ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রেসক্লাব ॥ প্রশ্ন যখন উঠেছে তখন বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৯ জুন ২০১৫

প্রেসক্লাব ॥ প্রশ্ন যখন উঠেছে তখন বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার

ভেবেছিলাম জাতীয় প্রেসক্লাব নিয়ে লিখব না। ক্লাবের মর্যাদা ও শান্তি-শৃঙ্খলাবিরোধী যে অশুভ শক্তি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে কুক্ষিগত করে দুর্নীতি ও লুটপাটের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের আখড়ায় পরিণত করেছিল তার প্রতিবাদে সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ক্লাবকে লুটেরা ও জামায়াতী দখল থেকে মুক্ত করা হলো। তখনও কিছু দ্বিতীয় শ্রেণীর পত্রিকা এবং বাইরের সুযোগসন্ধানীরা তৎপর রইল, এমনকি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদে তানজীব আলম সিদ্দিকী নামে একজন স্বতন্ত্র সদস্য এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে প্রেসক্লাব সম্পর্কে অসত্য, অনভিপ্রেত এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রাখলেন, তখন আমাকেও কলম ধরতে হলো। বিষয়টি যখন উঠেছে তখন পরিষ্কার হওয়া দরকার। যেহেতু ক্লাব ম্যানেজিং কমিটির পক্ষে আমি (সভাপতি) বা অপর কেউ সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখার এখতিয়ার নেই, সেহেতু কলম ধরা ছাড়া উপায় কি? এ জায়গাটায় আমরাও সার্বভৌম। আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেইসব অগ্রজকে যাঁদের সাহস, সংগ্রাম ও ক্ষুরধার কলম আমাদের প্রিয় প্রেসক্লাবকে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা ও ভরসার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছিলেন, জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়েছেন। এই প্রেসক্লাব থেকেই ১৯৬১ সালে সামরিক জান্তা আইয়ুবের প্রেস সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে বর্ষীয়ান সম্পাদক মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল; এই প্রেসক্লাবে এসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের সাংবাদিকতার তিন পথিকৃৎ আবদুস সালাম, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও জহুর হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করে ‘পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’ ব্যানার হাতে ঢাকায় ১৯৬৪ সালের দাঙ্গাবিরোধী মিছিল করেছিলেন, সেইসঙ্গে তিন পথিকৃতের কাগজ অবজারভার, ইত্তেফাক ও সংবাদে ‘পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনাম দিয়ে অভিন্ন সম্পাদকীয় রচিত হয়েছিল; এই প্রেসক্লাব থেকেই সেনাশাসক জিয়ার সামরিক শাসনবিরোধী মিছিল বেরিয়েছিল ১৯৭৮ সালে এবং এখান থেকেই সেনাশাসক এরশাদের সংবাদপত্র দলনের বিরুদ্ধে ২৬ দিন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অবশ্য এসব কথা ওই সংসদ সদস্যের জানার কথা নয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ জাতীয় প্রেসক্লাবের জন্মের (১৯৫৪) আগে থেকেই প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীল এই দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। তারপরও তাদের আদর্শগত দ্বন্দ্বে পেশাগত সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব কোনদিন বিনষ্ট হয়নি। বিনষ্ট হতে শুরু করে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ এবং ’৭৫ পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবির-রাজাকারদের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেয়া শুরু হলে। এমনকি শহীদ সিরাজউদ্দীন হোসেন, শহীদ শহীদুল্লা কায়সারের মতো প্রথিতযশা সাংবাদিকদের হত্যাকারী আল বদরদের পর্যন্ত সদস্যপদ দেয়া হয়, অথচ বাংলাদেশের প্রধান কবি ও দৈনিক বাংলা সম্পাদক শামসুর রাহমানসহ প্রগতিশীল চেতনায় বিশ্বাসীদের সদস্যপদ প্রদান থেকে বঞ্চিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিক্রিয়াশীল অংশটি মিলিটারি জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপিতে ঢুকে পড়ে, যাতে একাত্তরের পরাজিত মুসলিম লীগ, জামায়াত-শিবির-রাজাকার-আলবদর রয়েছে, যাদের দখলে এখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালে সাংবাদিক ইউনিয়নও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। তখন আদর্শিক কারণ ছাড়াও আরেকটি কারণ ছিল নেতৃত্ব। ’৯০-এর পর জনকণ্ঠসহ বেশকিছু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংবাদপত্র প্রকাশিত হওয়ায় পাকিপন্থী ফোরাম ভোটের দিক থেকে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ আর পাকিস্তানপন্থীরা এক-তৃতীয়াংশ, যে কারণে তারাই ইউনিয়ন ভেঙ্গে দু’ভাগ করে। তখন ক্ষমতায় বিএনপি। বর্তমানেও ইউনিয়নে আমাদের ভোটার তিন হাজারের মতো আর ওদের এক হাজার। কিন্তু প্রেসক্লাবে পাকিস্তানপন্থী গং ক্লাব গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে তিনবারে দুই শতাধিক সদস্য করে ভোট বাড়িয়ে ক্লাব দখল করে। এরশাদের শেষের দিকে জাতির পিতার খুনীদের দল ফ্রিডম পার্টি প্রেসক্লাবে সমাবেশ করতে এলে গোলাগুলিতে এক যুবক নিহত হয়। এর প্রতিবাদে ম্যানেজিং কমিটির ৮ জন সদস্য পদত্যাগ করেন। পরে একজন তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিলে শওকত-মোজাম্মেল (মৃত)রা একজনকে কো-অপট করে একবারে ৬২ জনকে সদস্যপদ প্রদান করে, যাদের সবাই ইনকিলাব, সংগ্রাম, দৈনিক দেশ পত্রিকার। ক্লাবের ম্যানেজিং কমিটি ১৭ সদস্যের যেমন : একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, দু’জন যুগ্ম সম্পাদক, একজন কোষাধ্যক্ষ, দশজন নির্বাহী সদস্য। এই কমিটি ইচ্ছে করলে অনুর্ধ দু’জনকে কো-অপট করতে পারে। সদস্যপদও দেয়া হয় ম্যানেজিং কমিটির ন্যূনতম ১২ জন সদস্যের ভোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে- তবে একজন যদি কারও বিরোধিতা করে, প্রকাশ্যে বা গোপন ব্যালটে, তার সদস্যপদের আবেদন বাতিল হয়ে যায়- যাকে বলা হয় ব্ল্যাক বল। যেমন : কবি শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে ব্ল্যাক বল দেয়া হয়। এই প্রেসক্লাবে একদিন সেনাশাসক এরশাদকে পর্যন্ত ঢুকতে দেয়া হয়নি, অথচ শওকত-গাজীদের হাত ধরে সংগ্রাম, নয়াদিগন্তীরা ক্লাবে ঢুকে পড়ে। ফাঁসির দ-প্রাপ্ত দুই আলবদর কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানকে সদস্যপদ দান, পরে সদস্যদের আন্দোলনের মুখে বাতিল করা হয়। এখনও কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা তাসনিম আলম ক্লাবের সদস্য। খোঁজ করলে হয়তো আরও বের হবে। আগেই বলেছি, একজনকে কো-অপট করে প্রথমে ৬২ জনকে সদস্য করে, তারপর ২০০৪ সালে এক রাতে ১১৩ জনকে সদস্যপদ দিয়ে দেয়। সে কমিটিতে দু’জন সদস্য ব্ল্যাক বল দিলেও তা সভার প্রসেডিংসে লেখা হয়নি- সদস্যদ্বয় আদালতে মামলা করলে তৎকালীন খালেদা সরকারের ক্ষমতার দাপটে তা খারিজ করে দেয়া হয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চার শতাধিক সদস্যের দরখাস্ত বাছাই হয়ে পড়ে থাকে। দরখাস্তকারীরা আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের আন্দোলনের মুখে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে তখনকার কমিটি ব্যর্থ হয়। যাতে করে গঠনতান্ত্রিক সঙ্কট দেখা দেয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের মেয়াদ (দুই বছর) ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সিনিয়র সদস্যরা এগিয়ে আসেন ক্লাবের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে- দুই পক্ষে ৫ জন করে + ১০ জনের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। তারা ম্যানেজিং কমিটিকে পরামর্শ দেবেন, সবুজ-আবদাল কমিটিকে ৩১ মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয়- প্রক্রিয়াটি ছিল : স্বাধীনতার পক্ষের বাছাই করা ১৪৮ জনকে সদস্যপদ দিয়ে দেবেন, অর্ধশতাধিক ভুয়া সদস্য রয়েছে তা বাতিল করা হবে। এভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করে একটি বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। এবারও সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়- ১৭১ জনকে সদস্য করা হয়, যাতে স্বাধীনতার পক্ষের ১৪৮ জনের মধ্যে মাত্র ৭৬ জন, বাকি ৯৫ জনকে দেয়া হয় আমার দেশ, নয়াদিগন্ত পত্রিকা ও টিভি, সংগ্রাম, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা- সবই জামায়াতপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের। এমনকি বিতর্কিত মাহমুদুর রহমানকে সদস্য করার চেষ্টা করলে সাধারণ সদস্যদের আপত্তির মুখে তা পারেনি। এভাবে তারা একতরফাভাবে দুই শতাধিক সদস্য তথা ভোট বাড়িয়ে ক্লাবের ভারসাম্যহীনতা নষ্ট করে। প্রেসক্লাবের বর্তমান স্থায়ী সদস্য সংখ্যা ৬২৫-এর মতো। সমঝোতা কমিটি আরও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, যেহেতু তখনও সবুজ-আবদালরা ক্ষমতায়, সেহেতু তারা সাধারণ সম্পাদকসহ ১০, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সভাপতিসহ ৭ মোট ১৭ জন। এই ১৭ জন একসঙ্গে নমিনেশন ফাইল করবেন। নির্বাচনের পর নয়া ম্যানেজিং কমিটি নতুন সদস্য করার মাধ্যমে ভারসাম্যহীনতা দূর করবে। সেইমর্মে ২৮ মে ২০১৫ দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন ঘোষণা করা হয়। দেখা গেল সমঝোতা কমিটিকে বাইপাস করে ১০ সদস্যের মধ্যে ওদের পক্ষের শওকত মাহমুদ (খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা) ও রুহুল আমিন গাজী এবং গনি হঠাৎ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নমিনেশন পেপার বাক্সে ফেলে সমঝোতা ভেঙ্গে দেয়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি একযোগে পদত্যাগ করে। কিন্তু ক্লাবের ভোটাররা এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় এবং নির্ধারিত ২৮ মে ২০১৫ দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করে এবং প্রবীণ সদস্য এম. শাজাহান মিয়াকে সভাপতি এবং একটি নির্বাচন কমিটি করে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন করে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিকে নির্বাচিত করে। উল্লেখ করা দরকার, দুই পক্ষের ৫ জন করে ১০ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটিতে ছিলেন- একদিকে গোলাম সারওয়ার, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মন্জুরুল আহসান বুলবুল, হাসান শাহরিয়ার, কুদ্দুস আফ্রাদ এবং অন্যদিকে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, শওকত মাহমুদ, খোন্দকার মনিরুল আলম, রুহুল আমিন গাজী ও এম এ আজিজ। সমঝোতা কমিটির সদস্যই যখন সমঝোতা ভেঙ্গে দিলেন তখন প্রতিবাদ করে ঐ পক্ষের সমঝোতা কমিটির সদস্য খোন্দকার মনিরুল আলমের নেতৃত্বে আমানুল্লাহ কবীর, কামরুল ইসলাম চৌধুরীসহ একটি বড় অংশ ২৮ মে ২০১৫-এর দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচনে অংশ নেয়। ও-পক্ষ অংশ নেয়নি। এভাবে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি টহড়ঢ়ঢ়ড়ংবফ নির্বাচিত হয়। খোন্দকার মনিরুল আলম (ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি) বর্তমান কমিটির নির্বাহী সদস্য। এই প্রক্রিয়া পুরোটাই ক্লাব গঠনতন্ত্র অনুসরণ করেই সম্পন্ন করা হয়। গঠনতন্ত্রের ৩৪ অনুচ্ছেদের ঙহ মড়ড়ফ ভধরঃয বা সরল বিশ্বাস ফলো করে সমঝোতা কমিটি করা হয়, দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন