ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য বাতিলে খালেদার আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩০ জুন ২০১৫

দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য বাতিলে খালেদার আবেদন খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও এক নম্বর সাক্ষী হারুন-অর-রশীদের সাক্ষ্য বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে বাদীর দেয়া সাক্ষ্য বহাল থাকল। বিচারিক আদালতে আইন অনুসারে এ মামলা চলবে। অন্যদিকে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা ৭ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। বিচারপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও এক নম্বর সাক্ষী হারুন-অর-রশীদের সাক্ষ্য বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারিক আদালতে পাঁচ কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাদী ও প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্য বাতিল করে নতুন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে ১৫ জুন এ আবেদনটি জানান খালেদার আইনজীবীরা। পাশাপাশি ওই সাক্ষ্য কেন বাতিল করা হবে না, সেই রুল চাওয়া হয়েছে। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিতেরও আরজি জানান তারা। আবেদনে সরকার ও দুদককে বিবাদী করা হয়। আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, আদালত আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে জবানবন্দী যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, খালেদা জিয়া এ মামলায় বাদীকে জেরা করার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালতে আইন অনুসারে এ মামলা চলবে। এ ধরনের আবেদনকরার আইনগত এখতিয়ার নেই বলে কোর্ট তা খারিজ করেছে। আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মাদ আলী, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান, এ্যাডভোকেট জাকির হোসেন প্রমুখ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, দুদুকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। আসামির অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য না নেয়ার আবেদনের পরেও আদালত হারুনের সাক্ষ্য নেয়ায়, তা বাতিল চেয়ে ১৪ জুন আবেদনটি করেছিলেন সুপ্রীমকোট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। খালেদার আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, বিচারিক আদালতে পাঁচটি কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাদী ও প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। যেকোন ফৌজদারি মামলার আইন অনুযায়ী আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নিতে হয়। তা না হলে অনুমতি নিয়ে আইনজীবীর উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি, যা বেআইনী। এ কারণেই আবেদনে বাদীর সাক্ষ্য বাতিল করে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আবার সাক্ষ্য নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই সাক্ষ্য কেন বাতিল করা হবে না সেই রুল চাওয়া হয়েছে। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিতেরও আরজি জানিয়েছেন তারা। আবেদনে সরকার ও দুদককে বিবাদী করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট আসামি ছয়জন। অপর পাঁচজন হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, খালেদা জিয়ার শাসন আমলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে রয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার অভিযোগে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলা হয়। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের জমি কেনার জন্য অবৈধভাবে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। রাজধানীর বকশি বাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে এই দুই মামলারই বিচার কাজ চলছে। শামসুজ্জামান দুদু গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা ৭ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদুর আইনজীবী এ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন এ আবেদনগুলো দায়ের করেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন গাড়িতে ভাঙচুর ও পোড়ানোর অভিযোগ এনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলাগুলো দায়ের করে। বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাশ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনগুলোর ওপর শুনানি করা হবে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
×