ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৮ জুন ২০১৫

৫ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা

সংসদ রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সিলেট জিন্দাবাজার শাখা থেকে ভুয়া এফডিআরের মাধ্যমে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক তিন কর্মকর্তা জড়িত বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার জাতীয় সংসদে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোঃ রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, বেসিক ব্যাংক জিন্দাবাজার শাখায় জড়িত তিন ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন- সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক পারবান চৌধুরী, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ মোস্তফা কামাল এবং সাবেক ব্যবস্থাপক সালেহ আহমেদ চৌধুরী। জালিয়াত চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় পরস্পরের যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা সুকৌশলে আত্মসাত করে, যা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় উদঘাটিত হয়েছে। তবে এই চক্রের প্রত্যেকে পৃথকভাবে কত টাকা নিয়েছেন তা ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় আলাদাভাবে উল্লেখ নেই। একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২ জুলাই অর্থঋণ মামলা করা হয়েছে। যার মামলা নং ১০/০৯। মামলার সর্বশেষ শুনানি হয়েছে ২০১৫ সালের ৩১ মে। আগামী ২৯ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অপর ফৌজদারি মামলা নং ৩৫/২০১০ এর সর্বশেষ শুনানি হয় ২০১৫ সালের ২৫ মে। আগামী ৫ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক হতে সংঘবদ্ধ জালিয়াতি চক্র ভুয়া এফডিআরের বিপরীতে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশে ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপী ঋণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ১১৬ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৫ হাজার ৭৯ কোটি, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৮৭ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২৪৬ কোটি এবং সোনালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। এক বছরে ৭১৯ কেজি সোনা জব্দ ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ৭১৯ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত সোনার মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃক ৫২টি মামলার বিপরীতে ১৬৬ কেজি এবং ঢাকা কাস্টম হাউজ কর্তৃক ৪৭টি মামলার বিপরীতে ১৬৬ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে। বিগত ৫ বছরে জব্দকৃত মোট ১ হাজার ৭৯৩ কেজি সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। ৬ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তি ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ৫৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বিপরীতে অনিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তির সংখ্যা ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৪টি, যার সংশ্লিষ্ট অর্থের মোট পরিমাণ ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। তিনি জানান, আপত্তিকৃত অডিট আপত্তিসমূহ জাতীয় সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করা হয়। কমিটি কর্তৃক অনিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তিসমূহ যাচাই করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে অর্থ আদায়ের জন্য অনুশাসন দেয়া হয়। প্রতিটি উপজেলায় কর কার্যালয় ॥ আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে জানান, আয়করের পরিধি ও আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধির স্বার্থে কর নেট বৃদ্ধি করতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় কর কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৫টি উপজেলায় কর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। শীঘ্রই অবশিষ্ট উপজেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে কর কার্যালয় স্থাপন করা হবে। ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার সহনীয় নয় ॥ ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার জনসাধারণের জন্য সহনীয় নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সরকারী দলের সদস্য এম আবদুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দেশের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা জনসাধারণের বেশিরভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং দেশের বেসরকারী সংস্থাগুলো প্রদত্ত ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এ সব জনগোষ্ঠীর জন্য উক্ত সুদের হার কোন কোন ক্ষেত্রে সহনীয় পর্যায়ে থাকে না। ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান।
×