ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রিয় বাবার পরামর্শেই অবসর’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৯ জুন ২০১৫

‘প্রিয় বাবার পরামর্শেই অবসর’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ১৪৯৩ রান, গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েছেন টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড, বয়স ৩৭ বছরÑ কুমার সাঙ্গাকারার অবসরটা তাই অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। শ্রীলঙ্কা জুড়ে তৈরি হয়েছে কেমন এক শূন্যতা। ভক্ত হৃদয়ে চাপা আফসোস, আর কটা দিন খেলে গেলে কী এমন ক্ষতি হতো? বরং সমৃদ্ধ হতো পরিসংখ্যান। বোর্ডও (এসএলসি) কম অনুরোধ করেনি। ভারতের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে বিদায় জানাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। শনিবার অবসরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার একদিন পর জানালেন, কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন প্রিয় বাবার পরামর্শে। মনে হলো বাবা ঠিকই বলেছেন ... কয়েক বছর আগের ঘটনা, ক্যান্ডির বাড়িতে বাবা একদিন ডেকে বললেন, দেখ ক্যারিয়ারের শেষ নিয়ে ভাবা উচিত। আমি তো অবাক, বলে কি! বয়স ৩২-৩৩, খেলাটা দারুণ উপভোগ করছি, ব্যাটে রান আসছে, আর বাবা কি না অবসর নিয়ে ভাবতে বলছেন। নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমি কি যথেষ্ট ভাল খেলছি না? উত্তর পেতে দেরি হলো না। ২০১২-১৩ মৌসুমে যখন ইনজুরিতে পরলাম, উত্তরটা নিজেই পেয়ে গেলাম। দীর্ঘ দিন খেলার ধকল কিভাবে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা টের পেতে শুরু করলাম। মনে বাজল, বাবা হয় তো ঠিকই বলেছেন! মাঝে আরও কয়েক বছর কেটে গেল। বোর্ড ও ভক্তদের উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু এটাই সত্য। ্র ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তোষ .... চাইলে অনায়াশে আরও কয়েক বছর, অন্তত দুই বছর চালিয়ে যেতে পারতাম। তাতে কম করে ১০০০ রান যোগ হতো। অবশ্যই ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে যেতে পারতাম। গড়তে পারতাম সর্বোচ্চ ডাবল সেঞ্চরিসহ আরও দারুণ কিছু রেকর্ড, হয়ে যেত ৪০টির বেশি টেস্ট সেঞ্চুরিও। এসব ভাবলে আপনার ভেতরে এক ধরনের লোভ কাজ করবে। কিন্তু ক্রিকেট এমন এক খেলা যেখানে ব্যক্তিগত লোভের স্থান নেই। সবার আগে দেশ। দেশের প্রয়োজনে নিজেকে উজার করে দিয়েছি, যা পেয়েছি তা নিয়ে সন্তুষ্ট আমি। নতুন করে বাবার সঙ্গে আলোচনা করলাম, বুঝলাম অবসরের পর আরও একটা জীবন আছে। যে জীবনে একান্ত সাঙ্গাকারাকে পেতে অধীর অপেক্ষায় পরিবার। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও কথা বলেছি। ্র উদাহরণ যখন মুরলিধরন ... ২০১০ সালে মুরলিধরনের শেষ টেস্টে আমিই অধিনায়ক ছিলাম। জীবনের শেষ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ৮০০ শিকারের বিরল কীর্তি গড়েছিল সে। আমি নিজে তাকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এমন ফর্ম নিয়ে আরও কিছুদিন খেলে গেলে হয় না? দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সে বলেছিল, এভাবে ম্যাচ প্রতি ৮ উইকেট পেলে সাড়ে ৮শ’ বা ৯শ’ উইকেট হতেও খুব বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একটা সময় তোমাকে ‘গুডবাই’ বলতেই হবে, পরিবার ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয় আমাকে সেটাই করতে হবে। নতুনরা উঠে আসবে, তারা দীর্ঘদিন দেশের সেবা করবে, তাদের সেই সুযোগটা তো আমাকেই করে দিতে হবে। ওর কথগুলো আমাকে সেদিন খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। এখন বাবা ঠিক সেটিই বললেন, জীবনে নিজের প্রাপ্তি নিয়ে তৃপ্ত হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ্র গর্ব ও হতাশা ... আমার ক্যারিয়ার নিয়েই গর্বিত আমি। সচেয়ে বেশি গর্বিত শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলতে পেরে। এমন একটি দল যেখানে অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাথ জয়সুরিয়া, মুত্তিয়া মুরলিধরনের মতো কিংবদন্তির জন্ম হয়েছে। ছিল চামিন্দা ভাস, রঙ্গনা হেরাথÑ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটা দলকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছে। এটা খুবই সৌভাগ্যের। দেশের জার্সি পরে মাঠে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুশি আমি। আন্দের সঙ্গ কষ্ট নিয়েই মানুষের জীবন। আমার জীবনের বড় কষ্ট তিন তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও দেশকে শিরোপা এনে দিতে না পারা। এমন কি ঘরের মাটিতে ২০১২ টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালেও হারতে হয়েছিল, যদিও বাংলাদেশে সর্বশেষ আয়োজনে শিরোপা জিততে পেরেছিলাম। কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপের সঙ্গে তার তুলনা চলে না।
×