ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভুয়া ঘটক!

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৮ জুন ২০১৫

ভুয়া ঘটক!

খাদ্যের ভেজালের মতো মানুষের মধ্যেও ভেজাল ঢোকার সূচনা কবে তা হয়তো নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে দিন দিন পেশাগত ক্ষেত্রে ভেজাল যে বিস্তার লাভ করছে তার নজির আমরা হরহামেশাই দেখতে পাচ্ছি। এ ভুয়া পেশাদারদের জন্য সরল-নিরীহ মানুষের ভোগান্তি যেন শেষ হওয়ার নয়। চিকিৎসক ভুয়া হলে রোগীর কী দশা হয় সেটা সহজেই অনুমেয়। ঝড়ে বক মরার মতো ভুয়া ডাক্তারের দুয়েকটা ওষুধে হয়তো কাজ হতে পারে, রোগের সাময়িক উপশম হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত রোগমুক্তি সম্ভব হয় না। লাইসেন্স নেই, এমনকি কাজ চালানোর সত্যিকারের শিক্ষাটাও নেই এমন অসংখ্য লোকের হাতে যান্ত্রিক যানের স্টিয়ারিং। দিব্যি বছরের পর বছর তারা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। যখনই তাদের কারও হাতে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষের প্রাণ যায় গ-ায় গ-ায়, তখনই খোঁজ পড়ে সেই চালকের ঠিকুজির। তখন হয়তো জানা যায় লোকটির ড্রাইভিং লাইসেন্সই নেই। অথচ এত এত মানুষের প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে নির্বিকার তিনি গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। ঘটকও যে ভুয়া হয়, হতে পারেÑ এই রঙ্গভরা বঙ্গদেশে আমরা কস্মিনকালেও কি প্রত্যক্ষ করেছি? পেশাগত দক্ষতা ভিন্ন জিনিস। একজন লোক দুটি নারী-পুরুষের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে দেয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছেন, কিন্তু সফল হতে পারছেন না। ওই ঘটককে আমরা হয়ত ব্যর্থই বলব। কিন্তু তার প্রচেষ্টাটা যে মহৎ তাতে কোন সংশয় নেই। আর ভুয়া ঘটকের বেলায়! জেনে-বুঝে হিসাব-নিকাশ করে ঘটক সাজা! দুটি নর-নারীকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করা নয়, তার অভিপ্রায় হচ্ছে ভুয়া পাত্রী সাজিয়ে পাত্রপক্ষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া। বলতে হয়, সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! নাটক-নভেল অনেক সময়ই সত্যিকারের জীবনের গল্পকে হার মানায়। আর কে না জানে জীবন থেকে উপাদান নিয়েই সাহিত্যিকরা লেখেন নাটক-নভেল। একটি চ্যানেলে এমন নাটক নিশ্চয়ই অনেকে দর্শন করেছেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে বনানীর কাকলী থেকে ভুয়া ম্যারেজ মিডিয়ার সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। এই সাতজনের ভেতর চারজন পুরুষ, তিনজন নারী। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছে রূপালী পর্দায় প্রদর্শন করার মতোই একটি গল্প। ওই সাতজনের তৎপরতা চলছিল সাত-আট বছর ধরে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে ম্যারেজ মিডিয়ার ভুয়া অফিস সাজানোর কাজটি করে আসছিলেন। তাদের চক্রের নারীদের অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পাত্রী সাজিয়ে বিয়ে দেয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত করছিলেন। নিয়মিতভাবে তারা পত্র-পত্রিকায় ‘পাত্র/পাত্রী চাই’ মর্মে বিজ্ঞাপনও দিয়ে আসছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা না পড়লে কত যুগ তারা ভুয়া ঘটক সেজে বিভিন্ন নিরীহ পাত্রপক্ষের অর্থনাশ করতেন, কে জানে। তবে এ কি কেবল অর্থক্ষয়? এর ফলে কত পাত্রের মন ভেঙ্গে গেছে কে তার খোঁজ রাখে। ভুয়া পাত্রীর কারণে ওই পাত্রের মনের পাত্রে যে ক্ষতটির সৃষ্টি হয়েছে সত্যিকারের পাত্রী আগামীতে কি তা পূরণ করতে পারবেন? তবে এই অপরাধের আড়ালে যে নারীত্বের অবমাননা চলছে তা বিলক্ষণ সত্য। একই সঙ্গে করুণ সত্য হলো মানুষের বিদেশমুখীনতা, এমনকি তা প্রবাসিনীকে বিয়ে করে হলেও। বিয়ে করে সংসার রচনার সুন্দর স্বাভাবিক আকাক্সক্ষাও যে ব্যক্তিস্বার্থের কাছে অসুন্দর হয়ে পড়ে সে কথাটিও জানিয়ে দেয় ভুয়া ঘটকের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাটি। মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর মানুষের অর্থ উপার্জনের এই হীন তৎপরতা অবশ্যই নিন্দনীয়। আশা করব বিয়ের পাত্র হতে গিয়ে এভাবে আগামীতে কেউ প্রতারিত হয়ে করুণার পাত্র হবেন না। তাহলেই ভুয়া ঘটকরা তাদের বাজার হারাবেন।
×