ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিতে আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৮ জুন ২০১৫

সেমিতে আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর্জেন্টিনাই হাসল শেষের হাসি। শনিবার ভোরে পেনাল্টি শ্যূটআউটে কলম্বিয়াকে পরাজিত করে লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। শেষ আটের লড়াইয়ে নির্ধারিত সময়ে কোন দলই গোলের দেখা পায়নি। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর পেনাল্টি শ্যূটআউটে জেরার্ডো মার্টিনোর দল ৫-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে শক্তিশালী কলম্বিয়াকে। রোমাঞ্চকর এই জয়ের পর পুরো আর্জেন্টিনা শিবিরেই স্বস্তি আর আনন্দ-উল্লাস। অন্যদিকে পেনাল্টি-ভাগ্যে হেরে হতাশ ব্রাজিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট কলম্বিয়া। কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার জেইসন মুরিলো বারের উপর দিয়ে বল বাইরে পাঠান। তখনই আর্জেন্টিনার হয়ে শ্যূট করতে আসেন কার্লোস তেভেজ। আর জুভেন্টাসের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার তেভেজের এই গোলেই সেমির টিকিট নিশ্চিত করে জেরার্ডো মার্টিনোর দল। শনিবার ম্যাচের পুরোটা সময় ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আর চরম নাটকীয়তা, যা পেনাল্টি শ্যূটআউটেও ছিল। লুকাস বিগলিয়া ও মার্কোস রোহো আর্জেন্টিনার পক্ষে নিজ নিজ সুযোগ নষ্ট করলে আকাশী-সাদা জার্সিধারীদের সেমির স্বপ্ন প্রায় শেষই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হয়ে দেখা দেন তেভেজ। যদিও পুরো ম্যাচেই কলম্বিয়ার হয়ে একা লড়ে গেছেন গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা। এদিন বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে টুর্নামেন্টের ফেবারিট আর্জেন্টাইনদের হতাশ করেন তিনি। চিলির ভিনা ডেল মারে প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই এককভাবে রাজত্ব করেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচের ৯০ মিনিট উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ কিছু ফাউলের ঘটনা ঘটে, যা প্রায় ম্যাচের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকেই নষ্ট করেছে। বেশিরভাগ সময়ই মেক্সিকান রেফারি রবার্তো গারসিয়ার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। এদিন ম্যাচ শুরুর সাত মিনিটেই এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার ক্রস থেকে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার জাভিয়ার পাস্তোরের প্রচেষ্টা গোলপোস্টের খুব কাছে থেকে রুখে দেন ওসপিনা। তিন মিনিট পর অধিনায়ক লিওনেল মেসি প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে ডি মারিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেন। তবে ওসপিনাকে একা পেয়েও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার তা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথমার্ধের ১২ মিনিটে ফাউল করার অপরাধে কলম্বিয়ার হয়ে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন দলের সেরা তারকা জেমস রড্রিগুয়েজ। এরপর একে একে সান্তিয়াগো আরিয়াস, এ্যালেক্সান্ডার মেজিয়া এবং হুয়ান কুয়াডারডোকে রেফারি সতর্ক করলে ম্যাচের স্বাভাবিক গতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। শুধু কলম্বিয়ানরা নয়, আর্জেন্টিনার হয়ে জাভিয়ের মাসচেরানো এবং সার্জিও এ্যাগুয়েরোকেও রেফারি হলুদ কার্ড দিয়ে সতর্ক করেন। ২৬ মিনিটে এ্যাগুয়েরো ও মেসির পরপর দুটি গোলের দারুণ সুযোগ রক্ষা করে ওসপিনা নিজের জাত চেনান। চলতি সপ্তাহে পিওতর চেকের সঙ্গে আর্সেনালের চুক্তি প্রায় নিশ্চিত বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর তাই গানার্সদের হয়ে ওসপিনার ভবিষ্যত এখন হুমকির মুখে। তবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের এই পারফর্মেন্স নিঃসন্দেহে আর্সেনালের কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারকে দ্বিতীয়বারের জন্য কিছুটা হলেও চিন্তা করতে বাধ্য করবে। ডানদিক থেকে পাস্তোরের ক্রস থেকে এ্যাগুয়েরোর শট ওসপিনা পা দিয়ে রক্ষা করেন। মেসির দুর্দান্ত হেড মুহূর্তের মধ্যে ওসপিনা কর্নারের মাধ্যমে রক্ষা করলে আর্জেন্টিনার এগিয়ে যাওয়া হয়নি। ৪০ মিনিটে রোহোকে কঠিনভাবে চ্যালেঞ্জের অপরাধে কুয়াডারডোকে হলুদ কার্ড দেখালে আর্জেন্টিনার ডাগআউট বেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। দলের সহকারী কোচ জর্জ পাটাসো একপর্যায়ে চতুর্থ রেফারির দিকে তেড়ে গেলে তাকে ডাগআউট থেকে স্ট্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঘটনাটিতে কুয়াডারডোর শুধুমাত্র হলুদ কার্ড পাওয়া অবশ্য তার জন্য সৌভাগ্যই বলতে হয়। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডির শট ৮০ মিনিটে অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দিয়ে ওসপিনা আরেকবার কলম্বিয়াকে রক্ষা করেন। তবে টাইব্রেকারে ওসপিনা আর পেরে উঠেননি। লিওনেল মেসি, এজেকুয়েল গ্যারেই, ইভার বেনেগা এবং ইজাকুয়েল লাভেজ্জির কাছ থেকে প্রথম চারটি গোলই আদায় করে নেয় জেরার্ডে মার্টিনোর দল। এরপর রোহো এবং বিগলিয়ার মিস। আর্জেন্টিনা শিবিরে সেমির টিকিট নিয়ে যখন সংশয় তখনই দুর্দান্তগতিতে পেনাল্টি শ্যূটে গোল করে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সাবেক ম্যানচেস্টার সিটির এই আর্জেন্টাইন তারকা। ম্যাচ শেষে পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন তেভেজ। আর তার প্রশংসায় মেতেছে কোচ এবং সতীর্থরা। সেমিফাইনালে এখন আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ব্রাজিল-প্যারাগুয়ে ম্যাচের বিজয়ী দল।
×