ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অশান্ত বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৯ জুন ২০১৫

অশান্ত বিশ্ববিদ্যালয়

ভিন্ন ভিন্ন দাবির ইস্যুতে অশান্ত হয়ে উঠছে দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনের কারণে বুয়েট অনির্দিষ্টকাল বন্ধ, ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের চাকরির দাবিতে বেকায়দায় পড়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বুয়েট বন্ধ ঘোষণার পর বিভিন্ন আবাসিক হলের নোটিস বোর্ডে সেঁটে দেয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিকেল পাঁচটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে হল ত্যাগ করার নির্দেশে বিপাকে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। অনেককেই অনিশ্চয়তার মধ্যে হল ছাড়তে হয়। এমনিতেই দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে এক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। চলতি বছর এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার মানের ওপর এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থানভিত্তিক এ তালিকা তৈরি হয়। দেশের উচ্চশিক্ষায় এই মানগত অবস্থান কোনভাবে স্বস্তিদায়ক হতে পারে না। সময়ের ধারায় আজ সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮০টির উপরে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। বুয়েটের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান, শিক্ষকের মান এবং শিক্ষার পরিবেশও প্রশংসাযোগ্য। সারাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রথম আকর্ষণ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত দুই দশক ধরে নানা অস্থিরতার কারণে অতীতের গৌরবও ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অস্থির রাজনীতির কালো ছায়া পড়েছে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ক্ষমতায় যেতে এবং ক্ষমতায় থাকতে এক সময় ব্যবহার করা হতো ছাত্রদের। ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে ছাত্রদের হাতে বইয়ের পরিবর্তে অস্ত্রও তুলে দেয়া হতো। এখন ওই অবস্থার পরিবর্তন হলেও মানগত দিক পরিবর্তন হয়নি। বিগত প্রায় দুই দশক ধরে শিক্ষক রাজনীতিও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। আজ বুয়েট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা অতীতেরই যেন পুনরাবৃত্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষা-বিরুদ্ধ এমন কর্মকা- বন্ধ করা দরকার। এক সময় বুয়েট ছিল শান্ত ক্যাম্পাস। ছিল সেশনজটমুক্তও। দ্রুত শিক্ষাজীবন শেষ করার প্রত্যাশায় ছাত্রছাত্রীরা এখানে ভর্তি হতেন। কিন্তু বর্তমানে সেই শান্ত ক্যাম্পাসই পরিণত হয়েছে অশান্ত ক্যাম্পাসে। পরীক্ষা পেছানোর ঘটনাকে ইস্যু করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তোলা, পরিণামে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা কোনটাই প্রত্যাশিত নয়। বেশ কিছুদিন আগে ভিসি বদল, ভিসি নিয়োগ নিয়ে নানা আন্দোলন করে অনেক সময়ের অপচয় হয়েছে। একইভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাও প্রত্যাশিত নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যে কোন দেশের জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে যে কোন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ক্ষেত্রে বলা যায়, এতে দেশে উচ্চশিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের বিকল্প নেই। দেশের ভবিষ্যত যারা, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচী সব সময় পরিত্যাজ্য হওয়া উচিত।
×