ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সারাবছরই ভেজালের ছড়াছড়ি- কেবল রমজানে অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৯ জুন ২০১৫

সারাবছরই ভেজালের ছড়াছড়ি- কেবল রমজানে অভিযান

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ খাঁটি ঘি, খেজুর, সেমাইসহ রমজানে কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের বাজার খুবই চাঙ্গা থাকে। আর এই অবস্থা ঘিরেই শুরু হয় ভেজালের মাতামাতি। ফলে রং, আটা, ময়দা, সুজি ও দেহের জন্য ক্ষতিকারক আইকা গাম দিয়ে খাঁটি ঘি তৈরির অপপ্রয়াস চালায় উৎপাদকরা। ভেজাল পণ্যে রংচটা স্টিকার লাগিয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এসব ভেজাল পণ্য বাজারজাত হয়ে আসছে। ফলে কোনটি খাঁটি আর কোনটি ভেজাল এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন ক্রেতা সাধারণ। বিদেশভিত্তিক প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ার কারণে ক্রেতার ধারণার বাইরে চলে যায় পণ্যের গুণাগুণ। অথচ সারা বছরই চলে ভেজাল পণ্যের রমরমা ব্যবসা। কিন্তু রমজান এলেই শুরু হয় অভিযানের মাধ্যমে ভেজাল প্রতিরোধের তোড়জোড়। বছরের বারো মাসের এক মাস জেলা প্রশাসন, চসিক ও পুলিশ এ ভেজাল অভিযানে নেমে অসাধু ব্যবসায়ীদের পাকড়াও করাসহ প্রতিষ্ঠান সিলগালা করার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, বছরের বাকি এগারো মাস কি ভেজাল হয় না। নাকি এক মাসের অভিযানে বাকি এগারো মাস বিশুদ্ধতায় ভরা থাকে বাজার এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ভোক্তাদের মাঝে। ভোক্তাদের দাবিÑ সারা বছর কিভাবে ভেজালমুক্ত রাখা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তৎপর থাকলে ভোক্তাদের পক্ষ থেকেও ভেজালকারীদের তালিকা জানানো হবে। ভোক্তাদের প্রশ্নÑ সারা বছরই অসাধু কারখানা মালিক, উৎপাদক শ্রেণী ও সরবরাহকারীরা ভেজাল পণ্য বাজারজাত করার মধ্য দিয়ে ভোক্তাদের বিষিয়ে তুলছে। ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি লেগেই রয়েছে। রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। এক্ষেত্রেও বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজার থেকে তুলে না নেয়ায় অসাধু বিক্রেতারা তা রোগীদের কাছে বিক্রি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, প্রশাসন ইচ্ছে করলে সারা বছরই ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এতে ভোক্তাসহ আমদানিকারক ও পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতা সকলেই সচেতন থাকার প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকত। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত শনিবার নগরীর আন্দরকিল্লা ও চাক্তাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে ভেজালের কারণে দেড়লাখ টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে আন্দরকিল্লার হারুনুর রশীদের মালিকানাধীন আলবেনী ফুডস এ্যান্ড বেকারিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। চাক্তাই এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির কারণে মীর আহসান উল্লাহর মালিকানাধীন ভাই ভাই বেকারিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই এলাকায় ইদ্রিক খোকনের মালিকানাধীন লাচ্ছা সেমাই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে নোংরা পরিবেশে সাবান তৈরির অপরাধে আবদুর রহমান মালিকানাধীন কারখানাটি সিলগালা করে দেয়া হয়। অপরদিকে গত ২৫ জুন আছাদগঞ্জ এলাকার খুইলামিয়া মার্কেটে ভেজাল ঘি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ টন ঘি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘি আটা, সুজি, ডালডা, আইকা গাম ও রঙের ব্যবহার করে ‘বাঘাবাড়ির আসল গাওয়া ঘি’ নামে বাজারজাত করে আসছিল মালিক ইব্রাহিম। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল কায়সারের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানোর আগ মুহূর্তে মালিক পক্ষ সটকে যায়। ফলে ভেজাল ঘি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। গত ২২ জুন বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামিম আল ইয়ামিনের নেতৃত্বে ছয়টি ভেজাল সয়াবিন তেল কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানাগুলো সিলগালা করে ৫ মালিককে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও একজনকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ কারখানাগুলো থেকে প্রায় ২৫ টন সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। গত ১৭ জুন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম ২০ কোটি টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ হাজার কার্টন খেজুর ও কিশমিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমদানিকারক হতে তিন পাইকারি ক্রেতাকেও গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন দোলন বড়ুয়া, মাহবুবুর রহমান ও নাজিম উদ্দিন। এসকে দত্ত নামের আমদানিকারককে এক বছরের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের অপরাধে। অপরদিকে এ ঘটনায় আমদানিকারকের ক্রেতা তথা পাইকারি তিন বিক্রেতার প্রত্যেককে ৬ মাসের দ- দেয়া হয়েছে। গত ১৬ জুন গভীর রাতে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ রেয়াজুদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪ হাজার কার্টন মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর উদ্ধার করে। তবে ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা যায়নি।
×