ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আধুনিকতার কবি আবুল হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৯ জুন ২০১৫

আধুনিকতার কবি  আবুল হোসেনের  প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী  আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আধুনিক বাংলা কবিতার পথিকৃৎ কবি আবুল হোসেন। থরথর কম্পন তোলা আবেগের পরিবর্তে কবিতার শরীরজুড়ে সৃজন করেছিলেন বাকসংযম। উচ্ছ্বাসের রংকে ছাপিয়ে পরিশীলন প্রবণতাই ছিল তার কাব্যের বৈশিষ্ট্য। আর এভাবেই কবি আবুল হোসেন বাংলাদেশ ও বাংলা কবিতায় আধুনিক বোধ ও মননের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। গত বছরের ২৯ জুন ৯২ বছর বয়সে শেষ হয় আধুনিকতার এই কবির জীবন পরিভ্রমণ। দেশের আধুনিক কবিতার অভিভাবকসম এই কবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। গত শতকের চল্লিশের দশকে মুসলিম পশ্চাৎপদতায় আক্রান্ত এ ভূখ-ে কবিতায় আধুনিকতাকে ধারণ করে স্ব-মহিমায় আবির্ভূত হয়েছিলেন আবুল হোসেন। তার কবিতায় শুধু ছন্দ নয়, ছিল চিন্তার খোরাক। সেটা ছিল বিস্ময়কর। তার পথ ধরেই পরবর্তীতে অনেক কবি আধুনিক কবিতার প্রতি ধাবিত হয়েছেন। কবিতায় তার চিন্তশীলতা কখনও এক জায়গায় থেমে থাকেনি। শুধু ছন্দ বা রূপক-উপমার ব্যবহারে নয়, কবিতা নির্মাণে মননশীলতা ছিল বিস্ময়কর। ১৯৪০ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ নববসন্ত আধুনিক বাংলা কবিতায় এক তাৎপর্যবহ ঘটনা। এই গ্রন্থে হৃদয়ানুভবের সঙ্গে আবেগের পরিমিত ব্যবহার, মিতকথন ও ইঙ্গিতময়তার মধ্য দিয়ে সামাজিক অসঙ্গতির উন্মোচন আধুনিক কবিতাকে দিয়েছে নতুন গতিপথের সন্ধান। কবিতা ছাড়াও অনুবাদ ও ভ্রমণ কাহিনীতে রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য অবদান। ‘আমার এই ছোট ভুবন’সহ আত্মজৈনিক বেশ কিছু গ্রন্থে বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির বিশ্বস্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ বিরস সংলাপ, তোমার কি দুঃসাহস, দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে, এখনও সময় আছে, রাজকাহিনী। ২০১০ সালে লিখেছিলেন সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ যাবার আগে। প্রখ্যাত উর্দুভাষী কবি ইকবালের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন তিনি। বিবিধ গদ্য শিরোনামে প্রবন্ধ গ্রন্থ, অরণ্যের ডাক শিরোনামে অনুবাদ উপন্যাস এবং আমার এই ভুবন ও আর এক ভুবন শিরোনামে স্মৃতিকথাও রয়েছে তার। বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের যে কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সংস্পর্শ পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আবুল হোসেন। এছাড়া রূপসী বাংলার জীবনানন্দ দাসের সঙ্গেও ছিল তার সখ্য সম্পর্ক। ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার আড়াডাঙা গ্রামে কবি আবুল হোসেনের জন্ম। শৈশব কেটেছে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে, যৌবন কলকাতায় আর পরবর্তীতে বাংলাদেশে বসবাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও পরে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। সরকারী চাকরি দিয়ে শুরু করেন কর্মজীবন। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুগ্মসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরে যাওয়ার পর ধানম-ির বাড়িতেই কেটেছে জীবনের বাকিটা সময়।
×