ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ জুন ২০১৫

ঈদে ২২ হাজার কোটি  টাকার নতুন নোট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে এবার প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়াও রাজধানীর ১৮টি বিশেষ শাখায় আগামী ২ জুলাই থেকে এসব নোট বিতরণ শুরু হবে। এদিকে জাল টাকা প্রতিরোধে আগামীকাল মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নিকট ২০০ নোট শনাক্তকরণ মেশিন হস্তান্তর করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, ঈদ-উল-ফিতরে সাধারণ মানুষের নতুন নোট সংগ্রহ করার একটি বিশেষ আগ্রহ থাকে। সেটিকে লক্ষ্য রেখে বরাবরের মতো নতুন নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতবছর রোজার ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯ হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের নতুন নোট বাজারে ছেড়েছিল। তবে এবার প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ নতুন নোট বাজারে ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে দশ টাকার নোট বিতরণ শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যতক্ষণ টাকা লাগবে, ততক্ষণ পর্যন্ত টাকা বিতরণ করা হবে। ১০ টাকার নোট ঘাটতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি নোট ফর্মের কিছু সঙ্কট ছিল। আকাশপথে সে নোট ফর্ম তৈরির জন্য কাগজ ইতোমধ্যেই নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের কাছে যা আছে তা দিয়ে বিতরণ শুরু হবে। পরে প্রয়োজনে টাকা ছাপানো হবে। আশাকরি কোন সময়েই সঙ্কট অনুভূত হবে না। তিনি বলেন, নোট যাতে কালোবাজারি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নিতে পারবেন। এদিকে রাজধানীর মানুষের জন্য বরাবরের মতো ১৮টি বিশেষ শাখায় নতুন নোট ছাড়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ে ১টি ভিআইপিসহ মোট তিনটি কাউন্টারে নতুন নোট বিতরণ করা হবে। এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখার মাধ্যমে নতুন নোট ও কয়েন বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে ১২টি শাখায় ১ থেকে ৫০ টাকার নোট ও কয়েন এবং বাকি ৮টি শাখায় ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বিতরণ করা হবে। ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে ২টি এবং অন্যান্য অফিসে সর্বোচ্চ ২টি কাউন্টারে নতুন নোট পাওয়া যাবে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে অবস্থিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৩টি শাখা ও বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২টি শাখার মাধ্যমে নতুন নোট দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন নোট বিনিময়কালে ক্যাশ কাউন্টারের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও মতিঝিল অফিসের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হবে। এ টিম সার্বক্ষণিক ও সরেজমিনে নোট বিতরণসহ অন্যান্য বিষয়গুলো তদারকি করবে। এদিকে নতুন নোট বিতরণ শুরুর আগেই বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল নোট কারবারিরা। সারা মাস জুড়েই আইনশৃঙ্খলার বাহিনী একাধিক অভিযানে ধরা পড়েছে জাল নোট প্রস্তুতকারী একাধিক চক্র। এমনকি রবিবার সকালে অভিযান চালিয়ে রাজধানী থেকে ৫ জাল নোট কারবারিকে আটক করেছে র‌্যাব। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন নোট বিতরণে সতর্কতার পাশাপাশি জাল নোট ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা সুপারিশ এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাবর। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাল নোট বিষয়ক সভায় এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে হ্যান্ডবিল বিতরণ ও টিভিতে ভিডিওচিত্র প্রচারের পাশাপাশি মেশিন বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চায়, এবার যেন রাস্তায় টাকা বিক্রি না হয়। এবার যেন ব্যাংক থেকে টাকা সরাসরি মানুষের হাতে পৌঁছায়। এ ব্যাপারে বিশেষভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোঃ হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) নিকট এসব মেশিন হস্তান্তর করা হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিতরণ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা চাইলে নিজ উদ্যোগে এসব মেশিন সংগ্রহ করতে পারবেন। ২০০০ টাকার মধ্যেই এ মেশিন কেনা সম্ভব। নতুন নোট পাওয়া যাবে যেসব শাখায় ॥ রাজধানীতে যেসব শাখায় এই নতুন নোট বিতরণের জন্য বিশেষ কাউন্টার খোলা হচ্ছে সেগুলো হলো-পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, জনতা ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের এলিফ্যান্টরোড শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বনানী শাখা, প্রাইম ব্যাংকের মালিবাগ শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের কাওয়ান বাজার শাখা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা সিটি মার্কেট শাখা, উত্তরা ব্যাংকের চকবাজার শাখা, সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখা, ওয়ান ব্যাংকের বাসাবো শাখা, প্রাইম ব্যাংকের মিরপুর শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড এগ্রিকালচার ইউনিট দক্ষিণখান শাখা, ব্যাংক এশিয়ার ধানম-ি শাখা, ইসলামী ব্যাংকের শ্যামলী শাখা, ঢাকা ব্যাংকের উত্তরা শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের মোহাম্মাদপুর শাখা, রূপালী ব্যাংকের মহাখালী শাখা এবং জনতা ব্যাংকের আব্দুল গণি রোড কর্পোরেট শাখা।
×