ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

আজ নৃত্যাঞ্চলের কত্থক নৃত্য কর্মশালার পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৯ জুন ২০১৫

আজ নৃত্যাঞ্চলের কত্থক নৃত্য কর্মশালার পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রুমঝুম রুমঝুম বাজছে নূপুরের মধুর শব্দধ্বনি। আর নূপুর পায়ে কত্থক নৃত্যের অনুশীলন করছে একঝাঁক শিক্ষার্থী। তাঁদের সযতেœ কত্থকের নানা করণকৌশল শেখাচ্ছেন ভারতের প্রখ্যাত কত্থক নৃত্যশিল্পী মালতি শ্যাম। মুদ্রা, অভিব্যক্তি থেকে শুরু করে নাচের ভেতরের অভিনয়- এমন নানা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। রবিবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনের মহড়া কক্ষে এই দৃশ্যের দেখা মিলল। নৃত্য সংগঠন নৃত্যাঞ্চল আয়োজিত মালতি শ্যাম পরিচালিত এই কত্থক নৃত্য কমশালার সূচনা হয় ২১ জুন। অংশ নেয় নৃত্যাঞ্চলের ৭০ শিক্ষার্থী। দশ দিনের কর্মশালার সমাপনী দিন ছিল রবিবার। আজ সোমবার উপস্থাপিত হবে কর্মশালায় শিক্ষাপ্রাপ্ত নৃত্যের পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শিক্ষার্থী নৃত্যশিল্পীরা মেলে ধরবে কত্থকের সৌন্দর্যময়তা। সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমেই শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হবে কর্মশালার সনদপত্র। এরপর থাকবে তাঁদের নৃত্য পরিবেশনা। শিক্ষার্থী ছাড়াও পরিবেশনা পর্বে কত্থকের নান্দনিকতা ছড়িয়ে নাচ করবেন মালতি শ্যাম। কর্মশালা প্রসঙ্গে কথা হয় মালতি শ্যামের সঙ্গে। কথার শুরুতেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করেন এই খ্যাতিমান শিল্পী। বলেন, ওরা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি নিজেও আশা করিনি কত্থকের জটিল করণকৌশলগুলো এই শিক্ষার্থীরা এত সহজেই আয়ত্ত করবে। নাচের প্রতি এদের নিবেদিত মনোসংযোগ দেখে অভিভূত হয়েছি। যে কোন কিছু একবার দেখিয়ে দিলে অনায়াসেই তা গ্রহণ করতে পেরেছে। প্রত্যেকের ভেতর কাজ করেছে প্রবল অনুপ্রেরণা। এই নৃত্যশিক্ষার্থীদের দেখে উপলব্ধি হলো যে ভারতের বাইরেও কত্থক নৃত্যের চর্চা হচ্ছে। এমনকি ভারতেও শিখতে আগ্রহী এমন নিবেদিত প্রাণ নৃত্যশিক্ষার্থীর দেখা পাই না। এখন মনে হচ্ছে, এক সময় এদেশ থেকেও উঁচুমানের কত্থক নৃত্যশিল্পী বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষ প্রসঙ্গে এই শিল্পী বলেন, এখানে এলে মনে হয় নিজের ঘরে এসেছি। সবার ভালবাসায় আপ্লুত হতে হয়। আর আতিথেয়তাতো আছেই। এদেশের মানুষের অনেক অনেক ভালবাসা সঙ্গে নিয়ে কাল মঙ্গলবার নিজ দেশে ফিরে যাব। নৃত্যাঞ্চলের এই কর্মশালার তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক দেশবরেণ্য নৃত্যশিল্পীযুগল শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ। আজকের পরিবেশনায় শিক্ষার্থীরা কি ধরনের পোশাক পরবে কিংবা কে কোন দায়িত্ব পালন করবেÑ দু’জন মিলে এসব খুঁটিনাটি নানা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। মহড়া কক্ষে তাঁদের এই কর্মব্যস্ত সময়ের মাঝেই কথা হয় শিবলী মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি বছরই নৃত্যাঞ্চল একজন করে গুরু পর্যায়ের নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার কর্মাশালা পরিচালনা করলেন এ সময়ের ভারতের আলোচিত কত্থক নৃত্যশিল্পী মালতি শ্যাম। রোজার এই সময়টাতে স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে কর্মশালাটি সম্পন্ন করলাম। আর এ ধরনের কর্মশালা শিক্ষার্থীদের শাণিত করে। বাচ্চারা নতুন কোন গুরুর কাছ অনেক কিছু শেখার সুযোগ পায়। এবারের কর্মশালায় তারা কত্থকের নতুন কিছু করণকৌশল আয়ত্ব করেছে। এসবের মধ্যে আছে ভজন, বন্দনা, তারানা ও অভিনয়ের বিষয়টি। এছাড়া টুকরা, তেহাই, পরন, লারিÑ এমন নানা পদ্ধতি ধাতস্থ করেছে। কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে বৈশাখী, স্নাতা, অরুনিমা, অণ্বেষা, রুমঝুম, শশীসহ সত্তরজন শিক্ষার্থী। প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, অনেক কিছু শিখতে পারলাম এই কর্মশালার মাধ্যমে। এখন নাচটা আরও নিখুঁতভাবে ধাতস্থ করতে পারলাম। এছাড়া নাচের সঙ্গে যুক্ত অভিনয়টাও রপ্ত করতে হয়েছে এই কর্মশালার মাধ্যমে। নাচের ভেতর দাপুটে অভিনয়ের আঙ্গিক ফুটিয়ে তোলার পরিবর্তে কোমলতা অনুধাবনের বিষয়টি নতুন করে জানতে পেরেছি।
×