ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিটুজি ও বায়রার মাধ্যমে এসব কর্মী যাবেন ॥ নিবন্ধিত কর্মীরাই শুধু যেতে পারবেন, বাড়তি খরচ লাগবে না

মালয়েশিয়া ৬ মাসের মধ্যেই ৫ লাখ কর্মী নেবে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৮ জুন ২০১৫

মালয়েশিয়া ৬ মাসের মধ্যেই ৫ লাখ কর্মী নেবে

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়া এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। কৃষি, নির্মাণ, ফার্নিচার কারখানাসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে তারা কর্মী নিয়োগ দেবে। চুক্তি অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ৫ লাখ কর্মী নেবে। জিটুজি ও জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে এই কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া সফরের পর এ তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রী বলেন, সরকার টু সরকার মতোই বেসরকারিভাবেও কম খরচেই কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। ডাটাবেজ পদ্ধতিতে নিবন্ধিত এসব কর্মী থেকেই কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। জনশক্তি রফতানিকারকরা নিবন্ধনের বাইরে থেকে কোন কর্মী পাঠাতে পারবেন না। নিবদ্ধিত কর্মীদের মধ্যে থেকে কর্মী নিয়োগ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা। এটা হলে কোন অসাধু আদম ব্যবসায়ীর মানুষের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিতে পারবে না। মালয়েশিয়া বর্তমানে কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি ঘোষণা দিয়েছে। কর্মী নিয়োগ করতে হলে বাংলাদেশ থেকে তাদের কর্মী নিতে হবে। ১৫ দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই ১৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, সততা রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীদের মধ্যে এমন গুণ থাকায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছরে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগ দেবে। গোটা দুনিয়াতেই বাংলাদেশী কর্মীদের সুনাম রয়েছে। ১৯৭৬ সালে ২ হাজার ৭২৫ কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি যাত্রা শুরু। বর্তমানে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার রয়েছে ১৬০ দেশে। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বার বার অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। সবশেষ যে বৈধতা দেয়া হয়েছিল সেখানে নানা কারণে বাদ যাওয়া চৌষট্টি হাজার কর্মীকেও বৈধতা দিয়েছে মালয়েশিয়া। নতুন করে যে সব কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছে তাদের বৈধতার বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করি এদেরও বৈধতা দেবে মালয়েশিয়া সরকার। সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ খাত জনশক্তি রফতানির বাজারে চরম মন্দা অবস্থার মধ্যে এটি একটি খুশির খবর হিসেবে দেখছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সাগরপথে আদম পাচারের ঘটনায় খাতটি এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছিল। এ বছর সরকার ৭ লাখের বেশি কর্মীকে বিদেশে চাকরি দিয়ে পাঠানোর টার্গেট নিয়েছে। সেই টার্গেট পুরণে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের ঘোষণাটি আশা জাগিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের মাধ্যমে এই টার্গেট পূরণ করার কথা জানিয়েছিল। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় ৭ লাখের বেশি কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব হবে। সূত্র মতে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিএমইটির কর্মকর্তা মিলে মোট সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি বিষয়েও আলোচনা করেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। তিন দিনের এই সফরে ইতিবাচক সাড়া আসায় মন্ত্রণালযের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে দ্রুতই কর্মী নিয়োগ হবে। সাগরপথে মানব পাচারের ঘটনায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের কোন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের মালয়েশিয়া সফর। জি টু জি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগে ধীরগতির বিষয়টি আলোচনার বড় ইস্যু হিসাবে ছিল। যে কারণে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছেন। যাতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পথে আর কাউকে যেতে না হয় তার জন্য স্থায়ী একটি সমাধানে চলে এসেছে দুই দেশ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করবেন। সৌদিতে যাতে পুরুষ কর্মী নিয়োগ করা হয় তার জন্য তিনি দেশটি সফর করবেন। বর্তমানে সৌদিতে নারী কর্মী ছাড়া পুরুষ কর্মী নেয়া হচ্ছে না। নারী কর্মীর চাহিদা থাকলেও দেশ থেকে নারী কর্মীরা সৌদি আরব যেতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। নানা কারণে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সৌদি সফর করে এসেছে। কয়েক দিন পরই সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে নারীকর্মী নিয়োগের জন্য নিজেরাই মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রথম দফায় ১০ হাজার নারী কর্মী নিয়োগের জন্য সৌদি প্রতিনিধিদল এখনও ঢাকায় অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত তারা ৩ হাজারের মতো নারী কর্মী পেয়েছেন। তাও এদের মধ্যে থেকে অনেকেই দেশটিতে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
×