ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করা কঠিন’

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৮ জুন ২০১৫

‘আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করা কঠিন’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বার্সিলোনার হয়ে যতটাই সাবলীল লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনার হয়ে ততটা নন। অবশেষে তা বুঝতে পেরেছেন। আর তাইতো বলতেও দ্বিধা করেননি- ‘আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করা কঠিন।’ কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর মেসি জানিয়েছেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে গোল করা যে কতটা কঠিন, তা ভাবাই যায় না!’ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠে গেছে মেসির আর্জেন্টিনা। তবে খুব কষ্ট করে কোয়ার্টার ফাইনালের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। টাইব্রেকারে জিততে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। মেসি এখন পর্যন্ত ১টি মাত্র গোল করতে পেরেছেন। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোল করেই কোপা আমেরিকায় দেশের হয়ে গোল করেছেন মেসি। মেসি বলেছেন, ‘আমরা কোপা আমেরিকায় সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি। ঘটনাচক্রে আমরা খেলায় গোল করতে পারিনি। তবে পেনাল্টিতে আমরা ভাগ্যবান দল হয়েছি।’ এ জয়ের মধ্য দিয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে সেমিফাইনালে লড়াই হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো আর্জেন্টিনার। যদি ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি জিতে নিতে পারে। অবশ্য মেসি যতই বলুন জাতীয় দলের হয়ে গোল করা কঠিন; বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা কিন্তু মেসির জাদুময় ফুটবলের নেশাতেই বুদ হয়ে থাকেন। ব্রাজিলের উইলিয়ানই যেমন মেসির খেলা দেখতে পাগল হয়ে থাকেন। বলেছেন, ‘মেসি অতুলনীয়। সব কাজ বন্ধ রেখে সবাই তার খেলা দেখতে পছন্দ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেসি অনেকেরই আদর্শ ফুটবলার। অসাধারণ প্রতিভা দিয়ে টানা চারবার ফিফা বর্ষসেরার খেতাব জিতেছে সে।’ ২০১১ সালে কোপা আমেরিকা ফুটবলে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা উরুগুয়ের সঙ্গে হেরে। এবার আর বিদায় হয়নি। টাইব্রেকারে হলেও কলম্বিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা। উইলিয়ান আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলার আগাম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এবং বলেছেন, ‘এটা নিঃসন্দেহ দারুণ কিছু, ব্রাজিলের হয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা। সেমিতে যদি তাই হয়েই যায়, তা হবে মজার ব্যাপার। সবারই স্বপ্ন থাকে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা। আমরা প্রস্তুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।’ উইলিয়ান যে মেসির প্রশংসা করেই চলেছেন, তিনি এবার কোপা আমেরিকা জিতলে সাত ট্রফি জয়ের হাতছানির কাছাকাছি চলে যাবেন। ২০০৯ সালে পেপ গার্দিওলার অধীনে সম্ভাব্য ছয়টি ট্রফি জয় করেছিল মেসি-জাভি-ভিয়া’র বার্সিলোনা। বার্সিলোনা যেমন ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র ক্লাব হিসেবে এক বছরে ছয়টি শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়, ঠিক তেমনি কাতালান ক্লাবটির বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা ছয়টি শিরোপার স্বাদ পেয়ে অনন্য উচ্চতায় উঠে। তবে মেসি ও মাসচেরানোদের সামনে আরও উঁচুতে উঠার হাতছানি রয়েছে। এমন এক উচ্চতায় উঠতে পারেন মেসিরা যেখানে পদার্পণ করাটা স্বপ্নের ব্যাপার। বার্সিলোনার হয়ে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে ট্রেবল জেতা মেসি ও মাসচেরানোর সামনে এক মৌসুমে সাতটি শিরোপা জয়ের হাতছানি রয়েছে। ২০০৯ সালে গার্দিওলার অধীনে বার্সেলোনা ছয়টি শিরোপা জয় করলেও সেবার কোন মেজর টুর্নামেন্ট না থাকায় কাতালান ক্লাবের কোন খেলোয়াড় শিরোপার সংখ্যাটিকে বাড়াতে পারেননি। তবে এবার কোপা আমেরিকার কারণে আর্জেন্টিনার মেসি ও মাসচেরানোদের সামনে সেই সুযোগ রয়েছে। এমনকি সাতটি শিরোপা জিততে পারেন ব্রাজিলের দানি আলভেজও। নিষেধাজ্ঞার কারণে অবশ্য বার্সিলোনা সুপারস্টার নেইমার সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। এক বছরে সাতটি শিরোপা জেতার কথা যত সহজে বলা হচ্ছেÑ ব্যাপারটি কিন্তু তত সহজ নয়। এজন্য মেসিদের আগে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয় করতে হবে এবং তারপর আরও তিনটি শিরোপা জয় করতে হবে, তিনটি কঠিন বাধা অতিক্রম করতে হবে। চিলিতে চলমান কোপা আমেরিকার অন্যতম ফেবারিট আর্জেন্টিনা। তিনটি দেশেই রয়েছে বার্সিলোনার খেলোয়াড়। তাই বছরে সাতটি শিরোপা জয়ের সুযোগ রয়েছে ব্রাজিলের দানি আলভেস ও চিলির ক্লদিও ব্রাভোর সামনেও। এজন্য প্রথমে কোপা আমেরিকার পরীক্ষায় তাদের উত্তীর্ণ হতে হবে। কোপা মিশন সফল হওয়ার পর এক বছরে সাতটি শিরোপা জয় করার জন্য আরও তিনটি কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে মেসি-আলভেসদের। সেগুলো হলো ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। ইউরোপিয়ান সুপার কাপে আগামী ১১ আগস্ট উয়েফা সুপার কাপ বিজয়ী সেভিয়ার মুখোমুখি হবে মেসির বার্সিলোনা। একই মাসে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে লুইস এনরিকের বার্সিলোনা। আর ক্লাব বিশ্বকাপের অভিযান ফেবারিট হিসেবেই শুরু করবে কাতালানরা। ফলে আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা কাপের শিরোপা যদি মেসি জিততে পারেন তবে তার সামনে এক বছরে সাতটি শিরোপা জয়ের দুর্লভ সুযোগ চলে আসবে। সেই সুযোগের আগে মেসি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন, কতটা কঠিন আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করা।
×