ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব অর্থনীতি শীঘ্রই আরেকটি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৯ জুন ২০১৫

বিশ্ব অর্থনীতি শীঘ্রই আরেকটি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে

কাওসার রহমান ॥ বিশ্ব অর্থনীতি ফের তলিয়ে যেতে পারে মন্দায়। আর তা গত শতকের ত্রিশের দশকের মতোই সারা দুনিয়াকে অতল গহ্বরে ঠেলে দিতে পারে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা এখন থেকেই বাংলাদেশকে সতর্ক হতে বলেছেন। বিশেষ করে মুক্তবাজারের নামে সবকিছু উন্মুক্ত করে না দিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংরক্ষণমূলক নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গবর্নর রঘুরাম রাজন সম্প্রতি লন্ডন বিজনেস স্কুল আয়োজিত এক সভায় এ ইঙ্গিত দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অর্থভা-ার বা আইএমএফের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এই মন্দা শুধু শিল্পোন্নত দুনিয়া বা সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রগুলোকে প্রভাবিত করবে না, সার্বিকভাবে মন্দার কোপে পড়তে পারে সারাবিশ্ব। তাই আগেভাগেই তার সমাধান সূত্রও বের করে রাখতে হবে।’ উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পূর্বাভাস যে গুটিকয়েক অর্থনীতিবিদ দিয়েছিলেন, রাজন তাদের অন্যতম। ২০০৫ সালে আইএমএফে থাকার সময়ে লেখা একটি গবেষণাপত্রে তিনি ওই মন্দার আভাস দেন। রঘুরাম রাজনের আগে গত মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মোড়ল বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকেও বড় ধরনের মন্দার আভাস দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ওই আভাস দিয়ে মন্দার কারণে চলতি ২০১৫ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কতটা হ্রাস পেতে পারে তারও একটা ইঙ্গিত দিয়েছে। বলেছে, চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে শতকরা ৩ ভাগ এবং আগামী বছর শতকরা ৩ দশমিক ৩০ ভাগ। অর্থাৎ মন্দার কারণে বিশ্ব প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ শতকের ত্রিশ দশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার শিকার হয়েছিল। ওই মন্দা কাটিয়ে উঠতে চার বছর সময় লেগেছিল। একইভাবে একুশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়, যা দেশটি এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠার পথে। এ অবস্থায় আবারও বৈশ্বিক মন্দার আভাস বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছেন। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন বেকারত্বের হার কমছে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি দেশটিতে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রমবাজারে যে গতি এসেছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। এর প্রভাব পড়েছে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হারে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কিছুটা বাড়িয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের চিন্তা হলোÑ নতুন যে মন্দার আভাস পাওয়া যাচ্ছে তা কি যুক্তরাষ্ট্র একা সামাল দিতে পারবে? অর্থনীতিবিদগণও বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের একার পক্ষে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা হ্রাস করা সম্ভব নয়। আবার ইউরোপীয় অর্থনীতির অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। বহু দেশের ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করছে। কিন্তু ইউরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন এবং অতি দ্রুত তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বিশ্ব অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে একটি চালিকাশক্তির মাধ্যমে, সেই চালিকাশক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশটির অর্থনীতি গোলাপের সুবাসিত মোহ নয় যে, তার সুবাসে বিশ্ব রক্ষা পাবে মন্দা থেকে। তবে বিশ্ব এক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা পাবে জ্বালানি তেলের বাজার থেকে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশসহ বেশকিছু দেশ আর্থিক লাভবান হবে। