ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে যৌতুকলোভী মাদ্রাসা শিক্ষকের বিয়েবাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৯ জুন ২০১৫

বাগেরহাটে যৌতুকলোভী মাদ্রাসা শিক্ষকের বিয়েবাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ ছয় মাসের শিশুকন্যা তুবা জন্মের পর থেকেই পিতার আদর ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। তুবা জানে না তার পিতা মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল খায়েরের যৌতুকের শিকার হয়েছে মা সানজিদা। অবুঝ সন্তান বঞ্চিত হচ্ছে পিতার ভালবাসা থেকে। সানজিদা তার কন্যার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও যৌতুকলোভী স্বামীর বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের ভরাঘাটা গ্রামের মোঃ নূরুল ইসলাম হাওলাদারের কন্যা সানজিদা আকতার মারুফা। ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর ৫০ হাজার ১ টাকা দেনমোহরে হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের পাঁঠামারা গ্রামের আব্দুল খালেক মাতুব্বরের ছেলে আবুল খায়ের মাতুব্বরের বিয়ে হয়। আবুল খায়ের মাতুব্বর পৌর সদরের আবু হুরাইরা দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক। বিয়ের সময় ও বিয়ের পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য কম্পিউটার, ফটোস্ট্যাট মেশিন, দোকানের আসবাবপত্র, রঙিন টেলিভিশন ও সংসারের যাবতীয় মালামালসহ তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ছোট জামাতা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবদার ও অজুহাতে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়। এরই মধ্যে তাদের সংসারে দুটি কন্যাসন্তান জন্ম নিয়ে দ্বিতীয় সন্তানটি কোলজুড়ে বেঁচে আছে। ২য় বার কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ায় স্বামী আবুল খায়ের মাতুব্বর স্ত্রীর ওপর চরমভাবে নাখোশ হয়। আর এরই জের ধরে স্ত্রীর ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যৌতুকলোভী স্বামী আবুল খায়ের আবারও মোটরসাইকেলের জন্য আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করে। দিতে অস্বীকার করায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শিশুসন্তান নিয়ে পিতার বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হয়। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিয়ে ৮ মে সানজিদা আকতারের পিতার বাড়িতে আপোস বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে যৌতুকলোভী স্বামীসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিল। এ বৈঠকে যৌতুকের দেড় লাখ টাকার দ্বন্দ্বের জের ধরে যৌতুকলোভী লম্পট স্বামী সানজিদাকে বেধড়ক মারপিট করে। মারপিটে গুরুতর আহত সানজিদাকে মোরেলগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সানজিদা আকতার বাদী হয়ে স্বামী আবুল খায়েরসহ চারজনকে আসামি করে ১৩ মে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলা দায়েরের পর প্রভাবশালী আসামি আবুল খায়ের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আবুল খায়ের মাদ্রাসায় মেডিক্যাল ছুটিতে আছেন বলে তার মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শাহাদাত হোসেন জানান। মোরেলগঞ্জ থানার এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মারাফাত আলী জানান, আবুল খায়ের পলাতক রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আবুল খায়ের মামলার কোন তোয়াক্কা না করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সানজিদাকে তালাক দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সানজিদা আকতার মারুফা আবুল খায়ের মাতুব্বরের দ্বিতীয় স্ত্রী। এর আগে আবুল খায়ের ২০০২ সালে জিয়ানগর উপজেলার চ-িপুর গ্রামের আব্দুস সালাম মৃধার কন্যা আসমা আকতারকে বিয়ে করে। সেখানে তাদের দুটি সন্তান শাহরিয়ার (৫) ও কন্যা সরাইয়া (৩) রয়েছে। এ সংসারটিও যৌতুকলোভী স্বামীর কারণে টিকিয়ে রাখতে পারেনি প্রথম স্ত্রী আসমা। অভিশপ্ত যৌতুকের শিকার আসমা আকতার বাদী হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে পিরোজপুর আদালতে মামলা (সিআর ১২২/১০) দায়ের করেন। এ মামলাটি প্রভাবশালী আবুল খায়ের প্রভাব খাটিয়ে মীমাংসা করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। তালাকপ্রাপ্ত আসমা বেগম তার দুই সন্তান নিয়ে পিত্রালয় আছেন। প্রথম স্ত্রী আসমা বেগম ও দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আকতার বলেন, আবুল খায়ের রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইন আছে কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে লেবাসধারী ধার্মিক আবুল খায়ের আইনের ফাঁকফোকর ও অর্থের বিনিময়ে পার পেয়ে যেতে পারে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
×