভিড় করছে ক্রেতারা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব শাড়ি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে টাঙ্গাইলের শাড়ি যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ভিন্ন ডিজাইন আর ভিন্ন দামের শাড়ি এবার বাজারে এসেছে। এর মধ্যে বালুচুড়ি, হ্যান্ডি ব্লক, জুট কাতান, সুতি, হাফ সিল্ক, জামদানি সিল্ক, মসলিন এমব্রয়ডারি, জামদানি, ধুপিয়ান ও ঝলক কাতান। এবারের ঈদে নতুন মোড়কে বাজারে এসেছে জুট কাতান। আর ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে জামদানি, সুতি, টাঙ্গাইল শাড়িসহ হাতে বোনা সিল্ক শাড়ি। ক্রেতারা এবার গরমের কারণে সুতি শাড়িকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এবারের ঈদ বাজারে প্রতি সুতি শাড়ির দাম রাখা হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা, হ্যান্ড ব্লক ৭শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা, বালুচুড়ি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার এবং জামদানি ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ডিজাইন ও রকম ভেদে শাড়িগুলোর দাম রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’ থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এন্ডি সিল্কের ওপর স্ট্রাইপ ও নক্সা করা নতুন ডিজাইনের শাড়ি ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, ধুপিয়ান ও বলাকা সিল্কের শাড়িগুলো সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এবারের ঈদেও জামদানি শাড়ি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ির মধ্যে সুতি জামদানি, বালুচুড়ি, সফ্ট সিল্ক ও বেনারসী জামদানি শাড়ির সবচেয়ে বেশি কদর। জেলার তাঁতপল্লীগুলো সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন তাঁতপল্লী এলাকা সরগরম হয়ে উঠেছে। তাদের তৈরি কাপড় ব্যাপকভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। হরেক রকম ডিজাইনের নিজেদের পছন্দের কাপড় কিনতে মার্কেটে ক্রেতা ও পাইকারদের কমতি নেই। উৎপাদন বেশি ও অন্যান্য মাসের চেয়ে একটু বেশি লাভবান হতে তাঁত মালিকরা বোনাস নিয়ে হাজির হয়েছে শ্রমিকদের সামনে। আর শ্রমিকরাও বোনাসের আশায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁতপল্লীগুলোতে শুধু পুরুষ নয়, বাড়ির মহিলারাও যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছে। কেউ সুতা ছিটায় উঠানোর কাজে, কেউ সুতা পাড়ি করার কাজে, আবার কেউ সুতা নাটাইয়ে উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে তাঁতপল্লীগুলোতে চলছে কাপড় তৈরির ধুম।
×