হয় গঠনতন্ত্রে ১৪ অনুচ্ছেদ বলে। তারা এতদিন গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ক্লাবকে দীর্ঘদিন ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছিল এ কারণে যে, একদিকে লুটপাট, অন্যদিকে জামায়াত-শিবির-রাজাকারদের দাঁড়াবার জায়গা করে দেয়া। এদের দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র প্রকাশ করার লক্ষ্যে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভার সর্বসম্মত গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি ঈৎধফরনষব অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করে শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়- সেইমর্মে ‘গোলাম কিবরিয়া এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস’ ফার্মকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এই ফার্ম গত ১৫ জুন ২০১৫ থেকে কাজ শুরু করে। পরদিন শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী, আবদাল আহমদ ও কতিপয় বহিরাগত অতর্কিতে ক্লাব অফিসে প্রবেশ করে ‘কিসের অডিট, এখনই বেরিয়ে যাও, এরপর এলে জীবন নিয়ে ফেরত যেতে পারবে না’ বলে তাদের হুমকি দেয়। অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এর দু’দিন আগে গভীর রাতে অফিস কক্ষে তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে একটি আলমারি ভেঙ্গে, যেটাতে ক্লাবের জরুরী কাগজপত্র থাকত, তছনছ করা হয় এবং কাগজপত্র চুরি হয়ে যায়। সংসদে তানজীবের অনধিকার চর্চা আগেই বলেছি, তানজীব আলম সিদ্দিকী হঠাৎ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে যে অসত্য ও অনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন তা স্রেফ অনধিকার চর্চা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী তানজীব যেসব কথা বলেছেন তা প্রথমত সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি কোন অনুপস্থিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ করা অনুমোদন করে কিনা, দ্বিতীয়ত অনধিকার চর্চা কিনা, তা আমাদের প্রশ্ন। তার কথাবার্তায় বোঝা গেল তিনি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে যেমন সীমিত জ্ঞান রাখেন, তেমনি জাতীয় প্রেসক্লাব, যে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান সে সম্পর্কেও তার জ্ঞান সীমাবদ্ধ। বিগত দিনে তারা ক্লাব গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ক্লাবকে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী জামায়াত-শিবির-রাজাকার-আলবদরদের আখড়ায় পরিণত করে। রাতে ক্লাব ভবনে গোপনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের চক্রান্ত চালাত বলেও শোনা গেছে। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি ক্লাব দখল করেনি, বরং ঐ দুর্নীতিবাজ লুটেরা এবং জামায়াত-শিবির-আলবদর ও তাদের সহযোগীদের কবল থেকে দখলমুক্ত করেছে। এরপরও জামায়াতী অর্থে লালিত লুটেরা গোষ্ঠী নির্বাচিত বৈধ ম্যানেজিং কমিটি সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলছে তানজীবও সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে একই ভাষা ব্যবহার করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, মুক্তিবুদ্ধির চর্চা, অসাম্প্রদায়িকতা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে অতীতের অশুভ শক্তির রাহুমুক্ত করে এর সম্মান ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে চলেছে। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। প্রেসক্লাব আশা করে তানজীব আলম সিদ্দিকী তার এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেবেন। ঢাকা- ২৬ জুন ২০১৫ লেখক : সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×