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে চীন এবং ভারত। এ দুটি দেশের অর্থনীতিতে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে। অপরিশোধিত তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি হ্রাস পাওয়ায় এর ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি কমবে এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাস পাওয়ায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। তবে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য রয়েছে অশনি সঙ্কেত। অশনি সঙ্কেত হলোÑ তেলের মূল্য আরও কমতে পারে এবং যে সব দেশ তেলের অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল তাদের আর্থিক বিপর্যয়ও অত্যাসন্ন। বিশ্বব্যাংকের ধারণা, রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে শতকরা ২ দশমিক ৯০ ভাগ। আর ২০১৬ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে শতকরা শূন্য দশমিক ১০ ভাগ। বৈশ্বিক মন্দার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনও বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কিছু চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে, যার প্রধান কারণ ছিল গৃহায়ন বুদ্বুুদ; যার সঙ্গে যোগ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাব-প্রাইম বন্ধকি বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের শিথিল নিয়ন্ত্রণ। আর্থিক খাত ও অর্থনীতিতে মন্দা এভাবে শুরু হওয়ার পর তা ছড়িয়ে পড়ে ওইসব শিল্পে, যেগুলো আর্থিক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো ২০০৭ সালে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এ লক্ষণগুলোর সমাধান করার নীতি গ্রহণ না করে বরং এমন নীতি গ্রহণ করা হয়, যা সমস্যাকে আরও বিস্তৃত ও গভীর করে ২০০৮ সালের শেষ দিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় রূপ নেয়। এ অর্থনৈতিক মন্দা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রুত সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, যদিও সবচেয়ে ক্ষতি করে বৈশ্বিক আর্থিক খাত, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং উন্নত অর্থনীতিকে। সেই ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্বব্যাংক যে পূর্বাভাস দিয়েছে সেটা মিলে গেলে তা হবে সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য বিপর্যয়কর। এতে সারাবিশ্বে অর্থবাজারে অস্থির অবস্থা বজায় থাকতে পারে। একইভাবে সরকারী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে সরকারকে ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদে ঋণ নিতে হবে। বাংলাদেশের মতো ছোট অর্থনীতির দেশগুলো কোনভাবেই দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি বা বড় অর্থনীতির দেশগুলোর নেতিবাচক নীতি থেকে মুক্ত নয়; যার ফলস্বরূপ বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার একটি বড় অংশকে এরা প্রভাবিত করে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। শুধু পাকিস্তানই নয়, অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে ভাল করছে। বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল গতিশীল। ২০০৮Ñ০৯ সালে উন্নত বিশ্বের অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব বিরাজ করেছে তা সারাবিশ্বের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তেমন আঘাত করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশের লোকেরা শ্রমিকের কাজ করে। দক্ষ কাজে বাংলাদেশের অংশীদার একেবারেই নগণ্য। ফলে বৈশ্বিক মন্দায় রেমিট্যান্স তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আবার দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। বাংলাদেশ মূলত স্বল্প মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করে। ফলে দেশের প্রধান রফতানি আয়ও খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বৈশ্বিক মন্দার ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়- উভয়েই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণেই গতিশীল থেকে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অংশীদার। তাই আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সমস্যা আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। এজন্য আমাদের আর্থিক খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে মিলে মন্দা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী বলেন, ‘নোট ছাপিয়ে উন্নত দেশগুলো বাজেট ঘাটতি মেটানোর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা বিনষ্ট হতে চলেছে। এতে নতুন বৈশ্বিক মন্দার পথ তৈরি হয়েছে। আগের মন্দায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বেঁচে গেলেও, এবারের মন্দার আঘাত আসবে। নষ্ট হবে পণ্য রফতানির সম্ভাবনা। তাই এখন থেকেই সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের রফতানি একটিমাত্র পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। মন্দায় আমাদের তৈরি পোশাক রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে নেমে আসবে। তাই রফতানি বহুমুখীকরণ করে তৈরি পোশাকের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। মাহবুব আলী বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কমে গেছে। পাঁচ-সাত বছর আগের পোশাক বিক্রি করে যে দাম পাওয়া যেত এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মন্দা দেখা দিলে তৈরি পোশাক রফানিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।’ আমদানি ও রফতানির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রফতানি গুণগত মান বজায় রাখার পরামর্শ দেন ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অর্থনীতির শিক্ষক। উল্লেখ্য, দেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পেন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এ্যানার এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কাপড়ের নিত্য পণ্যের দাম ৪০ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদনকারী এবং সরবরাহকারী দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে।’ গার্মেন্ট পণ্যের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে উৎপাদনকারী দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। রঘুরাম রাজনও একই অভিমত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দুনিয়াজুড়ে সব শীর্ষ ব্যাংককে সম্ভাব্য সঙ্কট এড়াতে একসঙ্গে আলোচনা করে একমত হয়ে পথ বার করতে হবে। তার ভিত্তিতেই স্থির করতে হবে নতুন নীতি। বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাংক নিজেদের বাঁচাতে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প নিয়ে একে অপরের সঙ্গে যে লড়াইয়ে নেমেছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সাবধান করেছেন রাজন। এখানে আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে দুনিয়াজুড়ে নির্বিচারে নোট ছাপানোর যে নীতি নেয়া হয়েছে, তার বিরূপ প্রভাবের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন রাজন। এর প্রভাব শুধু ঋণে সুদ কমানোয় সীমিত থাকে না, তা ছড়িয়ে পড়ে সব ক্ষেত্রে। এর পরিণামে উৎপাদন বাড়লেও আসলে তার পিছনে কোনও শক্ত ভিত থাকে না। এ প্রসঙ্গে রাজন বলেন, ‘এমন এক আর্থিক বৃদ্ধির পথে হাঁটতে চাইছে দুনিয়া, যার পিছনে কোন ভিত নেই। ফলে সম্পদ সৃষ্টির বদলে একটি দেশের উন্নতির বিনিময়ে এগোতে চাইছে আর একটি রাষ্ট্র।’ মূলত, ২০০৮-এর মন্দার পর থেকেই অর্থনীতির হাল ফেরাতে বাড়তি নোট ছাপিয়ে মুদ্রার দাম কমানোর খেলায় মেতেছে উন্নত দুনিয়ার একের পর এক রাষ্ট্র। তাদের যুক্তি হলÑ অর্থনীতিতে নগদের জোগান বাড়লে পণ্যমূল্যও বাড়বে। আরও দাম বাড়ার আশঙ্কায় বাড়বে কেনাকাটাও। যা উৎসাহ দেবে শিল্পোৎপাদনে। এতে কমবে ঋণে সুদ। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় কমবে, যা তার রফতানি বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে ওই দেশের আমদানিও কমবে। আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের হাত ধরে নোট ছাপিয়েই নগদের জোগান বাড়িয়েছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, এ প্রবণতা সংক্রামক, তাই সহজেই তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য দেশে। ফলে ২০১৩ থেকে একই রাস্তা নেয় জাপানের শীর্ষ ব্যাংক। জাপানের এ পদক্ষেপে কমতে থাকা পণ্যমূল্য বাড়ে। নেমে আসে ডলারে ইয়েনের দাম। ২০১২-র গোড়ায় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৭৬ ইয়েন, এখন তা ১২৩ ইয়েন, যা গত ৩০ বছরে সবচেয়ে কম। ইয়েনের এ নাটকীয় পতনে স্বাভাবিকভাবেই মার খায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের রফতানি। ফলে মুদ্রার দাম কমায় তারাও। চীনা পণ্য রফতানি বাজারে এগিয়ে যেতে শুরু করে। উন্নত দুনিয়ার রফতানির ওপর নতুন করে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। ফলে সক্রিয় হয় একই দুষ্টচক্র। মুদ্রার দাম কমানোর এ প্রতিযোগিতা নিয়েই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রঘুরাম রাজন, যাতে শেষ পর্যন্ত সব দেশের বৃদ্ধিই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। ১৯৩০-এর মন্দার সময়েও বিশ্বজুড়ে এ ছবিই ফুটে উঠেছিল বলে সতর্ক করেছেন তিনি। সে সময়ে অর্ধেক হয় বিশ্ববাণিজ্য, কর রাজস্ব, শিল্পের মুনাফা নেমে আসে তলানিতে। সাধারণ মানুষের আয়, কৃষি উৎপাদন, শেয়ার বাজার সব কিছুকেই গ্রাস করে ভয়াবহ মন্দা। ইতিহাসের সেই পুনরাবৃত্তি সম্পর্কেই দুনিয়াকে সাবধান করে দিয়েছেন রঘুরাম রাজন। এ প্রসঙ্গে প্রফেসর মাহবুব আলী বলেন, ‘নয়া মন্দার বিষয়ে এখন থেকেই আমাদের সাবধান হতে হবে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে সবকিছু উন্মুক্ত করে না দিয়ে কিছু কিছুক্ষেত্রে সংরক্ষণমূলক ভূমিকা নিতে হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সংরক্ষণমুলক নীতি গ্রহণ করে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দায় অর্থনীতি গতিশীল রাখতে আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারে অভ্যন্তরীণ বাজার। তাই অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টির দিকে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী বাজার সৃষ্টি করতে হবে। যাতে দেশেই শক্তিশালী চাহিদা তৈরি হয়। এতে শিল্প উৎপাদন অব্যাহত থাকবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
×